কার্ড স্ক্যানে বের হচ্ছে পিরিয়ডের সুরক্ষা প্যাড, উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ৫১
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ০৩

পিরিয়ডের সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগতে হয় স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের। অনেকে লজ্জা ও ভয়ে বিষয়টি চেপে যান, স্কুল কামাই করে। এমন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের লক্ষ্যে ময়মনসিংহ বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি বিদায়ী শিক্ষার্থীরা তাদের চাদার টাকায় ছাত্রীদের জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছে ‘হাইজিন স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন’। তাদের এমন উদ্যোগে উচ্ছ্বাসিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরা। 

বিদায়ি শিক্ষার্থী আফরিনা নওশিন জবা বলে, ‘বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে চিন্তা আসে যে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের কিছু উপহার দেওয়া যায় কি না। সেই চিন্তাভাবনা থেকে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়াশরুমে হাইজিন স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন আছে বলে জানতে পারি। মূলত সেখানকার ধারণা থেকে বিদ্যাময়ীতে এটি উপহার দেওয়া। পরে দিবা শাখার ১৩৬ জন শিক্ষার্থী মিলে ১৮০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে হাইজিন স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন কিনে দিই।’ 

মায়মুনাহ সরকার অর্থি বলে, ‘মেশিনে খুব সহজেই একটি কার্ড স্ক্যান করলেই প্যাড চলে আসবে। এখন আর লজ্জায় কাউকে ক্লাস মিস করতে হবে না। মেশিনটি বিদ্যুৎ ও ওয়াইফাই দিয়ে চলে। প্রত্যেক ক্লাসের ক্লাস ক্যাপ্টেন ও নারী শিক্ষকদের কাছে কার্ড দেওয়া আছে। স্কুলে আসার পর যে কারও পিরিয়ড হলে তারা সহজেই সেবাটি পাবে। আমরা যে অভিজ্ঞতার মধ্যে স্কুলজীবন শেষ করেছি, সেই সমস্যার সম্মুখীন যেন ছোটদের না হতে হয় সেই লক্ষ্যে আমাদের এই কার্যক্রম।’ 

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অহনা বলল, ‘এ সম্পর্কে আমরা অনেকে হীনম্মন্যতায় ভোগী, কারও সঙ্গে কথা বলতে চাই না। আমরা যেহেতু মেয়ে হিসেবে জন্ম নিয়েছি, সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই প্রতি মাসে আমাদের পিরিয়ড হবে। আমাদের বড় আপুরা উপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। হাইজিন স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের ফলে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। ক্লাসের অনুপস্থিতিও কমবে।’

দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী অগ্নিনালা ঘোষ বলল, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন স্কুলে এসে এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যেতে হতো। এখন আর আমাদের বাসায় যেতে হবে না। কেউ লজ্জাও পাবে না। যার প্রয়োজন হবে সহজেই পেড নিয়ে সুরক্ষিত হতে পারবে। বড় আপুদের এমন উপহারে আমরা মুগ্ধ।’ 

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মাহমুদা আক্তার বলেন, এখনকার সময়ে মেয়েদের তাড়াতাড়ি ও ছোট বয়সে পিরিয়ড হয়ে যায়। তখন তারা মানসিক অবসাদে ভোগে। এখন আর সেটি হবে না। তারা নিজেদের সুরক্ষা নিজেরাই নিতে পারবে। মেয়েদের সুরক্ষার জন্য এমন কাজে বিদায়ি মেয়েদের ধন্যবাদ জানাই।’ 

বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক আয়েশা আক্তার খাতুন বলেন, ‘মেয়েরা স্কুলে তাদের ছোট বোনদের হাইজিন স্যানিটারি পেড ভেন্ডিং মেশিন উপহার দিতে চায়। তাদের বিদায় উপলক্ষে এমন সিদ্ধান্ত আমাদের জানালে আমরা সাধুবাদ জানাই। বিদ্যাময়ীর মাধ্যমে এখন সারা বাংলাদেশের মানুষ শিখবে। একসময় মেয়েরা ইতস্তত বোধ করত, এখন তারা এ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমি মনে করি বিদায়ি মেয়েরা মাইলফলক স্থাপন করল।’ 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা এখন অনেক অ্যাডভান্সড। তাদের কিছু কাজ আমাদের মুগ্ধ করে। সম্প্রতি বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি বিদায়ি শিক্ষার্থীদের চাঁদার টাকায় কেনা হাইজিন স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিনে সুরক্ষা পাবে প্রতিষ্ঠানটির ২ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থী। তারা যে কাজটি করেছে, তার মাধ্যমে পুরোনো ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এতে অন্য মেয়েদের লজ্জা কমার পাশাপাশি স্কুলে অনুপস্থিতি কমবে। তারা সুরক্ষায় থাকবে।’

প্রধান শিক্ষিকা আরও বলেন, ‘যদি অন্যান্য স্কুলে একই ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে মেয়েদের জন্য ভালো হবে। আমরাও চাই মেয়েরা আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক। তারা নিজেদের বিষয়ে সচেতন হোক।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত