মনিরামপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুখোমুখি বিএনপির দুই পক্ষ, এলাকায় উত্তেজনা

­যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ৪৩
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৩: ১৯
মনিরামপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গতকাল ভাঙচুর চালানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের মনিরামপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ দুই পক্ষের পাঁচজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি ছোড়া হয় বলে জানা গেছে। দুই দিন ধরে উপজেলা পৌর শহরে এসব ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ ও বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ ইকবাল ও সাবেক সভাপতি মো. মুছার অনুসারীরা। দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় পৌর শহরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য এক পক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করছে।

বিএনপি, স্থানীয় ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দল ক্ষমতায় না থাকলেও কয়েক বছর ধরে উপজেলা বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ ইকবাল ও অন্য পক্ষের সাবেক সভাপতি মো. মুছা। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, প্রতিশোধ পরায়ণতা, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়েই মূলত এই গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব। এ বিরোধ পৌঁছেছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত।

সেই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাতে পৌর শহরের রাজগঞ্জ মোড়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। একটি ওয়াজ মাহফিলে ১০–১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এটিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও আসবাব বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাসুদ রানার দোকান গতকাল ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাসুদ রানার দোকান গতকাল ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

একই পক্ষের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাসুদ রানার দোকান ভাঙচুর ও সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। বিষয়টি নিয়ে মুছা পক্ষের অনুসারীরা উপজেলা বাজারে শোডাউন ও অবস্থান নেয়।

তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার পর বাজারে অবস্থান ও শোডাউন দেয় ইকবাল গ্রুপ। এ সময় মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময় বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ইকবাল গ্রুপ। পরে সেনাবাহিনী এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ইকবাল পক্ষ ও মুছা পক্ষের নেতা-কর্মীরা পৌর শহরে মিছিল বের করলে ফের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আতঙ্কে সাধারণ লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে। দোকানপাটও বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।

মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইকবাল গ্রুপ। তারা এলাকায় রীতিমতো সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। আগে যারা ছাত্রলীগ করত, এখন তারা বিএনপি নেতা ইকবালের ছেলের সঙ্গে রাজনীতি করছে। তারা গত বুধবার রাতে একটি মাহফিলে কয়েকজনের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে। ইকবাল গ্রুপের ছেলেরা যাদের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে; তারা আবার আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে মিছিল বের করে তারা। মিছিল থেকে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ও বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে। বাজার সড়ক অবরোধ করে। তারাই আবার শুক্রবার সকালে অবরোধ, মিছিল ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। ইকবাল গ্রুপের তাণ্ডবে পৌর শহরে থমথমে বিরাজ করছে।’ তাঁর অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা ও জেলা কমিটির কাছে অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বিএনপি নেতার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেতার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ ইকবাল বলেন, ‘উপজেলা বাজারে দুই দিন ধরে যা হয়েছে; সব মুছার লোকজন করেছে। বাজারে বোমাবাজি করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে তারই লোকজন। এমনকি গতকাল দলীয় কার্যালয় হামলার ঘটনাও ঘটাতে চেয়েছিল তার লোকজন। সেটি প্রতিহত করতেই আমার লোকজন মাঠে ছিল।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে মুছা স্বয়ং উপস্থিত থেকে অন্যের জমি দখল, গরু ছিনতাই করেছে। পরের জমি দখল করে বিএনপির কার্যালয় করেছেন তিনি। আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ সব মিথ্যা।’

আর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মুছা বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মনিরামপুরে যত অপকর্ম ঘটছে, সেটা বিএনপি নেতা ইকবালের লোকজন করেছে। কয়েক দিন ধরে উপজেলা বাজারে যা ঘটছে; সেটাও ইকবালের সরাসরি ইন্ধনে হয়েছে। এসব লিখিত আকারে জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

এসব বিষয়ে মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কোনো পক্ষই এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব ঘটনায় শহর উত্তপ্ত রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত