চোখের সামনে গরু পুড়তে দেখে কান্না থামছে না বাবলীর

নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১৯: ১৯

রোববার রাত তখন ৯টা। বাড়ির পাশের মসজিদে তারাবির নামাজে গ্রামের পুরুষেরা। নামাজের সেজদায় বাড়ির কর্তা নজরুল ইসলামসহ তাঁর পাঁচ ছেলে। ঠিক এ সময় আগুন লাগার চিৎকার তাঁদের কানে ভেসে আসে। নামাজ শেষে ছুটে এসে দেখতে পায় পুরো বাড়ির নয়টি ঘর আগুনে পুড়ছে।

নিজের বাছুরসহ বিদেশি জাতের গাভিটি বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে চায় গৃহবধূ বাবলী। প্রতিবেশীরা বারবার আটকানোর চেষ্টা করে যেন ব্যর্থ হচ্ছে। এক সময় মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকে চোখের সামনে দুধের গাভি ও বাছুর পুড়তে দেখে।

ঘটনাটি ঘটে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাষকান্দর গ্রামের ভুল্লীপাড়ায়। ওই পাড়ায় পাঁচ ছেলে নিয়ে যৌথভাবে বসবাস করে বর্গাচাষি নজরুল ইসলাম। বাড়ির ভেতরে একটি ঘরে ১২টি কোয়ালিটি সেলাইমেশিন নিয়ে ক্ষুদ্র গার্মেন্টস গড়ে তুলেছে বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সেখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

আজ সোমবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীরা আগুনে পুড়ে যাওয়া চারটি গরু ও পাঁচটি ছাগল সরানোর কাজ করছে। এ সময় খায়রুল ইসলামের স্ত্রী বাবলী আকতার কান্নায় ভেঙে পড়ছে। অনেকে সান্ত্বনা দিয়েও তাঁর কান্না থামাতে পারছে না।

বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘ঘরের আলমারিতে রাখা নগদ ৫০ হাজার টাকা পুড়ে গেছে। আমার এতেও দুঃখ নেই, কিন্তু অবলা পশুগুলো চোখের সামনে পুড়ে মরল, বাঁচাতে পারলাম না।’

পুড়ে যাওয়া বই দেখ কাঁদছে স্কুলছাত্র শাহিনুর ইসলামএদিকে পুড়ে যাওয়া বইয়ের পাশে বসে কাঁদছে শাহিনুর ইসলাম। সে স্থানীয় বোতলাগাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

শাহিনুর জানায়, পোড়া বইয়ের মাঝে তার বড় ভাই হাফিজুল ইসলামের পুড়ে যাওয়া সনদপত্র খুঁজছে। হাফিজুল নীলফামারী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র।

এ সময় ঘটনাস্থলে কথা হয় বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাষক আব্দুল হাফিজ হাপ্পুর সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, আগুনে পুরো পরিবারটি নিঃস্ব হয়েছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের পার্শ্ববতী মোহাম্মদীয়া শাহ্ সেকেন্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে পরিবারটির পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন।

সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. খুরশীদ আলম জানান, আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। তবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত