বন্যায় নষ্ট ১১ লাখ টন ধান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বাড়ছে আমদানির বোঝা 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ৫৫
Thumbnail image

দেশের পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে বন্যায় প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ে তথ্যের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। এর ফলে, দেশে যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তখন সরকারকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

চলতি বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরে উজানে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও দেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে অন্তত ৭৫ জন মানুষ মারা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ। এতে বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। 

বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছর বন্যার কারণে ধান উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন—আর এ কারণে, সরকার দ্রুতই ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগির বেসরকারি খাতকে এই চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। 

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে হিমশিম খাচ্ছে। বিগত কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্য অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

বাংলাদেশ যদি আমদানি বাড়ায় তাহলে ভারত চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা তুলে নিতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত গত মাসে সিদ্ধ চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়েছে। 

তবে কেবল ধান নয়, বন্যার কারণে অন্যান্য ফসলও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বন্যার কারণে ২ লাখ টনেরও বেশি শাকসবজি নষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সরকারি হিসাব অনুসারে, এই বন্যার কারণে দেশব্যাপী মোট কৃষি ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। 

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশে। দেশের ১৭ কোটির বেশি মানুষের চাহিদার বিপরীতে বছরে ৪ কোটি টন চাল উৎপাদন করে থাকে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ায়। 

চলতি বছরের বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে তার একটি চিত্র তুলে ধরেছে। ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষণে অনুমান করা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের বাংলাদেশে ৩৫ লাখ মানুষ প্রতিবছর নদীর কারণে সৃষ্ট বন্যার ঝুঁকিতে পড়ে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বন্যার প্রভাব ক্রমেই আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে ধান উৎপাদন বাড়ানোর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ ইফতেখারুদ্দৌলা বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বল্পমেয়াদি জাতগুলোর পাশাপাশি আরও বন্যা ও খরা সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন অপরিহার্য।’ তিনি বলেন, ‘এই টেকসই ফসল উন্নয়নের জন্য কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ 

এই কৃষিবিদ আরও বলেন, ‘বন্যা এবং খরা প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আমরা কৃষকদের পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার ধরনগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও ফলন স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত