Ajker Patrika

জংলি লতা সংগ্রহ করে চলে না বৃদ্ধার সংসার, থাকেন ছাপরাঘরে

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪: ৩৯
জংলি লতা সংগ্রহ করে চলে না বৃদ্ধার সংসার, থাকেন ছাপরাঘরে

দিনভর জংলিলতা (চাঁইলতা) সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন ষাটোর্ধ্ব নারী আয়তন নেছা। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে ও নাতিকে নিয়ে তিনি থাকেন একটি ছাপরাঘরে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও আয়তনের ঘরে জ্বলে না বিদ্যুতের আলো। স্বামীর রেখে যাওয়া তেমন জমিজমা নেই। তীব্র শীতের মধ্যে যুদ্ধ করে চলছে তাঁর জীবন। বয়স্ক ভাতা পেলেও তাতে মেটে না সংসার খরচ। এ কারণে আয়তনের জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা।

আয়তন নেছা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের জয়নাতলী গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে উজ্জ্বল (৩৫) ও ১০ বছর বয়সী নাতি সারোয়ারকে নিয়ে তাঁর সংসার।

গত মঙ্গলবার রাতে আয়তন নেছার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ একটি ছাপরাঘর। ভেতরে লতাপাতায় ভরা, মাটিতে একটি মাদুর বিছানো। ঘরের মেঝেতে হাঁড়িপাতিল এলোমেলো পড়ে রয়েছে। অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে ঘুমাতে হয় তাঁদের। বৃদ্ধা নারীর গায়ে ছেঁড়া একটি পাতলা কাপড়। গরম কাপড় তেমন না থাকায় শীতে কাঁপছেন আয়তন নেছা ও তাঁর ছেলে-নাতি।

ছাপরাঘরে কথা হয় আয়তন নেছার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্বামীর রেখে যাওয়া তেমন কোনো সহায়সম্বল নেই। আমি নিজেও তেমন কিছু বুঝি না। সোজাসাপটা মানুষ। স্বামী মারা যাওয়ার পরপরই বিভিন্ন কারণে একই গ্রামের বাসিন্দা বোনের ছেলে ভাগিনার জরাজীর্ণ ছাপরাঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছি। সারা দিন বনজঙ্গলে ঘুরেঘুরে চাঁইলতা সংগ্রহ করি। এরপর সেগুলো বিক্রি করে কোনোমতে সন্তান ও নাতির মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিই। কোনোবেলা খাবার দিতে পারি আবার কোনোবেলা পারি না।

আয়তন নেছা আরও বলেন, ‘সরকারি সুযোগ-সুবিধা বলতে বয়স্কভাতা পাই, তা খুবই সামান্য। শরীরে কাপড় দেখে বুঝতে পারছে না কেমন করে শীত কাটছে। শীতের কাপড় তো দূরের কথা। ঠিকমতো খেতে পারছি না। ঘরের মেঝেতে মাটিতে ঘুমাতে হয়। ঘরের দরজা-জানালা নেই, তাই শীত আরও বেশি।’

স্থানীয় বাসিন্দা জামির হোসাইন বলেন, ‘আমি প্রতিদিন এই বাড়ির পাশ দিয়ে টিউশনি করতে যাই। যাওয়া-আসার পথে তাঁদের কষ্ট চোখে দেখি। খুবই কষ্ট করে চলছে অসহায় হতদরিদ্র বৃদ্ধ নারীর জীবন। বনজঙ্গলের লতা কুড়িয়ে এনে বিক্রি করে চলছে এই নারীর জীবন। আমরা সমাজের বৃত্তবানদের আহ্বান জানাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে অসহায় নারীর বাকি জীবন ভালো কাটবে।’

এ বিষয়ে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, ‘অসহায় নারীর জন্য সরকারি সব ধরনের সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।’

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খোঁজ-খবর নিয়ে সরকারের পক্ষে উপজেলা প্রশাসন অসহায় নারীর পাশে দাঁড়াবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত