সারা দেশের হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের শাটডাউন

ঢামেক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪: ০৩
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭: ০৭

চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীকে গ্রেপ্তার ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ চার দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি না মানা পর্যন্ত সারা দেশের হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের শাটডাউন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 

আজ রোববার দুপুর ২টার দিকে চার দফা দাবি ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. আব্দুল আহাদ। 

চার দফা দাবি হলো—১. চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীকে গ্রেপ্তার ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২. সব হাসপাতালে সিকিউরিটি ২৪ ঘণ্টা থাকতে হবে। ৩. সাস্থ্য অধিদপ্তরের অধিনে স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ চাই এবং ৪. স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। 

ডা. আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দাবি না মানা পর্যন্ত সারা দেশের সব সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, জেলা-উপজেলা হাসপাতাল, প্রাইভেট চেম্বার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। জরুরি বিভাগও বন্ধ থাকবে। ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাও বন্ধ থাকবে। ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামে দাবি পূরণ না হওয়ায় এই কঠোর কর্মসূচি। এছাড়া আগামীকাল সোমবার দুপুর ২টায় মানববন্ধন হবে।’ 

এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) চিকিৎসকদের মারধরকারীদের বিচারের আওতায় আনা ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবি মানার আগ পর্যন্ত সারা দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল শাটডাউনের ডাক দেন ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. আব্দুল আহাদ। 
 
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের মারধরকারীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবি এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তার আগ পর্যন্ত সারা দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল শাটডাউনের ঘোষণা করা হয়েছে।’  

ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের এই চিকিৎসক বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যে দুবার ইনসিডেন্ট ঘটেছে, সেখানে আমাদের চিকিৎসকেরা জীবন বাজি রেখে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়েছে। এমনকি নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়েছে, খাবার দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটা পার্ট।’  

ডা. আব্দুল আহাদ বলেন, ‘গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, নিউরো সার্জারি অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগীর লোক এক ডাক্তারকে বের করে এনে মারধর করে। শুধু তাই নয়, মারতে মারতে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার দূরে পরিচালকের রুমে নিয়ে যায়। এ বিষয় নিয়ে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করেছি। বৈঠকে দুটি বিষয় সিদ্ধান্ত হয়েছে—একটি হলো অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে, দ্বিতীয়টি হলো আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা যারা জরুরি বিভাগে থাকি, তাঁদের নিরাপত্তার জন্য আর্মি, পুলিশসহ অন্যান্য ফোর্স এখানে থাকবে। কিন্তু আমাদের প্রশাসন সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’  

‘গত রাতে আরও দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। বাইরে এক গ্রুপ এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করে। সেই গ্রুপ চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেলে আসে। তখন বিপক্ষ গ্রুপ ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসা নিতে আসা গ্রুপকে আবার মারধর করে। তাহলে যেখানে রোগীও নিরাপদ না, সেখানে চিকিৎসকেরা কেমন করে নিরাপদ থাকবে? এর কিছুক্ষণ পর জরুরি বিভাগের মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারে (ওসেক) এক যুবক মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানে দায়িত্বে থাকা ডাক্তার, নার্সদের ওপর হামলা করে। ইমার্জেন্সি ভাঙচুর করে। আমরা দেখতে পাই, চিকিৎসক ও রোগী কেউ নিরাপদ না।’  

ডা. আব্দুল আহাদ আরও বলেন, ‘পরিচালকের অনুরোধে রাত ১১টার পরে কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাই। সারা রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করি। কিন্তু কোনো সিকিউরিটি আমরা দেখতে পাইনি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে নিজের নিরাপত্তার জন্য কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। সারা বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতাল বন্ধ থাকবে। দুপুর ২টায় আমাদের দাবি-দাওয়াসহ সবকিছু ব্রিফ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত