চিমনির পাশেই করাতকল, ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে ৭ শতাধিক মণ কাঠ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি 
Thumbnail image
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের মেসার্স নিউ বিআরবি ব্রিকসে স্থাপন করা করাতকল। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি বিধি না মেনে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের মেসার্স নিউ বিআরবি ব্রিকসে কাঠ পোড়ানোর জন্য চিমনির পাশেই করাতকল বসানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, করাতকলে প্রস্তুত করে প্রতিদিন সাত শতাধিক মণ কাঠ ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে কর্তৃপক্ষ। করাতকল বন্ধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিআরবি ব্রিকস এক কোটি ইট পোড়ানোর টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে আনুমানিক ৪০ লাখের বেশি ইট পুড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব ইট পোড়াতে প্রতিদিন ভাটায় দুই ট্রাক করে কাঠ ব্যবহার করতে হয়। যার মণ হিসাবে প্রতিদিন প্রায় সাত শতাধিক মণ কাঠের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেহগনি, আম, কাঁঠাল, খেজুর গাছসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠ সংগ্রহ করা হয়। এসব কাঠ বাইরের করাতকল থেকে প্রস্তুত করে ভাটায় আনা কষ্টকর, তাই কর্তৃপক্ষ ভাটার মধ্যে চিমনির পাশেই করাতকল বসিয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে সড়কের পাশে অনেক জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে মেসার্স নিউ বিআরবি ব্রিকস। এর প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। ভাটার পূর্বপাশে চিমনির পাশে পাটকাঠির ছাউনির নিচে বড় আকারের একটি করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। করাতকলের চারপাশে গাছের গুঁড়ি ও কাঠের স্তূপ পড়ে আছে। পাঁচ-ছয়জন শ্রমিক গুঁড়ি চেরাই করছেন। এই করাতকলে প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ চেরাই করা হয়। এরপর সেগুলো নেওয়া হচ্ছে ভাটার চুলায়। এ সময় সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে করাত কল বন্ধ করে সরে পড়েন শ্রমিকেরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই ইট ভাটা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রথম দিকে ভাটা কর্তৃপক্ষ ট্রাকে করে বাইরে থেকে চেরাই করা কাঠ এনে ইট পোড়ানোর কাজ করত। বর্তমানে ভাটার মধ্যে করাতকল বসানো হয়েছে। এখন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাছ কেটে এনে এই গাছ ইচ্ছেমতো চেরাই করে ভাটায় ব্যবহার করছে।

তাঁরা আরও বলেন, ভাটা মালিকপক্ষ প্রভাবশালী তাই করাতকল নিয়ে কেউ কথা বলে না। সড়কের পাশে ভাটা নির্মাণ করেছে। সড়কে সব সময় ধুলাবালিও কাদা লেগেই থাকে, এতে আমাদের চলাচল করতে খুবই সমস্যা হয়। ভাটাটি কাঠের ওপর নির্ভর করেই চলে। এখানে কয়লার ব্যবহার করা হয় না। প্রশাসনও কোনো পদক্ষেপ নেয় না।

স্থানীয় পরিবেশবিদ মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, ভাটায় কাঠ পোড়ানো যাবে না, সরকারের এমন কঠোর আইন থাকলেও ভাটার মধ্যে করাত কল বসানো হয়েছে। গাছ ফাড়াই করে ভাটাই ব্যবহার করে মালিকপক্ষ দুঃসাহস দেখিয়েছে। অবিলম্বে ভাটা বন্ধসহ মালিকপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

গ্রাম থেকে কোনো গাছ কেনেন না বলে দাবি করেছেন মেসার্স নিউ বিআরবি ব্রিকসের মালিক মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বাইরে থেকে ট্র্যাকে করে যে গাছ আছে সেগুলো কেনা হয়। ভাটায় করাতকল সব জায়গায় কম বেশি আছে। বাইরে থেকে চেরাই না করে ভাটাই করাতকল বসিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ‘জায়গা নির্ধারণ করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই ওই জায়গায় করাতকল সরিয়ে নেব।’ ভাটাই খড়ির পাশাপাশি কয়লা ব্যবহার করছেন বলে দাবি করেন হাফিজুর রহমান।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মুন্তাছির রহমান বলেন, ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো যাবে না। আর ভাটার মধ্যে করাতকল বসানো অপরাধ। তিনি আরও বলেন, ‘করাতকলের বিষয় জানতে পারলাম ওই ভাটায় দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত