রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে সাবাড়

  • মামলার আসামিরা পুনরায় পাহাড় কেটে বিক্রি করেছেন
  • রাত নামলেই খননযন্ত্র দিয়ে পাহাড় কেটে ট্রাকে ভরে লুট
  • জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি পরিবেশবিদদের
ছনি আহমেদ চৌধুরী, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) 
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৪৯
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পরগনায় পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

­পাহাড়ের লাল মাটি উচ্চ দামে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা ঝুঁকিতে পড়ছেন। প্রশাসনের নজর এড়াতে রাতভর এই পাহাড় কাটা চলে।

সম্প্রতি পাহাড় কাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু মামলার পরও একই অপরাধে জড়াচ্ছেন আসামিরা। ফলে থামছে না পাহাড় কাটা। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে না পারা ও দায়সারা মামলার কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না পাহাড় নিধন, এমনটি মনে করছেন পরিবেশবিদেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া, গজনাইপুর ও পানিউমদা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দিনারপুর পরগনা। এটি জেলার পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ২০১৫ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন দিনারপুর এলাকার টিলা ও পাহাড় না কাটার জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করে।এ ব্যাপারে হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা দিয়ে রুল জারি করেন। রুল শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায়ে দিনারপুরে পাহাড় ও টিলা কাটা রোধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া তৎকালীন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বছরের অধিকাংশ সময় দিনারপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে মাটির রমরমা ব্যবসা করছে একটি অসাধু চক্র।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর রাত থেকে গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের একটি পাহাড়ের বড় অংশ কাটা শুরু হয়। ওই গ্রামের গেদু মিয়ার ছেলে রাজু মিয়ার তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সংঘবদ্ধ একটি চক্র খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে।

­চক্রটি পাহাড়ের মাটি ট্রাকভর্তি করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। ওই মাটিতে পাশের সোনা মিয়া, আব্দুর নূর, আব্দুল গফুরের মালিকানাধীন জায়গা ভরাট করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদ প্রকাশের পর ১৮ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হরিপদ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামিরা হলেন গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের গেদু মিয়ার ছেলে রাজু মিয়া (৫০); বনগাঁও গ্রামের নওয়াব উল্লার ছেলে আব্দুর নূর (৫০), সোনা মিয়া (৬০) ও আব্দুল গফুর (৪৮)। কিন্তু মামলার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রাজু মিয়া।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১ নভেম্বর থেকে কান্দিগাঁও গ্রামের একই স্থানে পাহাড় কাটছেন মামলার প্রধান আসামি গেদু মিয়ার ছেলে রাজু মিয়া। রাত ১১টার পর শুরু হয় পাহাড় কাটা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে পাহাড় কাটার মেশিনের বিকট শব্দ হয়। ট্রাক চলাচলেও শব্দ হয়। এতে আমরা ঘুমাতে পারি না। প্রতিবাদ করলে হুমকি দেওয়া হয়। রাজু পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পাহাড় কাটছেন বলে এলাকায় বলে বেড়াচ্ছেন।’

রাজু মিয়া পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করেন বলেন, পাহাড় কাটার জন্য সরকারের অনুমতি নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, মামলার পরও একই স্থানে বারবার পাহাড় কাটা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। মাঝেমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করছে ঠিকই, কিন্তু পাহাড় কাটা থামছে না। পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। কিন্তু দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন প্রয়োগ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. গোলাম সামদানী বলেন, ‘কান্দিগাঁও গ্রামের পাহাড় কাটার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা আমি তদন্ত করছি। মামলার পরও একই স্থানে পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে শুনেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, পাহাড় কাটার ঘটনায় মামলার পরও যদি আসামিরা একই অপরাধ করেন, তাহলে পৃথক মামলা করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত