বাংলাদেশকে এবার কর নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে আইএমএফ

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ১০: ০০
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪, ১২: ১১

ডলার সংকটে থাকা বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার পর এবার কর আদায় নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। করের খরচ ব্যবস্থাপনা, ফাঁকফোকর ধরা, কর অবকাশ, ই-ফাইলিং এবং করসংক্রান্ত নানান বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, কেমন শিখলেন তা পরখ করতে প্রশিক্ষণার্থী সবাইকে প্রতিবেদন তৈরির অ্যাসাইনমেন্টও দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর সূত্র বলছে, ১৫-১৬ বছরের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদেরও এই শিখন-পড়ন কার্যক্রমে অংশ নিতে হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, আইএমএফ শেখানোর আড়ালে কর বিভাগের স্পর্শকাতর কোনো তথ্য নিচ্ছে কি না? কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএমএফের এই জ্ঞান মোটামুটি সাধারণ, বিশেষ কিছু নেই।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইএমএফের কাজ হলো নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলো কি না, তা দেখা। তারা কর্মকর্তাদের ক্লাস করিয়ে সময় নষ্ট করবে, এটা তো হয় না। যদি তাদের শর্তে থাকে ক্লাস করতে হবে, তাহলে তাদের আর দোষ কী? এনবিআরকেই আপত্তি জানাতে হবে। একটি স্বাধীন দেশের কর বিভাগে তারা কতটুকু হস্তক্ষেপ করবে, এটা তো বোঝার ব্যাপার।’

বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ইতিমধ্যে ছাড় করেছে আইএমএফ। এই ঋণ নিতে সংস্থাটির নানা শর্ত ও খবরদারিতে সায় দিতে হয়েছে। কর বিষয়ে এই জ্ঞান নেওয়া শর্তেরই অংশ।

সূত্র বলেছে, ‘ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার’ শিরোনামে আইএমএফের এই জ্ঞানদান কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার থেকে সহকারী কমিশনার পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের ২০ কর্মকর্তা। টানা ১০ দিনের এই কর্মসূচিতে তাঁদের শেখাচ্ছেন আইএমএফের তিন প্রতিনিধি। তাঁরা হলেন ডেভিড বার, ডেভিড ওয়েন্টওর্থ ও অরবিন্দ। এই শেখাপড়া শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সমাপনীতে এনবিআর চেয়ারম্যান ও কর বিভাগের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

এই শিক্ষা কার্যক্রমে ২০ কর্মকর্তাকে ২০২১-২২ অর্থবছরের করের ব্যয় প্রক্ষেপণ প্রতিবেদন তৈরি এবং এর ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৪-২৫ করবর্ষের জন্য আরেকটি ব্যয় প্রক্ষেপণ প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। এসব প্রতিবেদন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আইএমএফকে দিতে হবে।

প্রশিক্ষণসূচি থেকে জানা যায়, এই শিখন কার্যক্রমে এনবিআর আইএমএফ প্রতিনিধিদের ই-ফাইলিং ও সাধারণ আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে অবহিত করবে। আয়কর প্রণোদনা, ব্যবসাকে উৎসাহ দেওয়ার কৌশল ও পদক্ষেপ, আয়কর ও সামাজিক উদ্দেশ্য প্রসারে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যবসায়ীদের কর অবকাশ, রিটার্নের তথ্য কি কর বিভাগ যাচাই করে–এমন অনেক বিষয় এই কোর্সে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর বিভাগের কর্মকর্তাদের মূল কাজই হচ্ছে এসব বিষয় দেখা। এতে নতুন কিছু নেই।

কোর্সটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে মূলত কর বিভাগ সম্পর্কে একটি সার্বিক ধারণা উঠে আসবে। কর্মকর্তারা কতটুকু উপকৃত হবেন, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইএমএফ এর মাধ্যমে এনবিআরের কর আদায়, কর অবকাশ, ই-ফাইলিংসহ নানান বিষয়ে অনেক তথ্য পেয়ে যাবে। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।

এনবিআরের সাবেক আয়কর নীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয় দেখে মনে হচ্ছে তাঁদের (কর্মকর্তাদের) জন্য উপকারই হবে। তবে এনবিআর নিজেও স্বাধীনভাবে এমন প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারত। ঋণ দেওয়ার পর আইএমএফের কাছ থেকে এ বিষয়ে জ্ঞান নেওয়ার কারণে কথা উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত