ব্যক্তিস্বার্থে সৌদি আরামকো ও স্যামসাংকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি: অর্থ উপদেষ্টা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০১: ০১
Thumbnail image
বাংলাদেশে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান। ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ব্যক্তিস্বার্থের কারণে বড় বিনিয়োগ নিয়ে আসা সৌদি আরবের আরামকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রোববার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সৌদি আরবের আরামকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু ঢুকতে দেওয়া হয়নি। স্যামসাং চলে গেছে ভিয়েতনামে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘এনহেনসিং সৌদি-বাংলাদেশ ইকোনমিক এনগেজমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে।

বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভর্তুকি আর সস্তায় ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়ার দিন চলে গেছে। প্রতিযোগিতা করার জন্য বেসরকারি খাতকে সাহস সঞ্চয় করতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে।

শেয়ারবাজারে বড় ধরনের সংস্কার দরকার, এমনটা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কারখানা নেই, কিংবা কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু শেয়ারের লেনদেন হচ্ছে।

দেশে অর্থনৈতিক খাতে পদ্ধতিগত সংস্কার কর্মসূচি টেকসই করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত করে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি চলে যেতে চাই। কিন্তু পায়ের চিহ্ন রেখে যাব।’

এ সময় বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দোহাইলান বলেন, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগ্রহ নিয়ে সৌদি আরবের জ্বালানি খাতের বড় কোম্পানি আরামকো (প্রতিনিধিদল) ২০১৬ থেকে শুরু করে দুবার বাংলাদেশে এসেছে। কেউ তাদের স্বাগত জানায়নি।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধা এসেছে উল্লেখ করে ঢাকায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের সময় নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ঈসা বিন ইউসুফ বলেন, অনেক বড় বিনিয়োগ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে গেলে আটকে থাকত। ব্যক্তিস্বার্থে এসব প্রকল্প আটকে ফেলা হতো।

রাষ্ট্রদূত বলেন, কিছু লোক শুধু নিজের স্বার্থ দেখে, রাষ্ট্রের স্বার্থ নয়। অন্য অনেক দেশের মতো এখানেও (বাংলাদেশ) এমনটা আছে।

দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সুযোগ আছে, এমনটা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সৌদি আরব বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুধু হজ ও কর্মী নেওয়াতেই সীমিত রাখতে চায় না, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুমুখী সম্পর্ক চায়। কিন্তু এটা হওয়ার ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো আছে, তা কাটিয়ে উঠতে হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়িয়ে অর্থনীতি চাঙা করতে চাইলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ একসঙ্গে এগোতে হবে।’

সৌদি আরবে ৩০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, তাঁর দেশ শুধু আধা দক্ষ কর্মী নয়, বিভিন্ন খাতে দক্ষ কর্মী চায়। তিনি বলেন, কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোয় নজর দিতে হবে। দক্ষ কর্মী সৌদি আরব গেলে আয় দ্বিগুণ হতে পারে। আর সেখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যতে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশেও যাওয়ার সুযোগ পেতে পারে।

এ সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, অনেক বছর ধরে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে চড়া কণ্ঠে অনেক কিছু দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এগোয় না।

প্রতিবেদনটি তুলে ধরে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুম রিয়াজ বলেন, প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণের কাজের ব্যবস্থা করতে হলে বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগের বাধা কাটাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সমন্বিত উপায়ে নীতি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা দিতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটাতে হবে। অঙ্গীকার রক্ষার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. নজরুল ইসলামও বক্তব্য দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত