অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির ১৭ তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৩০ মে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জায়েদ বখ্ত। 

সভায় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডল। সভায় পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক নাফিউল হাসান, কাশেম হুমায়ূন, কেএমএন মঞ্জুরুল হক লাবলু, খোন্দকার ফজলে রশিদ, মো. শাহাদাৎ হোসেন এবং মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মুরশেদুল কবীর, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক এবং নির্বাহী পরিচালক মো. জাকির হোসেন চৌধুরী, অগ্রণী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদা বেগম, তাহমিনা আখতার, কাজী আব্দুর রহমান ও মো. আবুল বাশারসহ, মহাব্যবস্থাপকবৃন্দ ও নিরীক্ষা ফার্মের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। 

ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখ্ত ২০২৩ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। তিনি ব্যাংকের সব ব্যবসায়িক ও আর্থিক সূচকে অগ্রগতি ও সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডল অগ্রণী ব্যাংকের সব ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আগামীতে ব্যাংকটি সকল আর্থিক সূচকে অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করে নিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মুরশেদুল কবীর ২০২৩ সালে ব্যাংকের সাফল্যগাথা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও আর্থিক সূচকগুলোর অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য দেন। ব্যাংকের আমানত, ঋণ ও অগ্রিম, পরিচালন মুনাফা, আমদানি রপ্তানি, রেমিট্যান্স, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়সহ বিভিন্ন সেবা খাতে ব্যাংকের ভূমিকা উল্লেখ করে সমাজ তথা জাতীয় অর্থনীতিতে রাষ্ট্র মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের অবদান ও সাফল্যের বিশদ বর্ণনা দেন। 

মুরশেদুল কবীর জানান, ২০২৩ সালে ব্যাংকের ঋণ এবং অগ্রিম ২০২২ সালের ৭২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা থেকে ৭৫ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা ২ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বা ৪ পারসেন্ট বেড়েছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত ৭৭ পারসেন্ট। চিত্তাকর্ষকভাবে ২০২৩ সালে ব্যাংক ১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১৩ কোটি টাকা বা ৪৩ পারসেন্ট বেশি। ২০২৩ সালে নিট সুদ আয়ে অগ্রণী ব্যাংক বেশ উন্নতি করেছে। ২০২৩ সালে নিট সুদ আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা আগের বছরে ছিল ৪৩২ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ২৫ পারসেন্ট। সামগ্রিকভাবে, ২০২৩ সালে ব্যাংকের সুদ উপার্জনক্ষম সম্পদ ৮০ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা যা ২০২২ সালে ছিল ৭৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা প্রবৃদ্ধির হার ৪ পারসেন্ট। 

অন্যান্য বছরের ন্যায় ২০২৩ সালেও রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জনে শীর্ষস্থান বজায় রেখেছে। অগ্রণী ব্যাংক ২০২৩ সালে ১১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জন করেছে, যা রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠার পূর্বেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং বিশ্বব্যাপী চলমান মন্দা অবস্থার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দা অবস্থার কারণে ঋণগুলোর কিস্তি গ্রাহক কর্তৃক পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কারণে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ প্রত্যাশিত সীমায় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তথাপি, ব্যাংক ২০২৩ সালে শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান প্রদর্শন করেছে। অগ্রণী ব্যাংক ২০২৩ সালে শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে নগদ ৩৮৯ কোটি সহ মোট ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করেছে যা ২০২২ সালের তুলনায় ৬৪২ কোটি টাকা বা ৫৮ পারসেন্ট বেশি।