Ajker Patrika

মামলার ভয় দেখিয়ে ইউপি সদস্যের কাছ থেকে এসি, টাকা নেন ওসি

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ৪২
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ওসি শফিউদ্দিন খান। ছবি: সংগৃহীত
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ওসি শফিউদ্দিন খান। ছবি: সংগৃহীত

মামলার ভয় দেখিয়ে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের কাছ থেকে নগদ টাকা ও এসি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। এসি কেনাসংক্রান্ত একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কল রেকর্ডের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওসি। তাঁর দাবি, কেউ ষড়যন্ত্র করে এসব করেছে।

আড়াই মিনিটের ওই কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, কাশিয়ানী থানার ওসি শফিউদ্দিন কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নের বরাশুর এলাকার ইউপি সদস্য জাকির হোসেনের কাছ থেকে শার্প অথবা এনার্জি প্যাক ব্র্যান্ডের ২ টনের একটি এসি কিনে দেওয়ার কথা বলেন। গোপালগঞ্জে না পাওয়া গেলে ঢাকা থেকে কিনে এনে দিতে বলেন ওসি।

এলজি-বাটার ফ্লাই কোম্পানির গোপালগঞ্জ শোরুমের মেমো থেকে জানা যায়, গত ২৩ মার্চ জাকির নিজ নামে ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়ে কিস্তির মাধ্যমে এলজি ব্র্যান্ডের একটি এসি কেনেন।

জাকির বলেন, ‘কাশিয়ানী থানায় ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে অসংখ্যবার শফিউদ্দিন খান আমাকে তাঁর অফিসারসহ বিভিন্ন মানুষ দিয়ে এমনকি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মামলার হুমকি দিয়েছেন। কাশিয়ানী থানার এসআই আমিনুল ইসলাম আমাকে বলেন—সামনে বিপদ আছে আপনার। আমি তাঁকে বলি, আমার অপরাধ কী? আমার নামে তো কোনো মামলা নেই, কোনো অভিযোগ নেই; তাহলে বিপদ কেন? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ করেছেন, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন—এ জন্য সমস্যা হবে। পরে এসআই আমিনুল আমাকে ওসির সঙ্গে দেখা করতে বলেন আর কিছু টাকা দিয়ে আসতে বলেন, যাতে আমার কোনো সমস্যা না হয় এবং কোনো মামলায় আমাকে জড়ানো না হয়।’

জাকির আরও বলেন, ‘এসআই আমিনুলের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা ওসিকে দিই। এরপর থেকে ওসি মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে আমাকে কল করে বলেন—“সমস্যার ভেতরে আছি, কিছু টাকা লাগবে। ” এভাবে আমার কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমার ছোট ছোট ৪টা বাচ্চা আছে, এ জন্য মামলার ভয়ে ওসিকে টাকা দিয়েছি। শুধু টাকা নয়, মাঝে মাঝে তাঁকে বড় মাছ কিনে দেওয়া লাগছে। গত ১৬ মার্চ আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়াতে অবস্থিত তায়েব হোটেলে দেখা করতে বলেন। সেখানে দেখা হলে একটা ২ টনের এসি কিনে দিতে বলেন। আমি তখন বলেছিলাম, আমার কাছে টাকা নেই, সমস্যার ভেতরে আছি, সংসার চালাতে পারতেছি না। আর্থিক কষ্টে ভুগতেছি। তখন ওসি আমাকে বলেন, “আমি আপনাকে কত সাহায্য করি, আপনার নামে অনেকে অনেক কথা বলেছে; সেগুলো সেভ করে রাখা আছে। যা হোক চেষ্টা করে কিনে দেন। ” ভয়ে আমি এসি কিনে দেওয়ার কথা স্বীকার করি।’

ইউপি সদস্য জাকির বলেন, ‘আমাকে ২২ মার্চের ভেতরে এসি দেওয়ার জন্য বলেন। আমার সামর্থ্য না থাকলেও জীবনের ভয়ে দিতে রাজি হই। শুধু আমি নই, কাশিয়ানীর বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে ৬০ লাখের বেশি টাকা নিয়েছেন তিনি। ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। এভাবে ভয় দেখালে বাড়িঘর বিক্রি করে ওসিকে টাকা দিতে হবে। পরে ২৩ মার্চ ওসিকে কিস্তির মাধ্যমে একটি এসি কিনে দিই।’

অভিযোগের বিষয়ে ওসি শফিউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ জন্য তাদের লোকজন প্রযুক্তির ব্যবহার করে মিথ্যা কল রেকর্ড বানিয়েছে। কল রেকর্ড তার নয় এবং ওই ইউপি সদস্যের সঙ্গে সামনে একবার দেখা হলেও মোবাইলে কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত