শরিফুল হাসান
ঢাকা: হঠাৎ করেই এলো ফোনটা। আমাদের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদের সেই কর্মকর্তার মুখটা বিষণ্ন হয়ে উঠল। ফোনটা শেষ করে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখে তিনি জানালেন, গুলশানে গোলাগুলি চলছে। পুলিশের একজন এএসপি, ওসিসহ অনেকেই আহত। এখুনি যেতে হবে।
সেদিন ছিল শুক্রবার। ১ জুলাই, ২০১৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস আলোকিত। আমরা কয়েকজন মানুষ রাতে আড্ডা দিচ্ছিলাম যেখানে পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারকসহ আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার পরপরই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে ফোনটা এল—গুলশানে ভয়াবহ কোনো হামলা হয়েছে। গোলাগুলি চলছে। আমাদের আড্ডা ভেঙে গেল। সবাই তখন দুশ্চিন্তায়। তবে আসলে ঠিক হয়েছে, কারওই জানা নেই।
আমি তখন প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আমিও ছুটলাম গুলশানের উদ্দেশ্যে। নিজের মোটরসাইকেলে। মাথায় তখন নানা প্রশ্ন ঘুরছে। গুলশানের কাছাকাছি গিয়ে দেখি অনেক পথ বন্ধ করে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। গুলশান-২ মোড়ে যাওয়ার পর দেখি পুলিশ, র্যাবসহ অনেকের গাড়ি ছুটছে। পিছু নিলাম। ততক্ষণে আরও কয়েকটা ফোনে জেনে গেছি, গুলশানের ৭৯ নম্বরের দিকের কোনো এক রেস্তোরাঁয় হামলা হয়েছে। বড় ঘটনা।
রাত সাড়ে দশটার দিকে ৭৯ নম্বর সড়কের কাছাকাছি পৌঁছালাম। ততক্ষণে রেস্তোরাঁটির চারপাশে পুলিশ আর র্যাবের শত শত সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ শুরু হবে। সাংবাদিকদের ভীড়। একটু পরপর লাইভ। আমার সঙ্গে ছিলেন প্রথম আলোয় তখন আমার সহকর্মী কামরুল হাসান, অন্তু ও জিয়া ইসলাম।
পুলিশ ও হোলি আর্টিজান থেকে পালিয়ে বের হওয়া কয়েকজনের সুবাদে আমরা ততক্ষণে জেনে গেছি, হোলি আর্টিজান বেকারি নামে একটা রেস্তোরাঁর ভেতরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ভেতের অনেক জিম্মি। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু হামলাকারী জঙ্গিদের কাছে অনেক অস্ত্র-বোমা আছে। তাদের হামলায় উদ্ধার অভিযানে আসা পুলিশ সদস্যরাও নিহত হয়েছেন। অনেকে আহত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি।
আমরা কয়েকজন তখন ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে গেলাম। কিন্তু তখন বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। খবর পেলাম, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার রবিউল করিম মারা গেছে। আচ্ছা কোন রবিউল?
জানলাম, এই রবিউলই প্রথম আলোর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের সহকর্মী শামসের আপন বড় ভাই। শামসকে ফোন দিলাম। ওর কান্নায় খুব বেশি কিছু বলতে পারলাম না। নিজেরও চোখ ভিজে গেল। একটু পর শুনলাম বনানী থানার ওসিও হামলায় নিহত হয়েছেন।
বাতাসে তখন নানা গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে। আটকে পড়াদের স্বজনেরা বারবার সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইছেন, ভেতরে কী হচ্ছে। আটকা পড়া অনেক পরিবারের সদস্যই সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে আসছেন তাঁদের স্বজনদের কাছে। আমরা দেখছি, সেনাবাহিনীসহ বিশেষায়িত নানা বাহিনীর সদস্যরা আসা–যাওয়া করছেন। কিন্তু কারও কাছে সঠিক কোনো উত্তর নেই। ঠিক কী ধরনের অভিযান হবে, সেটাও পরিষ্কার নয়। কিন্তু সবার চোখে–মুখে উদ্বেগ।
এর মধ্যে ৭৫ নম্বর সড়কের কাছাকাছি কোথাও দেখলাম ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক সিমিন হোসেনকে। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাঁকে অনেকবার দেখেছি। কিন্তু তাঁর এমন উদ্বিগ্ন চেহারা কখনো দেখিনি। কাছে গিয়ে জানলাম, সিমিন হোসেনের ছোট ছেলে ফারাজ আইয়াজ হোসেন কানাডা থেকে দেশে এসে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে এই বেকারিতে এসে ভেতের আটকা পড়েছেন। ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় মায়ের এই ছটফটানি।
রাত আড়াইটার দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের সূত্রে জানা গেল, জঙ্গি সংগঠন আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। সঙ্গে হত্যাযজ্ঞের কয়েকটি ছবি। সেগুলো দেখে পুরো শরীর কেঁপে উঠল। বাংলাদেশে কেন এমন ভয়াবহ হামলা, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লাগলাম।
রাত যত বাড়ল, পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আনাগোনা তত বাড়ল। আমি দেখলাম, তাঁরা সবাই রাস্তার উল্টোদিকে বিজেএমসির চেয়ারম্যানের বাংলোতে যাচ্ছেন। গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে আমিও বাথরুমে যাওয়ার নাম করে সেখানে ঢুকে গেলাম। গিয়ে দেখি, পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়া কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ভেতরের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছেন। শুনলাম সেখানে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। একটু পরই অভিযান চালানো হবে।
কিন্তু সেই অভিযান আর হয় না। পরে শুনলাম সিলেট থেকে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা আসবেন। তাঁরাই অভিযান চালাবেন। ভোর হয়ে যাবে। আর এই দেরি নিয়ে অনেক পরিবারই ক্ষুব্ধ। তাঁরা চাইছেন, তাঁদের সন্তানদের এখুনি উদ্ধার করে আনা হোক। অবশেষে শেষ রাতে সিলেট থেকে ঢাকায় এল বিশেষ সেই কমান্ডো বাহিনী। তখন হোলি আর্টিজানের চারপাশে প্রচণ্ড কড়াকড়ি। সাংবাদিকসহ সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সড়ক থেকে। বৃষ্টিও শুরু হলো। আমি কাছাকাছি কোনো একটা বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লাম। ততক্ষণে প্রচণ্ড গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গুলশান এলাকা।
সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা ছুটছেন। গুলি করছেন। এসে গেছে সাঁজোয়া যান। আমার কয়েক হাত সামনে থেকেই কমাণ্ডোদের গুলি চালাতে দেখলাম। আমি আমার মোবাইলের ভিডিও অন করলাম, যাতে ছবিগুলো রাখতে পারি। মনে হচ্ছিল হলিউডের কোনো সিনেমা দেখছি। বাস্তবের এই সিনেমার নাম ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’।
অপরাশেন শেষ হওয়ার পর সিমিন হোসেনের মতোই উদ্বিগ্ন দেখেছিলাম এক বাবাকে। পুলিশসহ যাকে দেখছেন, তাঁকেই ছবি দেখিয়ে বলেছেন, তাঁর ছেলের কোনো খোঁজ আছে কী না। ভদ্রলেকোর নাম জানলাম, শাহরিয়ার খান। ভোরে অভিযানের পর একটি ফোন আসার পর তিনি কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় পড়লেন মাটিতে। এর পর শুরু করলেন মোনাজাত। কাছে যেতেই জানালেন, ‘আমার ছেলে বেঁচে আছে।’ কিন্তু তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করবে কে?
খুব বেশিক্ষণ লাগেনি এই অভিযানে। আধা ঘণ্টারও কম বোধহয়। সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযান শেষ হওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। সেনা ও সোয়াট সদস্যরা ফিরে আসতে থাকেন। এর পর আসে অ্যাম্বুলেন্স। বের করা হতে থাকে লাশ। সারাদিন পর দুপুরের দিকে ফিরে আসি। রাত থেকে না খাওয়া। সারারাত জেগে ছিলাম। ক্লান্ত। ঘুমও দরকার।
ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মনে হয়, হোলি আর্টিজান হামলা আমাদের আসলেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনার ছয়দিন পরই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেখানেও দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। গুলিবিনিময়কালে একজন সাধারণ নারী ও একজন জঙ্গি নিহত হয়। বাংলাদেশের সেই সময়টা ছিল আসলেই আতঙ্কের। দুশ্চিন্তার। সেই আতঙ্ক জঙ্গিবাদ নিয়ে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার চেষ্টায় সেই উদ্বেগ কিছুটা কমেছে।
ওই সময়ের হামলাকারীদের একজনের বাবার একটা কথা আজও মেনে পড়ে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আর কোনো বাবার যেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। সব বাবা-মার কাছে আহ্বান, সন্তানদের খোঁজ নিন। কোথায় যায়, কী করে খোঁজ নিন।’
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
ঢাকা: হঠাৎ করেই এলো ফোনটা। আমাদের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদের সেই কর্মকর্তার মুখটা বিষণ্ন হয়ে উঠল। ফোনটা শেষ করে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখে তিনি জানালেন, গুলশানে গোলাগুলি চলছে। পুলিশের একজন এএসপি, ওসিসহ অনেকেই আহত। এখুনি যেতে হবে।
সেদিন ছিল শুক্রবার। ১ জুলাই, ২০১৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস আলোকিত। আমরা কয়েকজন মানুষ রাতে আড্ডা দিচ্ছিলাম যেখানে পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারকসহ আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার পরপরই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে ফোনটা এল—গুলশানে ভয়াবহ কোনো হামলা হয়েছে। গোলাগুলি চলছে। আমাদের আড্ডা ভেঙে গেল। সবাই তখন দুশ্চিন্তায়। তবে আসলে ঠিক হয়েছে, কারওই জানা নেই।
আমি তখন প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আমিও ছুটলাম গুলশানের উদ্দেশ্যে। নিজের মোটরসাইকেলে। মাথায় তখন নানা প্রশ্ন ঘুরছে। গুলশানের কাছাকাছি গিয়ে দেখি অনেক পথ বন্ধ করে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। গুলশান-২ মোড়ে যাওয়ার পর দেখি পুলিশ, র্যাবসহ অনেকের গাড়ি ছুটছে। পিছু নিলাম। ততক্ষণে আরও কয়েকটা ফোনে জেনে গেছি, গুলশানের ৭৯ নম্বরের দিকের কোনো এক রেস্তোরাঁয় হামলা হয়েছে। বড় ঘটনা।
রাত সাড়ে দশটার দিকে ৭৯ নম্বর সড়কের কাছাকাছি পৌঁছালাম। ততক্ষণে রেস্তোরাঁটির চারপাশে পুলিশ আর র্যাবের শত শত সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ শুরু হবে। সাংবাদিকদের ভীড়। একটু পরপর লাইভ। আমার সঙ্গে ছিলেন প্রথম আলোয় তখন আমার সহকর্মী কামরুল হাসান, অন্তু ও জিয়া ইসলাম।
পুলিশ ও হোলি আর্টিজান থেকে পালিয়ে বের হওয়া কয়েকজনের সুবাদে আমরা ততক্ষণে জেনে গেছি, হোলি আর্টিজান বেকারি নামে একটা রেস্তোরাঁর ভেতরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ভেতের অনেক জিম্মি। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু হামলাকারী জঙ্গিদের কাছে অনেক অস্ত্র-বোমা আছে। তাদের হামলায় উদ্ধার অভিযানে আসা পুলিশ সদস্যরাও নিহত হয়েছেন। অনেকে আহত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি।
আমরা কয়েকজন তখন ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে গেলাম। কিন্তু তখন বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। খবর পেলাম, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার রবিউল করিম মারা গেছে। আচ্ছা কোন রবিউল?
জানলাম, এই রবিউলই প্রথম আলোর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের সহকর্মী শামসের আপন বড় ভাই। শামসকে ফোন দিলাম। ওর কান্নায় খুব বেশি কিছু বলতে পারলাম না। নিজেরও চোখ ভিজে গেল। একটু পর শুনলাম বনানী থানার ওসিও হামলায় নিহত হয়েছেন।
বাতাসে তখন নানা গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে। আটকে পড়াদের স্বজনেরা বারবার সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইছেন, ভেতরে কী হচ্ছে। আটকা পড়া অনেক পরিবারের সদস্যই সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে আসছেন তাঁদের স্বজনদের কাছে। আমরা দেখছি, সেনাবাহিনীসহ বিশেষায়িত নানা বাহিনীর সদস্যরা আসা–যাওয়া করছেন। কিন্তু কারও কাছে সঠিক কোনো উত্তর নেই। ঠিক কী ধরনের অভিযান হবে, সেটাও পরিষ্কার নয়। কিন্তু সবার চোখে–মুখে উদ্বেগ।
এর মধ্যে ৭৫ নম্বর সড়কের কাছাকাছি কোথাও দেখলাম ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক সিমিন হোসেনকে। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাঁকে অনেকবার দেখেছি। কিন্তু তাঁর এমন উদ্বিগ্ন চেহারা কখনো দেখিনি। কাছে গিয়ে জানলাম, সিমিন হোসেনের ছোট ছেলে ফারাজ আইয়াজ হোসেন কানাডা থেকে দেশে এসে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে এই বেকারিতে এসে ভেতের আটকা পড়েছেন। ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় মায়ের এই ছটফটানি।
রাত আড়াইটার দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের সূত্রে জানা গেল, জঙ্গি সংগঠন আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। সঙ্গে হত্যাযজ্ঞের কয়েকটি ছবি। সেগুলো দেখে পুরো শরীর কেঁপে উঠল। বাংলাদেশে কেন এমন ভয়াবহ হামলা, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লাগলাম।
রাত যত বাড়ল, পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আনাগোনা তত বাড়ল। আমি দেখলাম, তাঁরা সবাই রাস্তার উল্টোদিকে বিজেএমসির চেয়ারম্যানের বাংলোতে যাচ্ছেন। গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে আমিও বাথরুমে যাওয়ার নাম করে সেখানে ঢুকে গেলাম। গিয়ে দেখি, পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়া কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ভেতরের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছেন। শুনলাম সেখানে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। একটু পরই অভিযান চালানো হবে।
কিন্তু সেই অভিযান আর হয় না। পরে শুনলাম সিলেট থেকে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা আসবেন। তাঁরাই অভিযান চালাবেন। ভোর হয়ে যাবে। আর এই দেরি নিয়ে অনেক পরিবারই ক্ষুব্ধ। তাঁরা চাইছেন, তাঁদের সন্তানদের এখুনি উদ্ধার করে আনা হোক। অবশেষে শেষ রাতে সিলেট থেকে ঢাকায় এল বিশেষ সেই কমান্ডো বাহিনী। তখন হোলি আর্টিজানের চারপাশে প্রচণ্ড কড়াকড়ি। সাংবাদিকসহ সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সড়ক থেকে। বৃষ্টিও শুরু হলো। আমি কাছাকাছি কোনো একটা বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লাম। ততক্ষণে প্রচণ্ড গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গুলশান এলাকা।
সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা ছুটছেন। গুলি করছেন। এসে গেছে সাঁজোয়া যান। আমার কয়েক হাত সামনে থেকেই কমাণ্ডোদের গুলি চালাতে দেখলাম। আমি আমার মোবাইলের ভিডিও অন করলাম, যাতে ছবিগুলো রাখতে পারি। মনে হচ্ছিল হলিউডের কোনো সিনেমা দেখছি। বাস্তবের এই সিনেমার নাম ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’।
অপরাশেন শেষ হওয়ার পর সিমিন হোসেনের মতোই উদ্বিগ্ন দেখেছিলাম এক বাবাকে। পুলিশসহ যাকে দেখছেন, তাঁকেই ছবি দেখিয়ে বলেছেন, তাঁর ছেলের কোনো খোঁজ আছে কী না। ভদ্রলেকোর নাম জানলাম, শাহরিয়ার খান। ভোরে অভিযানের পর একটি ফোন আসার পর তিনি কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় পড়লেন মাটিতে। এর পর শুরু করলেন মোনাজাত। কাছে যেতেই জানালেন, ‘আমার ছেলে বেঁচে আছে।’ কিন্তু তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করবে কে?
খুব বেশিক্ষণ লাগেনি এই অভিযানে। আধা ঘণ্টারও কম বোধহয়। সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযান শেষ হওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। সেনা ও সোয়াট সদস্যরা ফিরে আসতে থাকেন। এর পর আসে অ্যাম্বুলেন্স। বের করা হতে থাকে লাশ। সারাদিন পর দুপুরের দিকে ফিরে আসি। রাত থেকে না খাওয়া। সারারাত জেগে ছিলাম। ক্লান্ত। ঘুমও দরকার।
ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মনে হয়, হোলি আর্টিজান হামলা আমাদের আসলেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনার ছয়দিন পরই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেখানেও দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। গুলিবিনিময়কালে একজন সাধারণ নারী ও একজন জঙ্গি নিহত হয়। বাংলাদেশের সেই সময়টা ছিল আসলেই আতঙ্কের। দুশ্চিন্তার। সেই আতঙ্ক জঙ্গিবাদ নিয়ে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার চেষ্টায় সেই উদ্বেগ কিছুটা কমেছে।
ওই সময়ের হামলাকারীদের একজনের বাবার একটা কথা আজও মেনে পড়ে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আর কোনো বাবার যেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। সব বাবা-মার কাছে আহ্বান, সন্তানদের খোঁজ নিন। কোথায় যায়, কী করে খোঁজ নিন।’
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
প্রথমবারের মতো আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের ভোটে মহানগর বিএনপির নেতা নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক।
৩ ঘণ্টা আগেবইমেলার বাংলা একাডেমি অংশে কাব্যিক অডিওবুকের স্টল। নামেই বোঝা যায়, এখানে কাগজের কোনো সম্পর্ক নেই। স্টলে নেই কোনো বইয়ের তাক। সঙ্গে একটি মোবাইল থাকলেই হলো।
৪ ঘণ্টা আগেহবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নির্দেশ অমান্য করে প্রতি সপ্তাহেই বসছে নবীগঞ্জের অবৈধ জনতার বাজার পশুর হাট। গত শনিবারও উপজেলার গজনাইপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষে বসেছে এই হাট। ডিসির নির্দেশ অমান্য করে এর আগেও তিনবার এ হাট বসানো হয়।
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী মুনতাসির আল জেমি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেল থেকে পলায়নের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
৪ ঘণ্টা আগে