সখীপুরে থামছে না বাল্যবিবাহ

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ২৯

কনে দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তার বিয়ের আয়োজন করে পরিবার। স্থানীয় এক ইউপি সদস্য বিয়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। খবর পেয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলম বিয়েটি বন্ধ করে দেন। সাময়িক বন্ধ রাখা হয় সব আয়োজন; কিন্তু কিছুদিন পরই ওই শিক্ষার্থীকে গোপনে বিয়ে দেওয়া হয়।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে কন্যাশিশুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের পরও নীরবে-নিভৃতে হচ্ছে একের পর এক বাল্যবিবাহ। এসব ঘটনা গোপনে সংঘটিত হয় বলে বাল্যবিবাহের হিসাব নেই সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থার কাছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করলেও পুরোপুরি থামানো যায়নি। এর কুফল সম্পর্কে অভিভাবকদেরই প্রথম সচেতন হতে হবে। বাড়াতে হবে সামাজিক সচেতনতাও।

মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফিরোজা আক্তার জানান, চলতি বছর তাঁরা ২৫ থেকে ৩০টি বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারযোগ্য মোবাইল ফোন শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে দেখা যাচ্ছে। ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ফলে অল্প বয়সেই প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা। তাই অনেক সময় অভিভাবকেরা নিরুপায় হয়েও বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হন। এই কর্মকর্তা মোবাইল ফোন আসক্তিকে মাদকের চেয়েও ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি প্রোগ্রামটি চালু নেই। তবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম দিন ৪১ জন মেয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা জানান, ৪১ জন মেয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ জনের বাল্যবিবাহ হয়েছে এবং ২ জন অসুস্থ। তাঁরা আরও জানান, বর্তমানে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে বাল্যবিবাহ হচ্ছে না। অধিকাংশ বাল্যবিবাহ ছেলে-মেয়ের ইচ্ছাতেই হচ্ছে। অনেক সময় ছেলেমেয়েদের হুমকিতেও অভিভাবক বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হন। প্রশাসন দুই-একটি বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে দিলেও অনেক ক্ষেত্রে রাতের বেলায় শেষ করা হয় বিয়ের আয়োজন।

বাল্যবিবাহের শিকার গড়গোবিন্দপুর উদয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর চাচা বলেন, ‘গোপনে বিয়ে হয়েছে। ওই সময় ছেলের বাবা বলেছিলেন, আমরা মেয়েকে পড়াশোনা করাব। এখন মেয়েটির স্বামী পড়াতে চায় না। এ কারণেই ওই ছাত্রী গত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।’

এদিকে উপজেলার নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজি) সঙ্গে কথা হলে তিনি বাল্যবিবাহ রেজিস্ট্রি করেন না বলে জানান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজশিক্ষক জানান, আইনি ঝামেলা এড়াতে অনেক কাজি বাল্যবিবাহের তথ্য মূল রেজিস্ট্রি খাতায় না তোলে পৃথক খাতায় লিখে রাখেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত