ঈশ্বরগঞ্জের নিখোঁজ সেলিমকে পাওয়া গেল মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে, পেটে কাটা দাগ নিয়ে সন্দেহ

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১১ মে ২০২৪, ২০: ৪৫
Thumbnail image

মানসিক ভারসাম্যহীন মো. সেলিম (৪০)। ছয় মাস আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এরপর পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি। অবশেষে ফেসবুকে মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রয় কেন্দ্রে সেলিমের ছবি দেখতে পান পরিবারের লোকজন। এরপর গত মঙ্গলবার সেলিমের মা রাবিয়া, চাচাতো ভাই গ্রাম পুলিশ আব্দুর রশিদ সেখানে গিয়ে সেলিমকে পান। পরের দিন বুধবার পুলিশের সহায়তায় সেলিমকে অসুস্থ অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। 

মো. সেলিম ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ বড়হিত ইউনিয়নের বৃপাচাশী গ্রামের দরিদ্র হাসিম উদ্দিনের ছেলে। মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়িতে আনার পর সেলিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও তলপেটে দুপাশে কাটা দাগ দেখতে পান। সেলিমের পরিবারের অভিযোগ, আশ্রয় কেন্দ্রে সেলিমকে নির্যাতন করে কিডনি খুলে নেওয়া হয়েছে। 

সেলিমের কিডনি খুলে নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রা তাঁকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন।

আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের বৃপাচাশী গ্রামে সেলিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেলিমকে দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করেছে। লাল কাপড় পরিহিত কাউকে দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠছেন সেলিম মিয়া। ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। তলপেটের দু’পাশে কাটা দাগ। ক্ষত এখনো ভালোমতো শুকায়নি।

সেলিমের মা রাবিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল, কিন্তু শরীরে কোনো দাগ ছিল না। পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে নির্যাতনের পর তলপেটের দু’পাশে কাটাছেঁড়া করে কিডনি খুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।’

ছয় মাস নিখোঁজ ছিলেন সেলিম, পাওয়া গেল মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে। ছবি: আজকের পত্রিকাস্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩৫) বলেন, ‘আমার দুইটা মেয়ে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে সোমাইয়া মণি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। পাগল হলেও তিনি আমার স্বামী। এখন তাঁর যে অবস্থা করেছে, মনে হয় আমার মেয়েরা এতিম হবে, আর আমি বিধবা হয়ে যাব!’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘এমন একটি খবর পেয়ে বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পরিবারের লোকজনকে তাঁর চিকিৎসা ও কিছু পরীক্ষার করার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার পর বোঝা যাবে ঘটনাটা কী। এরপর অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। 

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তোলা বিতর্কিত সমাজকর্মী মিল্টন সমাদ্দারকে জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানবহিতৈষী ও সমাজসেবী চেহারার আড়ালে তিনি ভয়ংকর সব কর্মকাণ্ড চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে এক শিশুকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। 

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, মিল্টন সমাদ্দারের সংস্থার অপারেশন থিয়েটারের লাইসেন্স ছিল না। নিজের স্বাক্ষরেই বানাতেন মৃত্যুসনদ। তবে কিডনি–মানব পাচারের তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছে ডিবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত