Ajker Patrika

চিপ শিল্পে আধিপত্য নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষোভ, মান ভাঙাতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি তাইওয়ানের

চিপ শিল্পেও রাজত্ব করতে চান ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
চিপ শিল্পেও রাজত্ব করতে চান ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

চিপ শিল্পে আধিপত্য নিয়ে তাইওয়ানকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশ জটিল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তাইওয়ানের সমালোচনা করে বলেন, সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদন শিল্প যুক্তরাষ্ট্রের স্থানটি তাইওয়ান কেড়ে নিয়েছে। তিনি এই অবস্থান ফিরে পেতে চান। ট্রাম্পের এই বক্তব্য তাইওয়ান প্রেসিডেন্ট লাই চিং-টের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।

আজ শুক্রবার প্রেসিডেন্ট লাই বলেন, চিপ শিল্প নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্বেগ তিনি বুঝতে পারছেন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। দেশটি থেকে আরও বেশি পণ্য কিনতে এবং সেখানে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের চাওয়া অনুযায়ী প্রতিরক্ষা ব্যয়ও বাড়াতেও রাজি তিনি।

প্রেসিডেন্টের দপ্তরে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় লাই বলেন, বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ চেইন একটি ‘ইকোসিস্টেম’-এর মতো, যেখানে বিভিন্ন দেশের সঠিক অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লাই বলেন, ‘আমরা অবশ্যই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্বেগ সম্পর্কে সচেতন। তাইওয়ান সরকার সেমিকন্ডাক্টর শিল্পনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং ভাল কৌশল তৈরি করবে। তারপর ভালো প্রস্তাবনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও আলোচনা করব।’

বিশ্বের সবচেয়ে বড় চুক্তিভিত্তিক চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টিএসএমএসি তাইওয়ানের। এই প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ও এনভিডিয়ার মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী এবং উদীয়মান এআই শিল্পে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আছে।

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর তালিকায় শুরুর দিকে তাইওয়ানের অবস্থান। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলনামূলকভাবে কম পণ্য আমদানি করে তাইওয়ান। ২০২৪ সালে তাইওয়ানের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৮৩ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১১১.৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। এর প্রধান কারণ ছিল সেমিকন্ডাক্টর চিপসহ উচ্চ প্রযুক্তির পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো (যেমন অ্যাপল, এনভিডিয়া) তাইওয়ান থেকে অনেক বেশি চিপ ও প্রযুক্তিপণ্য কিনেছে।

প্রেসিডেন্ট লাই বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক বিনিয়োগ গন্তব্য এবং তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বাণিজ্য সঙ্গী।

ট্রাম্প এর আগে তাইওয়ানকে সমালোচনা করে বলেছিলেন, তাইওয়ান প্রতিরক্ষা খাতে যথেষ্ট ব্যয় করছে না। যে কারণে তারা চীনের হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। চীন দেশটিকে নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করছে।

প্রেসিডেন্ট লাই বলেন, ‘তাইওয়ানকে নিজেদের আত্মরক্ষা করার সিদ্ধান্ত প্রদর্শন করতে হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, তাঁর সরকার এই বছর একটি বিশেষ বাজেট প্রস্তাব করতে কাজ করছে যাতে প্রতিরক্ষা ব্যয় ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হবে।

চিপ শিল্পে তাইওয়ান দীর্ঘদিন ধরে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ছে তাইওয়ানের প্রযুক্তি খাতেও। চীনের সঙ্গে নিজ দেশেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে দেশটিকে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা না পাওয়া তাদের জন্য বেশ দুশ্চিন্তা বয়ে আনবে।

মার্কিন প্রশাসনের চীনবিরোধী নীতিগুলো তাইওয়ানের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনলেও তাইওয়ানের চিপ শিল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, চীনকে মোকাবিলায় স্থানীয় চিপ নির্মাতাদের উন্নত প্রযুক্তির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

মার্কিন ট্রেডফোর্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী পুরনো প্রযুক্তির চিপ উৎপাদনের মধ্যে চীনের অংশ ছিল ৩৪ শতাংশ এবং তাইওয়ানের অংশ ছিল ৪৩ শতাংশ। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদন শুরু করা ৯৭টি নতুন সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরির ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্টের মধ্যে ৫৭টিই চীনের। ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের শেয়ার তাইওয়ানের চেয়ে বেশি হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত