অমানবিক নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী, দেখতে হাসপাতালে মানবাধিকার চেয়ারম্যান

ঢামেক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৬: ৩৯
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৭: ০৭

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় এক গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই গৃহকর্মীকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান মানবাধিকার চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে যান তিনি। 

এ সময় ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকেদের বলেন, ‘অনেক পরিবার দরিদ্রতার জন্য অন্যের বাসায় কাজ করে। তাই বলে নির্মমতার শিকার হবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই মেয়েটিকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মেরে তার চারটি দাঁত ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার শরীরে সকল ধরনের আঘাত রয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘একটা সুস্থ মানুষ এ ধরনের নির্যাতন করতে পারে না। আমাদের দেশে পাঁচ লাখের মতো মেয়েশিশু শ্রমিক আছে। যারা বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পরিবারে আছে। এই মেয়েটা পাঁচ বছর ধরে একটা পরিবারে কাজ করে। সাড়ে চার বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কেউ জানেও না। এ রকম আরও কত হচ্ছে অনেকেই তা জানি না।’ 

ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এই যে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন দিনের পর দিন এই দেশে হচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, এটা বন্ধ করা উচিত। আমরা বারবার বলে আসছি যে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করা প্রয়োজন। আমরা সর্বশেষ আইনের একটা খসড়া প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে সাবমিট করেছি। আমরা বারবার বলছি শিগগিরই প্রস্তুত করে আইনটি পাস  করা দরকার।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ আইনে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিষয়টিকে দেখা হয় না। যে ঘটনা সমসাময়িকভাবে ঘটছে, তা কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যারা এ রকম নিষ্ঠুর আচরণের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো রকমের নমনীয়তার অবকাশ নাই।’ 

কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এই মেয়েটিকে বসুন্ধরার যে বাসায় নির্যাতন করা হয়েছে, দিনাত জাহান সে একাই বাসায় থাকত। তবে তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেই কাজে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, তার বাবা-মা রেহাই পাওয়ার কথা নয়। দিনাত জাহান অ্যাডাল্ট, তবুও তার বাবা-মা এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধেও যাতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এমন একটা উদাহরণ সৃষ্টি করা যায়, যেন এই সমাজে বিভিন্ন জায়গায় নিষ্ঠুর কারখানা হচ্ছে, এটা যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করে এই গৃহকর্মী নির্যাতন দমন আইনকে বাস্তবায়ন করতে হবে।’নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী। ছবি: আজকের পত্রিকাঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে আমাদের হাসপাতাল থেকে যতটুকু সাপোর্ট দরকার, তার সবটুকুই দেওয়া হবে। বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকেরা তাকে দেখছেন। এ ছাড়া অন্য চিকিৎসকেরাও তাকে দেখবে।’ 

ভুক্তভোগী গৃহকর্মীর বিষয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া ক্ষত আছে। মেটাল জাতীয় কোনো জিনিস দিয়ে বিভিন্ন সময় তাকে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। যখন তার চিকিৎসার দরকার ছিল, তা পায়নি। নিজে নিজে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যার ফলে ইনফেকশন হয়ে গেছে। মেয়েটির মুখ থেকে শুরু করে হাত, পা, বুক, পিঠসহ বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একদিনে করা হয় নাই। বিভিন্ন সময় এই কাজ করা হয়েছে। যেটা এখন বিকৃত হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গা শুকিয়ে গেছে, কিছু জায়গায় শুকায়নি। তার চারটা দাঁত পড়ে গেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে মেয়েটি মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পরেছে। তার শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসাও দরকার। মেয়েটির যে ক্ষত হয়েছে, তার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার। তার শরীরে রক্ত কম আছে। আজকের মধ্যেই রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়েটি সর্বনিম্ন সাত থেকে আটটি অস্ত্রোপচার লাগবে। তিন থেকে চার মাস হাসপাতালে থাকতে হবে।’ 

এর আগে গতকাল শনিবার রাতে বসুন্ধরার আই–ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ৪৬৬ নম্বর বাসা থেকে কল্পনা (১৩) নামে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে ভাটারা থানা-পুলিশ। পরে রাত সোয়া ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। 

এ বিষয়ে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গত রাতে খবর পেয়ে বসুন্ধরার বাসা থেকে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সারা শরীরে পোড়া ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। গত রাতেই গৃহকর্মীর মা আফিয়া বেগম বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। মামলায় গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান আদরকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়। আজ (রোববার) তাঁকে আদলতে পাঠানো হয়েছে।’ 

গৃহকর্মী কল্পনার মা আফিয়া বেগম বলেন, ‘ওই বাসায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করে আসছে কল্পনা। শুরুর দিক থেকেই নির্যাতন শুরু হয় তার ওপর। কাজের ভুল ধরে তাকে বিভিন্ন সময় চুল সোজা করার মেশিন দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। রড দিয়ে মারধর করত।’ 

তিনি আরও জানান, এই পাঁচ বছর পরিবারের সঙ্গে তার দেখা করতে দেওয়া হয়নি। শুধু বিকাশের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাত। গতকাল রাতে পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে মেয়েকে দেখতে পেয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত