লবীব আহমদ, সিলেট
টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ২৩টি ওয়ার্ডের ৫০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ২ হাজার ৫০০ জন। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রামের ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২৩টি গ্রামে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন।
উপজেলার সব সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর-সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সব সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। আর জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে বালাগঞ্জ উপজেলায় কম মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং জকিগঞ্জেও কম মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার সব এলাকা বন্যায় প্লাবিত। যাদের ঘরবাড়িতে বেশি পানি উঠেছে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আমরা বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসহায়তা দিচ্ছি।’
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সিলেটে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের তিনটি নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেমি. ও সিলেট পয়েন্টে ৩৭ সেমি, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে ৬২ সেমি., ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০০ সেমি, শেরপুর পয়েন্টে ২১ সেমি. ও সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ২ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে সময় লাগবে। গত পাঁচ দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
ডুবেছে নগরী:
মহানগরীর উপশহর, মেন্দিবাগ, তালতলা, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপার, যতরপুর, মিরাবাজার, জামতলা, কাজির বাজার, শেখঘাট, বেতের বাজারসহ নিম্নাঞ্চল এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এসব এলাকার মানুষের বাসাবাড়িতে কারও হাঁটু সমান পানি আবার কারও বাসায় কোমর সমান পানি। অনেকের বাসায় পানি ওঠাতে চলে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কেউ কেউ আত্মীয়ের বাসাবাড়িতে উঠেছেন।
তালতলায় থাকা সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ঈদের দিন রাতে ঢুকে পড়া পানি এখনো রয়েছে স্টেশনটিতে। সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীতে পানি ঢুকলেই আমাদের অফিস ডুবে যায়। এখনো চার ফুট পানির নিচে রয়েছে আমাদের স্টেশন। তবুও আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই।’
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও ৫০ বছর বয়সী জায়েদা বেগম জানান, ‘আমি হোটেলে কাজ করি। আমার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। স্বামী বয়স্ক ও অসুস্থ। আমি কাজ করে সংসার চালাই। ঈদের দিন রাতের বৃষ্টিতে ঘরে পানি উঠেছে। এখন ঘরে গলা পানি। পরে ওই দিন ফজরের ওয়াক্তে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এখন এখানে খাবারদাবার নেই।
‘যার কারণে খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। হোটেল বন্ধ থাকায় সেখানেও যেতে পারছি না। একটি পাঁচতলার বাসায় পরিবার নিয়ে উঠেছি। শুনেছি যতরপুরের ওই দিকে একজন ত্রাণ বিতরণ করবে, সেখানে গিয়ে এই চিড়া-মুড়ি চেয়ে আনছি। তবুও তারা দিতে চাচ্ছে না। ঘরের ডেগ-বাসন সব পানির নিচে। কিসের ঈদ করব। ঈদ করছি না। আশ্রয়কেন্দ্রে গ্যাস নেই। এ কারণে রান্নাবান্নাও করতে পারছি না।’
নগরীর উপশহরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আমির হোসেন (৩৮) জানান, ‘ঈদের আগের দিন রাতের বৃষ্টিতে বাসায় পানি উঠে। এখন ঘরে কোমর পানি। আমার পরিবারে আটজন সদস্য। বাসায় কোমর পানি হওয়ায় এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। উপশহরের প্রতিটি ব্লকেই পানি। যার কারণে যারা নিচতলায় থাকেন, তারা সবাই-ই এই পানিতে আক্রান্ত।
আগের বারও পানি উঠছিল। এখন বৃষ্টি হলেই মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে, বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি। ঈদের নামাজ গিয়ে পড়তে হয়েছে হাঁটুসমান পানি ভেঙে গিয়ে। ঈদগাহে নামাজ পড়ার কথা থাকলেও প্রায় সব জায়গায়ই মানুষজন মসজিদে পড়ছেন। এবারের ঈদ আর সেই আনন্দ নিয়ে আসে নি। সারা দিন বৃষ্টি আর বাসায় পানি। খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি আমরা। সুরমা নদীও ভরা। পানি যাওয়ার জায়গা নেই আর আমাদেরও বাঁচার উপায় নেই।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। নগরীর ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে মানুষ উঠেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না খাবার, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। নগরীর বন্যা পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান।’
হাসপাতালে পানি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে পানি। তবে সবশেষ বুধবার হাসপাতালের মধ্যে থেকে পানি নেমে যায়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মঙ্গলবারে পানি বাড়ার কারণে হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে নিচতলায় থাকায় ইমার্জেন্সি বিভাগের সবকিছু ওপর তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বুধবার পানি কমে গেলে তা আবার নিচে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো হাসপাতালের রাস্তায় হাঁটু সমান পানি।’
মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু:
জকিগঞ্জে বন্যার পানিতে কলাগাছের ভেলা করে মাছ ধরতে গিয়ে আব্দুল হালিম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান জকিগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাসুম। আব্দুল হালিম ওই গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে ও পেশায় পিকআপচালক ছিলেন।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ:
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বন্ধের এই ঘোষণা দেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সভা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৩০ মে সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। পরে ৭ জুন খুলে দেওয়া হয়।
বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শনে মন্ত্রী:
সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিবুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোটামুটি সিলেটের সব জায়গায়ই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমাদের সর্বশেষ রিপোর্টে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রেই আমাদের নজরদারি রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নেই আমাদের ট্যাগ অফিসার রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সবাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। পানি অল্প একটু কমলেও আবার বৃষ্টিতে আর কমেনি। গত ২৯ মে থেকে সিলেটে ১ হাজার ৪৯৫ বস্তা শুকনো খাবার, ৬৩১ টন টন জিআর চাল, ২৭ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, ৯ লাখ করে শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য উপজেলা পর্যায়ে উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ইউএনওরা বণ্টন করছেন।’
টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ২৩টি ওয়ার্ডের ৫০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ২ হাজার ৫০০ জন। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রামের ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২৩টি গ্রামে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন।
উপজেলার সব সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর-সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সব সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। আর জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে বালাগঞ্জ উপজেলায় কম মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং জকিগঞ্জেও কম মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার সব এলাকা বন্যায় প্লাবিত। যাদের ঘরবাড়িতে বেশি পানি উঠেছে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আমরা বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসহায়তা দিচ্ছি।’
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সিলেটে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের তিনটি নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেমি. ও সিলেট পয়েন্টে ৩৭ সেমি, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে ৬২ সেমি., ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০০ সেমি, শেরপুর পয়েন্টে ২১ সেমি. ও সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ২ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে সময় লাগবে। গত পাঁচ দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
ডুবেছে নগরী:
মহানগরীর উপশহর, মেন্দিবাগ, তালতলা, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপার, যতরপুর, মিরাবাজার, জামতলা, কাজির বাজার, শেখঘাট, বেতের বাজারসহ নিম্নাঞ্চল এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এসব এলাকার মানুষের বাসাবাড়িতে কারও হাঁটু সমান পানি আবার কারও বাসায় কোমর সমান পানি। অনেকের বাসায় পানি ওঠাতে চলে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কেউ কেউ আত্মীয়ের বাসাবাড়িতে উঠেছেন।
তালতলায় থাকা সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ঈদের দিন রাতে ঢুকে পড়া পানি এখনো রয়েছে স্টেশনটিতে। সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীতে পানি ঢুকলেই আমাদের অফিস ডুবে যায়। এখনো চার ফুট পানির নিচে রয়েছে আমাদের স্টেশন। তবুও আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই।’
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও ৫০ বছর বয়সী জায়েদা বেগম জানান, ‘আমি হোটেলে কাজ করি। আমার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। স্বামী বয়স্ক ও অসুস্থ। আমি কাজ করে সংসার চালাই। ঈদের দিন রাতের বৃষ্টিতে ঘরে পানি উঠেছে। এখন ঘরে গলা পানি। পরে ওই দিন ফজরের ওয়াক্তে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এখন এখানে খাবারদাবার নেই।
‘যার কারণে খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। হোটেল বন্ধ থাকায় সেখানেও যেতে পারছি না। একটি পাঁচতলার বাসায় পরিবার নিয়ে উঠেছি। শুনেছি যতরপুরের ওই দিকে একজন ত্রাণ বিতরণ করবে, সেখানে গিয়ে এই চিড়া-মুড়ি চেয়ে আনছি। তবুও তারা দিতে চাচ্ছে না। ঘরের ডেগ-বাসন সব পানির নিচে। কিসের ঈদ করব। ঈদ করছি না। আশ্রয়কেন্দ্রে গ্যাস নেই। এ কারণে রান্নাবান্নাও করতে পারছি না।’
নগরীর উপশহরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আমির হোসেন (৩৮) জানান, ‘ঈদের আগের দিন রাতের বৃষ্টিতে বাসায় পানি উঠে। এখন ঘরে কোমর পানি। আমার পরিবারে আটজন সদস্য। বাসায় কোমর পানি হওয়ায় এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। উপশহরের প্রতিটি ব্লকেই পানি। যার কারণে যারা নিচতলায় থাকেন, তারা সবাই-ই এই পানিতে আক্রান্ত।
আগের বারও পানি উঠছিল। এখন বৃষ্টি হলেই মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে, বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি। ঈদের নামাজ গিয়ে পড়তে হয়েছে হাঁটুসমান পানি ভেঙে গিয়ে। ঈদগাহে নামাজ পড়ার কথা থাকলেও প্রায় সব জায়গায়ই মানুষজন মসজিদে পড়ছেন। এবারের ঈদ আর সেই আনন্দ নিয়ে আসে নি। সারা দিন বৃষ্টি আর বাসায় পানি। খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি আমরা। সুরমা নদীও ভরা। পানি যাওয়ার জায়গা নেই আর আমাদেরও বাঁচার উপায় নেই।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। নগরীর ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে মানুষ উঠেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না খাবার, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। নগরীর বন্যা পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান।’
হাসপাতালে পানি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে পানি। তবে সবশেষ বুধবার হাসপাতালের মধ্যে থেকে পানি নেমে যায়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মঙ্গলবারে পানি বাড়ার কারণে হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে নিচতলায় থাকায় ইমার্জেন্সি বিভাগের সবকিছু ওপর তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বুধবার পানি কমে গেলে তা আবার নিচে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো হাসপাতালের রাস্তায় হাঁটু সমান পানি।’
মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু:
জকিগঞ্জে বন্যার পানিতে কলাগাছের ভেলা করে মাছ ধরতে গিয়ে আব্দুল হালিম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান জকিগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাসুম। আব্দুল হালিম ওই গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে ও পেশায় পিকআপচালক ছিলেন।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ:
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বন্ধের এই ঘোষণা দেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সভা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৩০ মে সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। পরে ৭ জুন খুলে দেওয়া হয়।
বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শনে মন্ত্রী:
সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিবুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোটামুটি সিলেটের সব জায়গায়ই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমাদের সর্বশেষ রিপোর্টে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রেই আমাদের নজরদারি রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নেই আমাদের ট্যাগ অফিসার রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সবাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। পানি অল্প একটু কমলেও আবার বৃষ্টিতে আর কমেনি। গত ২৯ মে থেকে সিলেটে ১ হাজার ৪৯৫ বস্তা শুকনো খাবার, ৬৩১ টন টন জিআর চাল, ২৭ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, ৯ লাখ করে শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য উপজেলা পর্যায়ে উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ইউএনওরা বণ্টন করছেন।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সহকারী প্রক্টর ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল হককে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে...
১ ঘণ্টা আগেগাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) পিকনিকের দোতলা বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগেবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং তাঁর জীবন নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’। নিয়োগ দেওয়া হয় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুনকে (মুনতাসীর মামুন)।
২ ঘণ্টা আগেকক্সবাজারে মাকে কুপিয়ে হত্যা করে থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন ছেলে হোসাইন মোহাম্মদ আবিদ (২৮)। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বড়ুয়া পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নেশার টাকা না পেয়ে মাকে আবিদ হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত আনোয়ারা বেগম মেরী (৫৫) ওই এলাকার নিয়াজ আহমেদের স্ত্রী
২ ঘণ্টা আগে