মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ, কম খরচে লাভবান কৃষক

ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ০৬
মালচিং পদ্ধতিতে বেগুন চারা রোপণ করছেন এক কৃষক। গত বুধবার কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পোমকাড়া এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাড়ছে। বিষমুক্ত এই পদ্ধতিতে ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া চাষাবাদে খরচ কম লাগছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মালচিং পদ্ধতি হলো জমির বেড বিশেষভাবে তৈরি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা। এটি ব্যবহারের ফলে মাটির রসের বাষ্পায়ন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে মাটির উপরিতল থেকে যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়, তা পলিথিনে বাধা পেয়ে ঘনীভূত হয়। পরে বিন্দু বিন্দু জলকণায় পরিণত হয়ে আবার মাটিতে পড়ে। এতে জমিতে দুটি সেচ পর্বের ব্যবধান বাড়ানো সম্ভব হয়। ফলে সেচ কম লাগে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।

উপজেলার পোমকাড়া গ্রামের কৃষক জহিরুল আলম আবুল বাশার মুন্সি মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি বলেন, মালচিং পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সুফল পেয়েছি। চারা রোপণের পর থেকে শুধুমাত্র দেখভাল করা ছাড়া আর তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। এই পদ্ধতিতে চাষ করে গত বছর লাভবান হয়েছি। এবার এই পদ্ধতিতে লম্বা বেগুন, টমেটো, করলা ও শিম চাষ করছি। আশা করি এবারও ভালো ফলন পাব।

পোমকাড়া গ্রামের কৃষাণী বিউটি আক্তার বলেন, এবার আমি মালচিং পদ্ধতিতে ১০ শতক জমিতে টমেটো, ২৫ শতক জমিতে লম্বা বেগুন, ১০ শতক জমিতে শসা ও করলা, ৪ শতক জমিতে ফুলকপি এবং ১ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। বিষমুক্ত মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখতে অনেকেই আমার জমিতে আসেন। এ পদ্ধতিতে প্রথম দিকে একটু বেশি খরচ হলেও, পরে আর তেমন খরচ নেই।

মালচিং পদ্ধতিতে বেগুন চারা রোপণ করছেন এক কৃষক। গত বুধবার কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পোমকাড়া এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মালচিং পদ্ধতিতে বেগুন চারা রোপণ করছেন এক কৃষক। গত বুধবার কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পোমকাড়া এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রথমবারের মতো মালচিং পদ্ধতিতে ৪০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছেন উপজেলার বালিনা গ্রামের কৃষক মহিউদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, আশা করছি রোগ বালাই ও পোকার আক্রমণ তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। আগাছা কম হওয়ায় তাতে শ্রম ও খরচ বাচে। সার কম দেওয়া লাগে। এ ছাড়া ফলন হয় সাধারণ চাষের চেয়ে বেশি। মালচিং একটি আধুনিক ও সময়োপযোগী চাষ পদ্ধতি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা আক্তার আখি জানান, মালচিং পদ্ধতিতে চাষের সবচেয়ে বড় ভালো দিক হলো জমি আবাদে পানি কম লাগে। এতে কৃষকের সার, সেচ কম ও খরচ কমে লাগে। এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে গ্রামের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের আর্থিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ জন্য উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, মালচিং যুগান্তকারী ও কৃষি কাজের অন্যতম আধুনিক পদ্ধতি। মালচিং অত্যন্ত সহজলভ্য, লাভজনক ও বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি অন্যতম পদ্ধতি। এর মাধ্যমে সেচ খরচ কমবে, নিড়ানি খরচ কমবে, দমন হবে কীটপতঙ্গের উৎপাত। উৎপাদন খরচ কমলে কৃষকেরাই লাভবান হবেন। আমরা এ পদ্ধতি কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত