Ajker Patrika

অর্ধেক রোগীও পায় না খাবার, পরিমাণেও কম

  • খাসির মাংস নেই। সোনালি বা কক মুরগির বদলে দেওয়া হয় পোলট্রি।
  • সপ্তাহে বাজার করা হয় দুই দিন। দুপুরে রেঁধে রাতে দেওয়া হয় বাসি খাবার।
মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে খাবার বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১০০ শয্যার এ প্রতিষ্ঠানে প্রতি বেলায় অর্ধেকের মতো রোগী খাবার পায় না। যারা পায়, তাদেরও দেওয়া হয় পরিমাণে কম।

রোগী, স্বজন ও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে বরাদ্দ অনুযায়ী ১০০ জনের নাশতা কখনো বিতরণ করা হয় না। ৪৫ থেকে ৫০ জনের নাশতা নিয়ে আসা হলে হুড়োহুড়ির মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য সপ্তাহে বাজার করা হয় দুই দিন।

প্রতি বেলা ৪০ কেজি চাল রান্না করার কথা থাকলেও গড়ে দুই বেলা মিলিয়ে ২০ কেজি চালের ভাত তৈরি করা হয়। ডাল ও সবজিও পরিমাণে কম রান্না করা হয়। দুপুরে একবার রান্না করে সেই খাবার রাতেও দেওয়া হয়। প্রতি শুক্রবার খাসির মাংস বরাদ্দ থাকলেও এক মাসেও তা দেওয়া হয় না। মুরগির মাংসের ক্ষেত্রে সোনালি ও কক দেওয়ার কথা থাকলেও পোলট্রি মুরগির একটি ছোট টুকরা দেওয়া হয়।

গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের নতুন ভবনের একটি ফ্লোরে খাবার বিতরণের সময় রোগীর স্বজনেরা কাড়াকাড়ি করছেন। মাত্র দুই মিনিটেই খাবার বিতরণ শেষ হয়ে যায়। রান্নাঘরে দেখা যায়, রাতে দেওয়ার জন্য একটি ঝুড়িতে ভাত রাখা আছে। সেখানে মশা-মাছি বসছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমার মা তিন দিন ভর্তি আছেন। তিন দিনে এক বেলা খাবার পেয়েছি। বাকি বেলায় খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আগেই খাবার শেষ। আমার মনে হয়, এক-দুটি ওয়ার্ডে গিয়ে নামমাত্র খাবার বিতরণ করা হয়।’

হাসপাতালের এক কর্মী জানান, একবারের বাজারে তিন-চার দিন চালানো হয়। এতে সবজি নষ্ট হয়ে যায়। ঠিকাদার পরিমাণে কম দেন। সেখান থেকে আবার সরিয়ে রাখেন রাঁধুনি। এতে করে রোগী পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে খাবার অর্ধেকে নেমে আসে।

নাম প্রকাশ না করে এক স্টাফ নার্স বলেন, ১০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি দ্বিগুণ-তিন গুণ। তবে ১০০ জনের যে খাবার বরাদ্দ, তা-ও সঠিকভাবে দেওয়া হয় না।

হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাজমুল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. নাজমুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম মেনে খাবার সরবরাহ করি। আমি বুঝিয়ে দিয়ে আসার পর যদি বাবুর্চিরা খাবার সরিয়ে ফেলে, তাহলে কী করব? চাল দিই ৩৫ কেজি। গত দুই-তিন সপ্তাহ খাসির মাংস দেওয়া হয়নি। বরাদ্দ করা টাকায় খাসির মাংস দেওয়া সম্ভব নয়। মাংসের টুকরা একদম ছোট হয়ে যায়। তাই সবার সঙ্গে পরামর্শ করে মুরগির মাংস দিচ্ছি। এর আগেও বাবুর্চিকে দু-তিনবার ধরেছি জিনিসপত্র সরানোর জন্য। বিষয়টি আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জানেন। তবে মাংস পরিমাণে এক-দুই কেজি কম দেওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন রাঁধুনি। খাবার সরানোর বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, বরাদ্দ ১০০ জনের বিপরীতে একটি খাবারও বেশি দেওয়া হয় না।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা নিয়মিত হাসপাতালের খাবার সরবরাহ মনিটরিং করি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন খাদ্যতালিকা দেওয়া হয়। বরাদ্দের তুলনায় ভর্তি রোগী অনেক। ১০০ রোগীর জন্য খাবার বরাদ্দ থাকে। যে ছোট-বড় অভিযোগগুলো আসছে, আমরা তা খতিয়ে দেখব এবং নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত