Ajker Patrika

সেই মারুফা সুযোগ পেলেন জাতীয় দলে

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০: ১১
সেই মারুফা সুযোগ পেলেন জাতীয় দলে

বাবা বর্গা চাষি। মা গৃহিণী। পড়ালেখার পাশাপাশি বাবাকে কৃষিকাজে সহায়তা করেন মারুফা আক্তার। ভালোবাসেন ক্রিকেট খেলতে। সেই সংগ্রামী মারুফা এবার সুযোগ পেলেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে।

গত রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের জন্য দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ১৫ সদস্যের এই দলে নতুন মুখ ১৯ বছর বয়সী ডান হাতি পেসার মারুফা আক্তার। এই খবরে পরিবার ও এলাকায় বইছে খুশির বন্যা।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত ঢেলাপীর এলাকার দরিদ্র কৃষক আইমুল্লাহর ছোট মেয়ে মারুফা আক্তার। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালো লাগা তাঁর। সেই ভালো লাগা থেকেই প্রথমে ছেলেদের সঙ্গে খেলতে শুরু করেন ক্রিকেট। পরবর্তী সময়ে বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলে। ২০২১ সালে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকায় বাবা আলিমুল্লার সঙ্গে বর্গা নেওয়া জমিতে হালচাষ করার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন মারুফা। 

করোনা মহামারির সময় বাবাকে কৃষিকাজে সহায়তা করে মারুফা আক্তার। অভাব-অনটনের সংসারে ক্রিকেট খেলা মারুফার কাছে তখন বিলাসিতাই মনে হয়েছিল। করোনাকালে আর্থিক সংকটের কারণে ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। বিসিবির সহযোগিতায় ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ডাক পেলেন জাতীয় দলে। 

করোনা মহামারি শেষে ওয়ানডে ফরম্যাটের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বাজিমাত করেন মারুফা। বিকেএসপির হয়ে ১১ ম্যাচে ৩ দশমিক ২১ ইকোনমিতে ২৩ উইকেট নেন। এর মধ্যে এক ম্যাচেই নেন ৭ উইকেট। দারুণ বোলিংয়ের স্বীকৃতি হিসেবে জিতে নেন টুর্নামেন্টের ‘বেস্ট প্রমিজিং প্লেয়ার’-এর পুরস্কার। 

এই সাফল্যের পথ ধরেই ২৮ সদস্যের জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়ে সবাইকে অবাক করে দেন মারুফা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৮ সেপ্টেম্বর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শুরু হবে বাংলাদেশের। সূচি চূড়ান্ত হয়েছে আগেই। ক্যাম্প করার জন্য আগেভাগে সেখানে যাবে লাল-সবুজের মেয়েরা। ৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা করবে বাংলাদেশ। এটাই হবে মারুফার প্রথম বিদেশ সফর। 

করোনা মহামারির সময় বাবাকে কৃষিকাজে সহায়তা করে মারুফা আক্তার। এ নিয়ে আজকের পত্রিকাকে মারুফা বলেন, ‘কতটা ভালো লাগছে যে তা বোঝাতে পারব না! জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি এটাই শেষ না। এখন আমার লক্ষ্য ১১ জনে থাকা এবং ভালো খেলা। অভাব-অনটনের কারণে ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। তবে বিসিবির সহযোগিতায় আজ জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছি। বিসিবির অনুদান না পেলে করোনার প্রথম ওয়েভের সময় থমকে যেত স্বপ্ন। বিসিবিকে আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ।’ 

অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে মারুফা আক্তার বলেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই আল-আমিনের সঙ্গে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন করি। ২০১৮ সালে আমি বিকেএসপিতে সুযোগ পাই। সেখানে দুই মাস ক্যাম্প করি। ক্যাম্প শেষে খুলনার ইমতিয়াজ হোসেন পিলু স্যার আমাকে ২০১৯ সালে মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ করে দেন। এরপর স্যার আমাকে খুলনা দলে নেন। অনূর্ধ্ব-১৮ দলে সুযোগ পাই।’ 

মারুফার বাবা আলিমুল্লাও মেয়ের সাফল্যে অত্যন্ত খুশি। তিনি বলেন, ‘নিজের কোনো জমি বা বসতভিটা নেই। শ্বশুরের দেওয়া বাড়িতে থাকি। অন্যের জমি বর্গা চাষ ও দিনমজুরি করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। খেলার প্রতি মারুফার খুব আগ্রহ ও ভালোবাসা। শুরুতে মেয়ের খেলা সমাজের অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। দারিদ্র্য ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে সে জাতীয় দলে খেলবে। সে অনেক বড় খেলোয়াড় হবে এটাই আমার স্বপ্ন। সবাইকে আমার মেয়ের জন্য দোয়া করার অনুরোধ করছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজারে বিমানঘাঁটিতে গুলি: যা বলছে আইএসপিআর, নিহতের মা-বাবা ও স্থানীয়রা

কক্সবাজার বিমান ঘাঁটিতে দুর্বৃত্তদের হামলা, সংঘর্ষে নিহত ১

ভারতের কাছে হারে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্টকে ধুয়ে দিলেন শোয়েব

নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক নিয়ে কী প্রস্তাব এল, জানালেন আখতার

মালিককে ঘরে আটকে রেখে খামারে পেট্রল ঢেলে আগুন, পুড়ল ৮ গরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত