Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রে চিংড়ি রপ্তানি: সুবিধাজনক অবস্থানে ইকুয়েডর, ভারতীয় চাষিদের মাথায় হাত

অনলাইন ডেস্ক
ট্রাম্পের আকস্মিক শুল্কে বিপাকে ভারতের চিংড়ি চাষিরা। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্পের আকস্মিক শুল্কে বিপাকে ভারতের চিংড়ি চাষিরা। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের ঝড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিংড়ি সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে। বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ ভারতের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, হিমায়িত এই সুস্বাদু খাদ্য বোঝাই ২ হাজার কন্টেইনার ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

তবে, ভারতের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি হওয়ায় এবং কম শুল্কের সুবিধা থাকায় ইকুয়েডর লাভবান হতে পারে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকেরা। জ্বালানি তেলের পরেই চিংড়ি ইকুয়েডরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের জুলাই মাসের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারতের চিংড়ি শিল্পের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক চাপানো হতে পারে। এর ফলে ৭ বিলিয়ন ডলারের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি বাজার হুমকির মুখে পড়বে, যা মূলত ওয়ালমার্ট এবং ক্রোগার–এর মতো মার্কিন সুপারমার্কেট চেইনের ওপর নির্ভরশীল।

এই অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারতের চিংড়ি চাষিরা চাহিদা কমে যাওয়ায় হতাশ। শুল্ক আরোপের পর থেকে রপ্তানিকারকেরা অফার মূল্য ১০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছেন।

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশের অ্যাকুয়াকালচার পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে ৬৩ বছর বয়সী এসভিএল পাথী রাজু রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা বিশাল ক্ষতির শিকার হচ্ছি। আমাদের দামের সমস্যা কে সমাধান করবে আমরা জানি না।’ রাজু, এই রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রাম গানাপাভারামের কয়েকটি পরিবারের মধ্যে একজন, যারা রপ্তানি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে।

অনেকেই চিংড়ির খাবারের উচ্চ মূল্য এবং জমির ইজারা মূল্য বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা মোকাবিলা করছেন।

৬০ বছর বয়সী আরেক চাষি উপ্পালাপতি নাগারাজু বলেন, ‘আমি জানি না, কীভাবে দাম ধরে রাখব।’ তিনি আরও বলেন, শুল্কের ব্যাপারটা নিয়ে কিছুই জানতাম না। যদি আমি জানতাম, তবে চাষই করতাম না!’

শুল্কের খবর আসার মাত্র ১৫ দিন আগে চিংড়ি চাষ শুরু করার জন্য এখন অনুতপ্ত উপ্পালাপতি নাগারাজু। যদিও ট্রাম্প ২৬ শতাংশ শুল্কের হার জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন, তবে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক নিয়েও রপ্তানিকারকেরা শঙ্কিত।

গত বছর ভারত ১৮ লাখ টন সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি করে ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ছিল ভারতের প্রধান বাজার। এর মধ্যে চিংড়ি ছিল প্রধান। অন্ধ্র প্রদেশের ৩ লাখ চাষি এই শিল্পের প্রধান যোগানদাতা। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ভারত যে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি করেছে তার ৯২ শতাংশই গেছে এই রাজ্য থেকে।

এই শিল্পের প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে রাজ্য সরকারের একটি প্যানেলে যুক্ত হয়েছেন, যারা শুল্কের প্রভাব মূল্যায়ন করছেন এবং চীনসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় খুঁজছেন।

তবে রপ্তানিকারকেরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পিত ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক হার ইকুয়েডরকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেবে। বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কাছে অবস্থিত এবং চিংড়ির জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার।

ইকুয়েডরের উৎপাদকেরা ২০২৪ সালে ১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের চিংড়ি রপ্তানি করেছেন। কিন্তু এখন অতটা আশাবাদী হতে পারছেন না। ইকুয়েডরের ন্যাশনাল চেম্বার অব অ্যাকুয়াকালচারের সভাপতি জোসে আন্তোনিও কাম্পোসানো বলেন, মার্কিন বাজারে প্রক্রিয়াজাত চিংড়ির চাহিদা বাড়লেও, ইকুয়েডরের এখনও ভারতের উৎপাদন প্রতিস্থাপনের সক্ষমতা নেই। কাম্পোসানো আরও বলেন, ভারত চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অন্যান্য বাজারে নজর দিতে বাধ্য হবে। সেসব বাজারে ইকুয়েডরও চিংড়ি বিক্রি করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য বাজারে ইকুয়েডরের উৎপাদকদের আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে।

প্রতি বছর হাজার হাজার টন হিমায়িত চিংড়ি অন্ধ্র প্রদেশ থেকে নিউইয়র্ক, হিউস্টন এবং মিয়ামির বন্দরগুলোতে খালাস করা হয়। এসব বন্দরে পৌঁছাতে সাধারণত ৪০ দিন সময় লাগে। এরপর সেগুলো রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন চেইন শপে যায়।

ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারক গ্রুপের প্রধান জি. পবন কুমার বলেন, তিনি হিমায়িত পণ্য বোঝাই সেই শিপিং কন্টেইনারগুলো নিয়ে চিন্তিত, যেগুলো আগেই বুক করা হয়েছিল। শুল্কের কারণে মার্কিন ক্রেতারা এখন সেসব চালানের দাম পুনর্নির্ধারণ করতে চাচ্ছেন।

ভারতের সি-ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কুমার বলেন, ‘১০ শতাংশ অনেক বেশি, আমরা রপ্তানিকারকেরা ৩ থেকে ৪ শতাংশ মার্জিনে কাজ করি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিংড়ি রপ্তানিকারক বলেন, জুলাই মাসে যদি ২৬ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়, তবে ভারতীয় শিল্পের খেলা শেষ!

তিনি জানান, তিনি মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন যারা ১০ শতাংশ শুল্কের পুরোটা বহন করতে চান না। ইতিমধ্যে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত ১৩০টি চিংড়ি বোঝাই কন্টেইনারের পণ্য বিক্রি করে কোনো লাভ হবে না বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালমার্টের প্রধান মার্চেন্ডাইজিং অফিসার ল্যাট্রিজ ওয়াটকিন্স বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে সরবরাহকারীদের সাথে দীর্ঘস্থায়ী এবং গভীর সম্পর্ক তৈরি করেছি। আশা করি ভবিষ্যতে এটি অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত