বোরো ধান উৎপাদনে ‘ট্রে’ পদ্ধতিতে চলছে চারা পরিচর্যা 

শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ০৭
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ২৪

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে (সমলয়) ট্রে পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো চারা উৎপাদন করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। শান্তিগঞ্জ উপজেলার কান্দিগাঁও গ্রামের স্থানীয় কৃষকেরা ট্রে পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন শুরু করেছেন। 

এই পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রেতে চারা উৎপাদন করা হয়। এতে ধানের উৎপাদন খরচ কমানোসহ শ্রমিক সংকট নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। 

উপজেলা কৃষি সূত্রে জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ৫০০ ট্রেতে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। এই বীজ ৫০ একর জমিতে রোপণ করা যাবে। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ১৫ থেকে ২০ দিনের চারা মাঠে রোপণ করা যাবে। প্রতিটি ট্রেতে ১২০ গ্রাম থেকে ১৩০ গ্রাম ধানের বীজ বপন করা যায়। ট্রের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ রাসায়নিক ব্যবহারে রোগপ্রতিরোধের পাশাপাশি বীজ বপনের ১৩ থেকে ১৫ দিন পর ধানের চারাগুলো মাদুরের মতো করে তোলা হয়। এরপর চারা রোপণ যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে মাঠে রোপণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে একজন শ্রমিক একটি মেশিন দিয়ে দিনে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারবেন। ট্রে পদ্ধতিতে চারা টেনে তুলতে হয় না, তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে না। ফলে শিকড় দ্রুত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। 

শান্তিগঞ্জ উপজেলার কান্দিগাঁও গ্রামের কৃষক হাজী আব্দুল হেকিম বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে ধানের চারা আগে কখনো চাষ করতে দেখিনি। প্রথমবারের মতো কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেছি। আশা করি ভালো ফলন হবে। এ বছর ফলন ভালো হলে কৃষকেরা ভবিষ্যতে আরও বেশি চাষাবাদ করবে।’ 

এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি অফিসার অলক চন্দ্র দাস ও শান্তনা আক্তার বলেন, ‘সুনামগঞ্জে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে এই পদ্ধতিতে ধান চাষে ফলন বাড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ফ্রেম বা ট্রেতে বীজ বপনে ৩: ২ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ দিয়ে বীজতলা তৈরি করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণে পানি দিয়ে ভিজিয়ে সমতল জায়গায় রাখা হয়। বীজতলা তৈরির তিন দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রোপণ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে কৃষক ভালো মানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে ফসল ফলাতে পারেন।’ 

শান্তিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সমলয় পদ্ধতিতে ট্রেতে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারসহ ধানের উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। সফলভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় কৃষকেরা বীজ, সার ও ফসলের উপকরণ পাচ্ছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ হাওরাঞ্চলের মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত