কুড়িগ্রামে নদীতে বাড়ছে পানি, তিস্তার বাঁধে ধস

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ২১: ৩৮
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ২২: ২০

উজানের ঢল আর বৃষ্টিপাতে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধান নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় তীব্র স্রোতে জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের বুড়িরহাটে তিস্তার বাম তীরের একটি স্পার বাঁধের একাধিক স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। বাঁধের রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট (আরসিসি) অংশের প্রান্তভাগ আজ শনিবার সন্ধ্যার দিকে ধসে পড়েছে। এতে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে তিস্তা পাড়ের শত শত পরিবার। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, স্পার বাঁধ মূলত নদীর স্রোতকে দূরে সরিয়ে দেয়। ফলে বাঁধের উজান ও ভাটিতে ভাঙন কম হয়। বুড়িরহাটের বাঁধটি রক্ষায় জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলা হচ্ছে। বাঁধটি ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। 

এদিকে বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় উজান ও ভাটির দিকের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তার স্রোতের ঘূর্ণনে বাঁধের মধ্যবর্তী মাটির অংশ ধসে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ধস দেখা দিয়েছে আরও একাধিক স্থানে। বাঁধটির পশ্চিম পাশের আরসিসি অংশের শীর্ষ ভাগ তীব্র স্রোতে দক্ষিণ দিকে সামান্য হেলে পড়েছে। বাঁধটি রক্ষায় এর উভয় পাশে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ (বালুভর্তি ব্যাগ) ও টিউব ফেলছেন পাউবোর কর্মীরা। ঝুঁকি এড়াতে বাঁধের প্রবেশমুখে বাঁশের খুঁটি দিয়ে জনসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছে পাউবো। 

বাঁধের ভাটিতে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, ‘এই বাঁধ দিয়া আমাদের অনেক উপকার হইছে। এটা না থাকলে আমরা এই মহল্লায় থাকতে পারব না। আমরা খুব চিন্তায় আছি। এই বাঁধ না থাকলে আমাদের ঘরবাড়ি নিয়া এখান থাকি চলি যাওয়া লাগবে। কিন্তু আমরা কোথায় যাব? সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, এটা রক্ষা করার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেভাবে নেওয়া হউক।’ 

আরেক বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, ‘যে অবস্থা তাতে আমরা খুব চিন্তায় আছি। বসতি আর প্রতিষ্ঠানগুলা হুমকিতে আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়া ছেলে-মেয়েরা চিন্তায় আছে। পশ্চিম দিকে তাকাইলে খালি পানি আর পানি।’ 

ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের বুড়িরহাটে তিস্তা নদীর বাম তীরে স্পার বাঁধে গর্তের সৃষ্টিঘটনাস্থলে উপস্থিত পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘স্পার বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এটি রক্ষায় জিও ব্যাগ ও টিউব ডাম্পিং করছি। প্রয়োজনীয় জিও ব্যাগ মজুত করা হয়েছে। আমরা বাঁধটি ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’ 

এদিকে উজানের ঢলে জেলার নদনদীতে দ্রুত গতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কিছু বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের আমন খেত। এই অবস্থায় জেলায় আরেকটি বন্যা পরিস্থিতির উপক্রম দেখা দিয়েছে।’ 

পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া এবং চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ও ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাড়ছে ধরলার পানিও। 

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পাউবো জানায়, অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে আগস্টের শেষ সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্রের পানিও বিপৎসীমায় পৌঁছাতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ এবং চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় এসব অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুতি রেখেছি। খাদ্য সহায়তা, উদ্ধার নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্রসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত