সালথায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টায় ইউপি সদস্য বরখাস্ত

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ২২

ফরিদপুরের সালথায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় তাপস কুমার হোড় নামে এক ইউপি সদস্যকে বহিষ্কার করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সে উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তিনি ফুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত নির্মল কান্তি হোড়ের ছেলে। 

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে অর্থের বিনিময় নির্বাচন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় পাঁচজন রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার জন্য আবেদন করার ঘটনাটি জানাজানি হয়। এদের মধ্যে ইউপি সদস্য তাপস নাগরিক সনদপত্র শনাক্তকারী হিসেবে সিল ও স্বাক্ষর করেন। তবে এই ঘটনার নেপথ্যে থাকা নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার পর গত ২৫শে অক্টোবর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং কেন চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হবে না জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর ওই ইউপি সদস্যের দাখিলকৃত কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। 

সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ শে জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদারের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে চূড়ান্ত বহিষ্কারের বিষয় জানানো হয়। 

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিচুর রহমান বালী বলেন, ‘সালথা নির্বাচন অফিসে ভোটার হওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের আবেদনের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে করে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের আবেদনপত্রে শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড়। পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’ 

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার আবেদনে সহযোগিতায় থাকা অন্যদের বিষয় ইউএনও বলেন, ‘এ ঘটনায় অন্য কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদি কোনো তথ্য থাকে দেন-আমরা ব্যবস্থা নেব।’

২০২৩ সালের গত ১০ সেপ্টেম্বর অভিভাবকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বাংলাদেশিয় জন্ম সনদ ও নাগরিক সনদ দিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য সালথা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন সালথার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের খোরশেদ আলীর মেয়ে দিলদারা বেগম, মনিরুল ইসলামের ছেলে নূর মোস্তফা, খোকন মিয়ার ছেলে হাফিজুর রহমান, কালা মিয়ার মেয়ে বুশরা বেগম, আব্দুল মানিকের ছেলে নূর বশার। তবে এসব নামে ফুলবাড়িয়া গ্রামের কারও হদিস পাওয়া যায়নি। 

আবেদনে তারা যে জন্ম সনদগুলো জমা দেন, সেগুলি সব কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা। তাদের নামে গত ১০ সেপ্টেম্বর বল্লভদী ইউনিয়ন থেকে নাগরিক সনদ দেওয়া হয়। এতে স্বাক্ষর করেন ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুজ্জামান শাহীন। জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনপত্রে শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন বল্লভদী ইউপির আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাপস কুমার হোড়। 

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শামসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করে বলেন, ‘গত ৭ এপ্রিল তার ইউনিয়ন থেকে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে কোনো জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়নি। এগুলো ভুয়া।’ 

ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘তবে ওই নাগরিক সনদের স্বাক্ষর আমার না। এটি জাল স্বাক্ষর। অর্থের বিনিময় নাগরিক সনদ দেওয়ার কথাটি ভুয়া।’

অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ, ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন, ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড় ও করিম টেলিকমের স্বত্বাধিকারী করিম বাওয়ালীর সহায়তায় পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতি নেন। কিন্তু চুক্তি অনুয়ায়ী রোহিঙ্গারা অর্থ না দেওয়ায় ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। পরে ইউএনওর নির্দেশে বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই পাঁচটি আবেদন বাতিল করে দেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত