নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে ৩১ ঘণ্টা পর যান চলাচল শুরু

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ৩২
Thumbnail image

বকেয়া বেতনের দাবিতে সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। তাতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু বকর সিদ্দিক এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকেরা। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি।’

আজ মঙ্গলবার সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল ত্রি-মোড় এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন জেনারেশন নেক্সট কারখানার শ্রমিকেরা। এর আগে গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চলে এই বিক্ষোভ। আজ বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে তারা সড়ক থেকে সরে যায়। পরে যান চলাচল শুরু হয়।

শ্রমিকদের অবরোধের মুখে কার্যত অচল হয়ে পড়ে সড়কটি। একই সঙ্গে ওই এলাকা থেকে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কটিতেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় সড়কটির উভয় পাশে।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ তিন মাস ধরে তাঁদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে না। বেতন না দিয়েই কিছুদিন আগে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। মালিকপক্ষ কয়েক দফা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলেও গত তিন মাসে কোনো বেতন-ভাতা পাননি তাঁরা। কারখানাটিতে স্টাফদেরও কয়েক মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা।

সাইফুল ইসলাম নামের কারখানার এক শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের কারখানা দেড় মাস ধরে বন্ধ। এর আগে আমাদের ছয়বার সময় দেওয়া হয়েছে। প্রথম বলা হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর দেবে, এরপর সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় বলেছে ২২ সেপ্টেম্বর দেবে, এরপরও দেয়নি। এরপর গেছি বিজিএমইএতে। সেখান থেকে বলা হয়, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কারখানা খোলা। ১ অক্টোবর বেতন দেওয়া হবে। আমরা বলেছি, বেতন দিয়ে কারখানা খুলতে। তারপরও বেতন পাইনি। তখন আমরা গেছি, শ্রম মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে তারা জানায়, মালিক ৮ অক্টোবর দেশে আসবে। তারপর মিটিং হলে বেতন কবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তারপর মালিক আর শ্রমিক পক্ষ সচিবালয়ে মিটিং করবে এমন সিদ্ধান্ত হলো। আমরা সচিবালয়ে গেছি, সেখানে ১৭ অক্টোবর ও ২০ অক্টোবরের সময় দিয়েছে বেতন পরিশোধের। সেখানে আশুলিয়ার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাও ছিলেন। মালিকপক্ষ বলল, ১৭ অক্টোবর না হলে ২০ অক্টোবর দুপুরে বেতন দেওয়া হবে। আমরা এরপরও সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। অবশেষে রাস্তা অবরোধ করি।’

বিক্ষোভ-২এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘তিন মাস ধরে বেতন পাই না। কোথাও কোনো চাকরি পাচ্ছি না। বাচ্চা আছে, স্কুলের বেতন দিতে পারি না। বাসা ভাড়া দিতে পারি না। বেতন না পেলে কীভাবে চলব? বাড়িওয়ালা বের করে দিচ্ছে। দোকানের টাকা দিতে পারি না। মালিক কোনো কথা বলছে না।’

শিল্প পুলিশ-১-এর (আশুলিয়া) পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘জেনারেশন নেক্সট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন যান চলাচল শুরু হয়েছে।’

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানা সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, কারখানার চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব শেঠি ভারতীয় নাগরিক। তিনি দেশে ফিরে গেছেন। যে কারণে বেতনের বিষয়টির সমাধান বিলম্বিত হচ্ছে।

কারখানাটিতে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের বেতন-ভাতা বাবদ ১৩-১৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত