সাতক্ষীরায় চিংড়ি ছেড়ে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
Thumbnail image
সাতক্ষীরায় কাঁকড়ার ঘের। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরায় এবার কাঁকড়ার বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। দামও পাওয়া গেছে ভালো। পোনা উৎপাদন বাড়ানো গেলে সাতক্ষীরায় কাঁকড়া চাষের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট চাষিরা।

সাতক্ষীরা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকায় এবার কাঁকড়া চাষ হয়েছে ৩২১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের টার্গেট ২ হাজার মেট্রিক টন। সাত বছর আগে কাঁকড়া চাষ হয়েছিল মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে। বছর হিসেবে সাত বছরে কাঁকড়া চাষ বেড়েছে ছয় গুণ।

কাঁকড়া চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় লোনা পানিতে প্রতি বছরই বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ বাড়ছে। অল্প জমিতে স্বল্প বিনিয়োগে কাঁকড়া চাষ করা যায় বলে প্রান্তিক চাষিরা কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন। এ ছাড়া মড়ক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চিংড়ি মাছ উজাড় হওয়ায় কাঁকড়া চাষে ঝোঁক বেড়েছে চাষিদের।

শ্যামনগরের দাতনেখালি এলাকার কাঁকড়া চাষি বিপুল দাস বলেন, ‘আমি ১০ বিঘা জমিতে বাগদা চাষ করতাম। প্রতি বছরই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘের প্লাবিত হতো। তাতে মাছ ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হতে হতো। তা ছাড়া পোনার লবণ সহনীয় ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকাসহ ভাইরাসে বাগদা মরে উজাড় হয়ে যেত। তাই আমি এখন ছয় বিঘা জমিতে কাঁকড়া চাষ করছি।’

একই এলাকার রায়হান মল্লিক বলেন, ‘আমাদের এখানে খাঁচা পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ বেশি হয়। বিদেশে সফট শেল কাঁকড়ার চাহিদা বেশি। আমার ঘেরে ৭০০ খাঁচা রয়েছে। কাঁকড়া চাষ করতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।’

সাতক্ষীরায় কাঁকড়ার ঘের। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাতক্ষীরায় কাঁকড়ার ঘের। ছবি: আজকের পত্রিকা

শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী এলাকার চাষি শাওন আহমেদ বলেন, ‘এ বছর কাঁকড়ার উৎপাদন ভালো। দামও বেশ। আমার খামারে প্রতি হেক্টরে কাঁকড়ার উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৬ মেট্রিক টন। যা অন্যবার পাঁচ মেট্রিক টনের বেশি হতো না। করোনার পর থেকে বিদেশের বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা কম ছিল। কিন্তু এবার এ গ্রেডের কাঁকড়া হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

আশাশুনির স্বরূপনগর এলাকার খামারি বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ‘কাঁকড়া প্রথমে খাঁচায় ছাড়তে হয়। খাঁচার ভেতরে খাদ্য হিসেবে তেলাপিয়া মাছ দিতে হয়। ১৯-২০ দিন পর খোলস ছাড়ে কাঁকড়া। তখন এটি সফট শেল কাঁকড়া হিসেবে বাজারে বেচতে হয়।’

বিরূপাক্ষ পাল আরও বলেন, ‘আমার ১ হাজার ৬০০ খাঁচা ছাড়া রয়েছে। এখন অফ সিজন। শীতকালে কাঁকড়া মারা যায়। সুতরাং ৯ মাসেই ব্যবসা করে নিতে হয়। ১ হাজার ৬০০ খাঁচায় আমার ১০-১২ লাখ টাকার ব্যবসা হবে।’

সাতক্ষীরায় কাঁকড়ার ঘের। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাতক্ষীরায় কাঁকড়ার ঘের। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেবহাটার পারুলিয়া এলাকার ব্যবসায়ী শ্যামল পাল বলেন, ‘এ বছর কাঁকড়ার দাম বেশ ভালো। এ গ্রেডের কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। বি গ্রেডের কাঁকড়ার দাম ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা। আর সি গ্রেডের কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। কাঁকড়া সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা ও চীনে রপ্তানি করা হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম সেলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাতক্ষীরায় কাঁকড়া চাষ বেশ সম্ভাবনাময়। সফট শেলের চাহিদা বেশি। কাঁকড়া প্রসেসিং প্ল্যান্ট রয়েছে শ্যামনগরে। যার মাধ্যমে কাঁকড়া সরাসরি বিদেশে যাচ্ছে। ঝুঁকি কম বলে অনেকেই কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন। সমস্যা হলো পোনা নিয়ে। পোনা সবই সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করতে হয়। বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং জুন, জুলাই ও আগস্টে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ। তখন পোনা সংকটে পড়েন চাষিরা। তাই হ্যাচারি স্থাপন প্রয়োজন। সরকারিভাবে দেশে শুধু কক্সবাজারে হ্যাচারি রয়েছে। বেসরকারিভাবে হ্যাচারি স্থাপন করা ছাড়া বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সুপারিশ কমিশনের

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত