মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা, ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১৪: ০৭
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১৫: ৩৭

মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর এবার মেয়ের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন নীলফামারীর ডিমলার মারুফা আকতার। মেয়ে শাহী সিদ্দিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবং মারুফা আকতার একই কলেজের বিএম শাখা থেকে পরীক্ষায় বসেছেন। মা ও মেয়ে দুজন ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় একসঙ্গে অংশ নিয়ে মেয়ের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন মারুফা আকতার। তিনি এসএসসিতে জিপিএ-৪.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং তাঁর মেয়ে শাহী সিদ্দিকা পেয়েছিলেন জিপিএ-৩।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মারুফা আক্তারের বাবার বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নাউতারা গ্রামে। বিয়ে হয় একই উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুন্যারঝার গ্রামের সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। সাইদুল ইসলাম পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে শাহী সিদ্দিকা বড়। দ্বিতীয় ছেলে দশম শ্রেণিতে, তৃতীয় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

মা মারুফা আকতার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ডিমলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে। ২০০৩ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায় মারুফা আক্তারের। এরপর থেমে যায় তাঁর লেখাপড়া। পরপর চার ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে কেটে যায় ১৫ বছর। তবে লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছে তাঁর রয়েই যায়। সেটিরই প্রতিফলন হিসেবে নিজের সুপ্ত ইচ্ছেশক্তির জোরে নিজের মেয়ের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন মাধ্যমিক। এবার বসেছেন উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষায়।

নতুন করে পড়াশোনা শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে মারুফা আক্তার জানান, নিজের ইচ্ছা ও স্বামী-সন্তানদের অনুপ্রেরণায় নবম শ্রেণি থেকে আবার পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ভর্তি হন ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসায়। সেই সময় তাঁর মেয়েও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এরপর ২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন তিনি।

মারুফা আকতার বলেন, ‘সমাজের আর দশটা মানুষের মতো আমিও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যাতে নিজের পরিচয় দিতে পারি, সে জন্য কষ্ট করে পড়াশোনাটা আবার শুরু করেছি। ইচ্ছে আছে এইচএসসি পাস করে দেশের ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার।’

এ বিষয়ে মারুফা আক্তারের স্বামী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর ইচ্ছেটার মর্যাদা দিয়েছি। সে যত দূর পড়াশোনা করতে পারে, আমি চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত