তলিয়েছে ৪৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল, ভেসে গেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকার মাছ

মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ২৯
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ২০

মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সব কটি নদীর পানি বিপৎসীমা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু ও ধলাই নদের বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙনের কারণে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এতে কৃষি ও মৎস্য খাতের দুটিই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর ফসল তলিয়ে গেছে ও ১ হাজার ৬৫০টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সাতটি উপজেলায় চার দফা বন্যা হলো। এবারের বন্যায় পাকা আউশ ধান ও আমন ধানের চারা তলিয়ে গেছে। পানিতে আউশ ও আমনের মাঠসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিখেত তলিয়ে যায়। একই সঙ্গে ফিশারির মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য খামারিরা শত চেষ্টা করেও মাছ আটকে রাখতে পারেননি। খামারিরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ এনে মাছের খামর করলেও বন্যায় ভেসে গেছে সব মাছ। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বন্যায় ৪০ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমির আমন ফসল, ৩৪৩ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, ২৭৭ হেক্টর জমির সবজি ও ৩ হাজার ১৬৯ হেক্টর জমির পাকা আউশ ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি টাকার পরিমাণে অর্ধশত কোটি টাকা হবে। পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো জানা যায়নি। বন্যার পানি কমে গেলে জানা যাবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হবে। 

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বন্যায় জেলায় প্রায় ১ হাজার ৬৫০ পুকুর ও ফিশারির ৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। একই সঙ্গে প্রায় ৫০ লাখ টাকার পোনা মাছ ভেসে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তালিকা করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। 

জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষক সামাদ মিয়া বলেন, ‘আমি ঋণ করে তিন একর জমিতে আউশ ধানের চাষ করছিলাম। বন্যায় আমার পাকা ফসল তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে আমন ফসলের চারা তলিয়ে গেছে। পানি কমতে কমতে ধানের সব চারা পচে নষ্ট হয়ে যাবে’
 
মৌলভীবাজারে বন্যায় তলিয়ে গেছে ৪৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল। ছবি: আজকের পত্রিকাজেলার রাজনগর উপজেলার কৃষক আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে আমার বিভিন্ন ধরনের সবজিখেত তলিয়ে গেছে।’ 

জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মৎস্য খামারি ওয়াজিদ মিয়া বলেন, ‘প্রায় লাখ টাকার মাছ পুকুরে চাষ করেছি। কিন্তু বন্যায় সবকিছু নিয়ে গেছে। ছোট-বড় সব মাছ ভেসে গেছে।’ 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ সিরাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৫ কোটি টাকার মাছ বন্যায় ভেসে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতার চেষ্টা করব।’ 

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, জেলায় বন্যায় প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমির আমন, আউশ ফসলসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি কমার পর জানা যাবে কী পরিমাণ ও কত টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

উল্লেখ্য, মৌলভীবাজারে টানা কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার সব কটি নদীর পানি বেড়ে বন্যার অবনতি হয়েছে সব উপজেলায়। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদের চারটি ও মনু নদের ১০ জায়গায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার বেশ কিছু রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত রয়েছে। জেলার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত