ডলার স্বস্তিতে বেড়েছে শিল্প কাঁচামাল আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২: ২৩
Thumbnail image
ফাইল ছবি

ডলার-সংকটে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি কার্যক্রম ছিল স্থবির। কড়াকড়ি শর্তে শিল্প উৎপাদনেও পড়েছিল নেতিবাচক প্রভাব। তবে চলতি অর্থবছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহে আসা উল্লম্ফন পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস মিলতে শুরু করেছে। এই উন্নতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খোলার শর্ত শিথিল করে, যা এখন শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানিকে আবারও গতিময় করেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ সময়ে কাঁচামাল আমদানির জন্য ৯৮৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৯৩৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে ৫২ কোটি ২৫ লাখ ডলার।

শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এই উত্থান শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধির প্রতিফলন নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। উৎপাদন খাতের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে এই প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ২ হাজার ৮১২ কোটি মার্কিন ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য বেড়ে মাত্র ২ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮১০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানিতে। এটি দেশের শিল্প উৎপাদনে নতুন উদ্যমের ইঙ্গিত বহন করে। কাঁচামাল আমদানির এই ঊর্ধ্বগতি শিল্প খাতের সম্ভাব্য পুনর্জাগরণের এক সুশ্রুত চিত্র তুলে ধরে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশে ডলারের সংকট শুরু হয়, যা প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে স্থায়ী ছিল। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সাশ্রয়ে আমদানিতে কঠোর শর্ত আরোপ করে। তবে গত জুলাই থেকে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। দীর্ঘদিন পর ডলারের সংকটে স্বস্তি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানিতে মার্জিন-সংক্রান্ত শর্ত শিথিল করে তা গ্রাহক ও ব্যাংকের সম্পর্কের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়; যার ফলে এলসি খোলার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি সরকার পরিবর্তনের পর ব্যবসায়ীরা উৎপাদনে নতুন উদ্যমে মনোযোগ দেওয়ায় কাঁচামাল আমদানিও বেড়েছে। বর্তমানে ডলারের অভাবে এলসি খোলায় আর কোনো বাধা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ২৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ।

শিল্পোদ্যোক্তা ফজলুর রহমান বলেন, দেশে দুই বছর ধরে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট চলছে। চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি না হওয়ায় জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা অধিকাংশ শিল্পকারখানাকে পূর্ণ সক্ষমতায় চালানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষও শিল্প খাতে চ্যালেঞ্জ বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় বেশির ভাগ কোম্পানি প্রয়োজন না হলে ব্যবসা সম্প্রসারণের পথে যেতে সাহস করছে না। এর ফলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমদানি বাণিজ্য-সম্পর্কিত নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য এলসি ছাড়া চুক্তিপত্রের আওতায় ৫ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করা যাবে। চুক্তির আওতায় আমদানি তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টিং পোর্টালে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন শিথিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা জানান, বৈদেশিক উৎস থেকে বেশি করে ডলার প্রবাহের ফলে এ নিয়ে তৈরি হওয়া সংকট অনেকটা কেটেছে। এ উন্নতির কারণে পণ্য আমদানির জন্য এলসির শর্ত শিথিল করা হয়েছে, এতে রিজার্ভ বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়েছে, যা শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও খুব দ্রুত প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত