মধুপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ-দুর্নীতিতে স্কুলশিক্ষকেরা অতিষ্ঠ

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ০২

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, এই কর্মকর্তার চাহিদা পূরণ না করলে লাঞ্ছনার শিকারও হতে হয়। এতে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষকেরা তাঁর বদলির দাবি জানিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ভাষ্য, শিক্ষকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

উপজেলার শিক্ষকেরা জানান, মধুপুরে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩৭টি বিদ্যালয়, ১৬টি মাদ্রাসা ও ৯টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৫০ জনের অধিক শিক্ষক-কর্মচারীর অনেকেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তিনি ২০১৮ সাল থেকে এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বহুবার অভিযোগ উঠলেও তিনি কিছু নেতা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হাত করে একই কর্মস্থলে রয়েছেন।

শিক্ষকদের সূত্রে জানা গেছে, ২৯ জানুয়ারি মধুপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি কার্যালয়ে অন্তত ২৩ জন প্রধান শিক্ষক অনির্ধারিত এক সভা করেন। এতে শিক্ষা কর্মকর্তা রশিদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা হয়। সেখানে থাকা আটজন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জানান, শিক্ষক কর্মকর্তা রশিদ ঘুষ নেওয়ায় লাগামহীন হয়ে পড়েছেন। তিনি সরেজমিন তদন্তের জন্য ২০ হাজার থেকে ১ লাখ এবং নিয়োগসংক্রান্ত কাজে ২০ হাজার টাকা নেন। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৭ শিক্ষকের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। উচ্চতর স্কেল পাওয়া শিক্ষকদের কাছ থেকেও দফায় দফায় টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিনা মূল্যের বই এবং আন্তস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার টাকা নিয়েছেন।

এক নারী শিক্ষক জানান, তাঁর এমপিওর কাজ সমাধান করতে চার দফায় টাকা দিতে হয়েছে। আরেক শিক্ষক বলেন, তাঁকে ২০২২ সালে নবম গ্রেড থেকে অষ্টম গ্রেড দেয় মন্ত্রণালয়। উচ্চতর স্কেলের কাগজপত্র অগ্রগতির জন্য তিনি আলোচনা সাপেক্ষে ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন রশিদকে। কিন্তু কাজ না হলে তিনি আরও টাকা দাবি করেন এবং না দিলে দুর্ব্যবহার করেন। ওই শিক্ষক এখনো নিম্নতম স্কেলেই বেতন নিচ্ছেন।

শিক্ষক সমিতির সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে কর্মকর্তার কার্যালয়ে শিক্ষকেরা লাঞ্ছিত-অপমানিত হবেন, সেই কর্মকর্তার মধুপুরে প্রয়োজন নেই। ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে না গেলে তাঁর বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এ সভার দুই দিন পরই দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সূত্র জানায়, সেখানে শিক্ষা কর্মকর্তা রশিদ উপস্থিত হয়ে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সাত দিনের মধ্যে অন্যত্র বদলি হয়ে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা রশিদ বলেন, ‘শিক্ষকদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমার বদলির সময় হয়েছে। শিগগির বদলি হয়ে যাব।’ যোগাযোগ করা হলে টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘আমার কাছে লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ আসেনি। তারপরও বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত