সুপ্রিয় সিকদার
সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপন এবং এসবের সূত্র ধরে চাকচিক্যময় এক দুনিয়া হিসেবেই পরিচিত বিনোদন জগৎ। সবার একটা আগ্রহ থাকে। এবার সেই জন-আগ্রহের একটা বড় অংশই মিটিয়েছে পর্দা নয়, বাস্তব জগৎ। বাস্তবের এই জগৎ কেবলই সাসপেন্স, ড্রামা ও ক্লাইমেক্স উপহার দিয়েছে। বছর শেষেও মধুর সমাপনের দেখা নেই।
বছরের প্রথম ছয় মাস বেশ ঠান্ডাই ছিল দেশের বিনোদন জগৎ। তবে হাল আমলের নায়িকা পরীমণির এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে নড়েচড়ে বসেন সবাই; সবাই বলতে পুরো বাংলাদেশ। দিনটি ছিল ১৩ জুন; রাত ৮টার একটু আগে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন পরী। স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে পরী লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
এরপর আর আলোচনা থেমে থাকার কোনো সুযোগ নেই। হয়ওনি তেমন। নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরীমণির ওই স্ট্যাটাস রীতিমতো ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
১৩ জুন রাতেই এক সংবাদ সম্মেলনে পরীমণি বলেন, ‘ঘটনার মূল হোতা নাসির ইউ মাহমুদ (নাসিরউদ্দিন আহমেদ) নামের এক ব্যক্তি। উত্তরা বোট ক্লাব নামে এক ক্লাবের সাবেক সভাপতি তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী। ঘটনার দিন রাত ১২টার পর পরিচিতজনদের নিয়ে ওই ক্লাবে যান পরীমণি। ক্লাবটি আশুলিয়ার বিরুলিয়ায়। সেদিন চারজন মদ্যপ ব্যক্তি পরীমণিকে শারীরিক নির্যাতন করেন। চড়থাপ্পড় মারেন। গায়ে আঘাত করেন। একপর্যায়ে একজন তাঁকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে।’ একই সঙ্গে জানান, গত চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের বন্ধুদের কাউকে পাশে পাননি তিনি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে অভিযোগ নিয়ে গেলেও কোনো প্রতিকার পাননি। তাই বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।
বিষয়টি পরদিনই জাতীয় সংসদ পর্যন্ত গড়ায়। বিনোদনজগতের হইচই তো আছেই। অনেকেই পরীমণির পাশে এসে দাঁড়ান, বিচার চান।
পরে ১৪ জুন নাসির ইউ মাহমুদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন পরীমণি। মামলায় নাসির ছাড়াও পরীমণির বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করা হয়। ওই দিনই নাসির, অমিসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন পরী। জানান, তিনি সহজে দমবেন না। পরদিন প্রথমবারের মতো এ ঘটনায় ‘তীব্র নিন্দা’ জানায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। ওই দিনই আদালত পরীমণির মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১৬ জুন পরীর বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা করেন সাভার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন।
পরীমণি নিয়ে এই হুলুস্থুলের মধ্যেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশির এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উঠে আসে নিহত মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির কথা। ভাইরাল হয় এই স্ট্যাটাসও।
নতুন বাঁক
পরীমণি নিয়ে জোর আলোচনার মধ্যেই বদলাতে শুরু করে দৃশ্যপট। অল কমিউনিটি ক্লাব লিমিটেডের পক্ষ থেকে ১৭ জুন জানানো হয়, ৭ জুন গভীর রাতে গুলশানের ওই ক্লাবে ভাঙচুর ও বার-কর্মীদের মারধর করেছেন পরীমণি। এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন পরীমণি। এদিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাল্টা অভিযোগ তুলে পরীমণি বলেন, মূল ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করতেই এত দিন পর এসব অভিযোগ আসছে। এর মধ্যেই ২১ জুন বনানী ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে পরীমণির বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজসংবলিত ভিডিও। পরদিনই খবর আসে—পরীর করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়নি আসামি নাসির-অমিসহ বাকিদের। ডিবির এসআই মানিক কুমার শিকদারের করা মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদের। উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ২৩ জুন পরীমণির মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন পুলিশ পরিদর্শক কামরুল ইসলাম। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে আসামিরা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন।
নানা জল্পনা ঘুরে বেড়াতে থাকে। পরীমণির করা অভিযোগ ও আসামিদের বয়ান মিলিয়ে একটা ধোঁয়াশা শুরু হয়। বরাবরের মতোই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলতে থাকে। এর মধ্যেই ২৯ জুন নাসিরউদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় পরীমণির মামলায় জামিন পান। ৩০ জুন মাদক মামলায়ও জামিন পেলে নাসির উদ্দিন মাহমুদ মুক্ত হন। ৩ জুলাই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজেকেই ‘ভুক্তভোগী’ দাবি করেন নাসির।
পরীমণির সঙ্গে আরও চরিত্র
পরীমণি-কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই মঞ্চে হাজির হন একা। ৩১ জুলাই গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে আটক করা হয় ঢাকাই ছবির নায়িকা একাকে। ১ আগস্ট গৃহকর্মী নির্যাতন ও মাদক রাখার অভিযোগে তাঁর নামে দুটি মামলা করে পুলিশ। ঘটনাটি বেশি দূর গড়ায়নি। ২৪ আগস্টই জামিনে মুক্তি পান একা।
পরীমণি থেকে মানুষ যখন একার দিকে তাকাবেন, তখনই মঞ্চে এসে জায়গা করে নেন পিয়াসা।
রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে ২ আগস্ট আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। অনেকটা নিয়ম মেনেই তাঁর বাসা থেকেও উদ্ধার করা হয় বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসা। পিয়াসার দেওয়া তথ্যে একই দিন মোহাম্মদপুরে একটি বাসা থেকে ইয়াবাসহ মডেল মৌ আক্তারকে আটক করে ডিবি। বিনোদনজগতে শুরু হয় গ্রেপ্তার আতঙ্ক। নানা রকম কথা উঠে আসে। কেউ একে ষড়যন্ত্র, কেউ আটক মডেলদের ‘মডেল’ বা ‘শিল্পী’ বলতেই নারাজ, অনেকে আবার পুরো বিষয়টিকেই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব হিসেবে বর্ণনা করে নানামুখী বক্তব্য দেন।
১ অক্টোবর জামিন পান মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। রাজধানীর ভাটারা ও খিলক্ষেত থানায় মাদকদ্রব্য আইনে করা পৃথক দুই মামলায় তাঁকে জামিন দেন আদালত। তবে গুলশান থানার মামলায় জামিন নামঞ্জুর হওয়ার কারামুক্তি মেলেনি।
আবার পরীমণি
দুই মডেল গ্রেপ্তারের এক দিন পর ৪ আগস্ট হঠাৎ ফেসবুক লাইভে আসেন পরীমণি। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেন, তাঁর বাসায় হামলা চালিয়েছে কেউ। হন্তদন্ত হয়ে সাংবাদিকেরা যখন পরীমণির বাসার নিচে তখন জানা গেল, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগে’ পরীমণির বাসায় অভিযান চালাচ্ছে র্যাব। দীর্ঘ সময়ের অভিযান শেষে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি), আইস ও বিপুল পরিমাণ মদের বোতলসহ পরীমণিকে আটক করে র্যাব। নিয়ে যাওয়া হয় র্যাব সদর দপ্তরে। আটক করা হয় আশরাফুল ইসলাম দীপুকেও।
এই অভিযান চলার সময়ই র্যাবের আরেকটি দল অভিযান চালায় রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বনানীর বাসায়। বিপুল পরিমাণ মদ, মাদক, বিকৃত যৌনাচারের সরঞ্জামসহ আটক করা হয় রাজকে। তাঁকেও নেওয়া হয় র্যাব সদর দপ্তরে। রাজের সহযোগী সবুজ আলীকে আটক করে র্যাব। ৫ আগস্ট পরী ও রাজকে বনানী থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। পাঠানো হয় আদালতে। আদালত পরীমণি ও রাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চয়নিকা চৌধুরীর প্রবেশ
পরীমণির প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সর্বক্ষণ তাঁর পাশে ছিলেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। ৬ আগস্ট আবারও দৃশ্যে প্রবেশ করেন তিনি। ওই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর পান্থপথ থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। একই রাতে পরীমণির সহকর্মী কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমিকেও আটক করে ডিবি। অবশ্য ওই দিন মধ্যরাতেই পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয় চয়নিকা চৌধুরীকে।
পরীকে নিয়ে আবার বিতর্ক
৭ আগস্ট পরীমণি-কাণ্ডে নাম জড়ায় খোদ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার। দুজনের একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ পায়। বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরীর গাড়িচালক নাজির হোসেন জানান, বোট ক্লাব মামলার তদন্ত করতে গিয়েই পরীমণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। একই দিন পরীমণি ও একার সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি।
এদিকে ডিবি কর্মকর্তার সঙ্গে পরীর সখ্যের বিষয়টি প্রকাশের পর অধিকতর তদন্তের জন্য ৭ আগস্ট পরীমণি, প্রযোজক রাজ, দুই মডেল পিয়াসা ও মৌকে সিআইডি হেফাজতে নেওয়া হয়। এত দিন পর্দায় দেখে অভ্যস্ত মডেল, নায়িকা বিনোদনজগতের কলাকুশলীদের আদালত প্রাঙ্গণে দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে মানুষ। এর মধ্যেই ১১ আগস্ট আদালত পিয়াসা ও পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকে কারাগারে পাঠান।
জামিন নিয়ে জল ঘোলা
১৩ আগস্ট মাদক মামলায় পরীমণি ও তাঁর সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান আদালত। এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। এর মধ্যেই ১৮ আগস্ট ফের পরীমণিকে রিমান্ডে চায় সিআইডি। ১৯ আগস্ট পরীকে তৃতীয় দফায় এক দিনের রিমান্ডে পাঠান। ২২ আগস্ট আবার জামিন আবেদন করেন পরীমণির আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান। ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে এর শুনানি হবে বলে জানানো হয়। আলোচনা ওঠে—জামিন নিয়ে অহেতুক জল ঘোলা করা হচ্ছে।
এই আলোচনার মধ্যেই ২৬ আগস্ট পরীমণির জামিন আবেদন ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ২৯ আগস্ট মাদক মামলায় পরীমণিকে তিন দফা রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন। ৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পরীমণির জামিন মঞ্জুর করেন। ১ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান পরীমণি।
মুক্ত বেশে পরীমণি
টানা ২৬ দিন বন্দিজীবন শেষে কারাগার থেকে বের হন পরীমণি। সাদা টি-শার্ট, মাথায় সাদা ওড়না, চোখে কালো রোদচশমা পরিহিত পরীই ছিলেন এদিনের সংবাদমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রে। আর তাঁর হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ নিয়ে তো রীতিমতো শুরু হয়ে যায় গবেষণা।
একই দিন পরীমণির মামলায় রিমান্ডের অপব্যবহার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ‘পরীমণির মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ডের প্রয়োজন ছিল না। এটা তো সভ্য সমাজে হতে পারে না।’
২ সেপ্টেম্বর পরীমণি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বলেন, ‘অপরাধ করিনি বলেই এখনো মানসিকভাবে শক্ত আছি।’ এর ঠিক ২২ দিন পর ২৪ সেপ্টেম্বর নিজের কাজ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন পরীমণি। বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে ‘প্রীতিলতা’ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয়ের ঘোষণা দেন পরীমণি। সিনেমাটি নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা বলেন তিনি।
রিমান্ড প্রশ্নে বিচারককে তলব
২ সেপ্টেম্বর পরীমণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডের যৌক্তিকতা নিয়ে নিম্ন আদালতের দুই বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে (কেসডকেট সিডিসহ) সশরীরে উপস্থিত হতে বলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। এদিকে নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে ৬ সেপ্টেম্বর একটি স্ট্যাটাস দেন পরী। একই দিন পরীমণির ধর্ষণচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
৮ সেপ্টেম্বর এ-সম্পর্কিত পাঁচ পৃষ্ঠার লিখিত আদেশে হাইকোর্ট বলেন, পুলিশ বিভাগের বোঝা উচিত, মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আইনি ভিত্তি ছাড়া পুলিশ রিমান্ড চাইতে পারে না। অথচ এ মামলায় পুলিশ তাঁকে তিনবার রিমান্ডে নিয়েছে, যা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডে পাঠানো নিম্ন আদালতের দুই বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম ১৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। তাঁরা বলেন, ‘এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল।’ ১৬ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত জানিয়ে দেন, তাঁরা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। ২৯ সেপ্টেম্বর এ-সম্পর্কিত আদেশে হাইকোর্ট ২৪ অক্টোবরের মধ্যে তাঁদের ফের ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্ধারিত দিনে ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন দুই বিচারক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের এক সপ্তাহের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ৩১ অক্টোবর আবারও নিঃশর্ত ক্ষমা চান ঢাকা মহানগর আদালতের দুই বিচারক ও মাদক মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তা। এ-সম্পর্কিত আদেশ হাইকোর্ট ২৫ নভেম্বর দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। হাইকোর্ট জানান, শীতকালীন অবকাশ শেষে নতুন বছরের জানুয়ারিতেই এ-সম্পর্কিত আদেশ দেওয়া হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা।
শেষ কিন্তু শেষ নয়
২৮ সেপ্টেম্বর মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার সময় পরীমণির ব্যবহৃত গাড়ি, মোবাইল, ল্যাপটপসহ জব্দ করা ১৬ আলামত ফেরতের নির্দেশ দেন আদালত। ৪ অক্টোবর মাদক মামলায় পরীমণিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় সিআইডি, যা আমলে নেওয়ার শুনানির জন্য ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আদালত। ১০ অক্টোবর স্থায়ী জামিন নিতে আদালতে গেলেও পরী পান অস্থায়ী জামিন। ২৬ অক্টোবর মাদক মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পান পরীমণি।
জন্মদিন উদ্যাপন এবং এর আয়োজনসহ নানা কারণে ১৩ অক্টোবর আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রে আসেন পরীমণি। তারপর ১৫ নভেম্বর মাদক মামলায় পরীমণিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। একই সঙ্গে চার্জ গঠনের জন্য ১৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। একই দিন মডেল তিন্নি হত্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা ঘোষণা করা হয়নি। তিন্নির বাবা ও চাচা তাঁদের সাক্ষ্য পুনরায় গ্রহণের আবেদন করায় রায় পিছিয়ে যায়।
এদিকে ১ ডিসেম্বর মারধর ও যৌন নিপীড়নের মামলায় তিনজনকে আসামি করে পুলিশ যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতে এজাহারের ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ আসামিদের নাম না আসায় আদালতে আপত্তি জানান পরীমণি। এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন নাসির ও অমি। তবে মামলার অপর আসামি শহিদুল আলম পলাতক। ১৩ ডিসেম্বর আদালত পরীমণির আপত্তি নাকচ করে দেন।
১৪ ডিসেম্বর পরীমণির বিরুদ্ধে করা মাদক মামলার চার্জ গঠনের শুনানি কথা থাকলেও তা পেছানো হয়েছে। নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি। পরীমণি ‘অসুস্থতার কারণে রাস্তা থেকেই ফিরে যাওয়ায়’ অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানো হয়।
টিভি তারকাদের মঞ্চপ্রবেশ
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে ‘নেতিবাচক, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর’ ধারণা এবং শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে এবার টিভির জনপ্রিয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। বশির আল হোসাইন নামের এক প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মীর করা এ-সম্পর্কিত দুই মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এর একটি ‘ঘটনা সত্য’ নামের একটি নাটক নিয়ে, যা চ্যানেল আইয়ের ঈদুল আজহার আয়োজনে ২৩ জুলাই প্রচার হয়েছিল। আসামি করা হয় চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, নাটকের চিত্রনাট্যকার মঈনুল সানু, পরিচালক রুবেল হাসান, অভিনেতা আফরান নিশো ও অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরীকে।
অন্য মামলা করা হয় চ্যানেল আইয়ের টক শো ‘টু দ্য পয়েন্ট’-এর ১১ জুলাইয়ের পর্ব নিয়ে, যেখানে এক আলোচকের কথায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে ‘নেতিবাচক ধারণা’র প্রকাশ ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ মামলায় আসামি করা হয় ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী জাহিদ নেওয়াজ খান, প্রযোজক রাজু আলিম, উপস্থাপক সোমা ইসলাম ও আলোচক ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে।
আলোচনায় সংগীত তারকারা
প্রায় পুরো বছর চলচ্চিত্র ও টিভি তারকারাই সংবাদমাধ্যম মাতিয়ে রেখেছিলেন। এবার সে মঞ্চে প্রবেশ করেন দেশের শীর্ষ ব্যান্ডতারকা নগরবাউল জেমস। ১৯ সেপ্টেম্বর গান কপিরাইটের অভিযোগ নিয়ে ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলা করতে যান জেমস। সবাই তখন সচকিত। যদিও সেদিন আদালতের পরামর্শে মামলা না করেই ফিরে যান জেমস। কিন্তু ১০ নভেম্বর বাংলালিংকের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের মামলা করেন তিনি। এবার মামলাটি গ্রহণ করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত।
এই রেশ কাটতে না কাটতেই ১৪ নভেম্বর আদালত সংগীতশিল্পী মিলার বিরুদ্ধে সাবেক স্বামীকে অ্যাসিড ছুড়ে মারা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া জিন্না এ আদেশ দেন।
শেষ পাতে মুরাদ হাসান
বছরের শেষ মাস ৬ ডিসেম্বর সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। এদিনই চিত্রনায়ক ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নেয় ডিবি। একই দিন পবিত্র ওমরাহ পালন করতে স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরবে অবস্থান করা মাহিয়া মাহি এক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মাহি বলেন, ‘আমি সেদিনও খুব বিব্রত ছিলাম। নিজের আত্মসম্মানবোধে কতটুকু আঘাত লেগেছে, তা শুধু আমি আর আমার আল্লাহ জানেন। আজকেও আমি ভীষণভাবে বিব্রত।’
৭ ডিসেম্বর ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় ঢালিউডের নায়ক মামনুন হাসান ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। একই দিন নায়িকা মাহি ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘ওমরাহ থেকে ফিরেই আমার প্রথম এবং একমাত্র চাওয়া আমি আমাদের সবার অভিভাবক, আমাদের মমতাময়ী মার (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে ৩০ সেকেন্ডের জন্য হলেও দেখা করতে চাই। অনেক কিছু বলার আছে। এই মনোবাসনা নিয়েই আমি মক্কা ত্যাগ করব। আমার বিশ্বাস এই চাওয়া ব্যর্থ হবে না।’
প্রসঙ্গত, মাহিয়া মাহিকে জড়ানো এই ফোনালাপ ফাঁসের কারণে শুরু হওয়া সমালোচনার ধাক্কায় টলে গেছে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের গদি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি পদত্যাগ করেন। অবশ্য দেশত্যাগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে দেশেই ফিরে আসেন।
তাহসান-মিথিলা-শবনম ফারিয়ায় বছর শেষ
১০ ডিসেম্বর অভিনেতা ও গায়ক তাহসান খান, অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, শবনম ফারিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়। সাদ স্যাম রহমান নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক ৪ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা করেন। এরপর থেকেই গুঞ্জন ওঠে তাঁদের গ্রেপ্তারের। বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে, যেকোনো সময় তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমনটা হয়নি। ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মিথিলা ও শবনম ফারিয়া। ১৩ ডিসেম্বর আদালত দুজনের ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলার খবরে মিথিলা বলেছিলেন, ‘আমি এখনো লিগ্যাল নোটিশ পাইনি। সুতরাং, এই বিষয়ে কিছুই জানি না।’ আর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা তাহসান বলেছিলেন, ‘যাদের নাম দেখে ইভ্যালিতে যুক্ত হয়েছিলাম, তাদের নাম বলতে পারব না। তাদের নাম বললে তো বাংলাদেশেই থাকতে পারব না।’
সব মিলিয়ে বিনোদনজগতের তারকাদের থানা দর্শনের মধ্য দিয়েই বছরটি গেল। বছরের মাঝামাঝি পরীমণির যে নির্যাতিত হওয়া বার্তায় নড়েচড়ে বসেছিল দেশ, বছর শেষে ১৬ ডিসেম্বর আরেক তারকা শবনম ফারিয়ার নিজের ‘নির্যাতিত’ হওয়ার বার্তাতেই তা শেষ হলো। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি সাবেক স্বামীর নির্যাতনে তাঁর হাত ভেঙে গিয়েছিল বলে জানান। এখনো এ নিয়ে তেমন কিছু আর না হলেও, ইঙ্গিতটি শুভ নয়।
সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপন এবং এসবের সূত্র ধরে চাকচিক্যময় এক দুনিয়া হিসেবেই পরিচিত বিনোদন জগৎ। সবার একটা আগ্রহ থাকে। এবার সেই জন-আগ্রহের একটা বড় অংশই মিটিয়েছে পর্দা নয়, বাস্তব জগৎ। বাস্তবের এই জগৎ কেবলই সাসপেন্স, ড্রামা ও ক্লাইমেক্স উপহার দিয়েছে। বছর শেষেও মধুর সমাপনের দেখা নেই।
বছরের প্রথম ছয় মাস বেশ ঠান্ডাই ছিল দেশের বিনোদন জগৎ। তবে হাল আমলের নায়িকা পরীমণির এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে নড়েচড়ে বসেন সবাই; সবাই বলতে পুরো বাংলাদেশ। দিনটি ছিল ১৩ জুন; রাত ৮টার একটু আগে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন পরী। স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে পরী লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
এরপর আর আলোচনা থেমে থাকার কোনো সুযোগ নেই। হয়ওনি তেমন। নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরীমণির ওই স্ট্যাটাস রীতিমতো ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
১৩ জুন রাতেই এক সংবাদ সম্মেলনে পরীমণি বলেন, ‘ঘটনার মূল হোতা নাসির ইউ মাহমুদ (নাসিরউদ্দিন আহমেদ) নামের এক ব্যক্তি। উত্তরা বোট ক্লাব নামে এক ক্লাবের সাবেক সভাপতি তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী। ঘটনার দিন রাত ১২টার পর পরিচিতজনদের নিয়ে ওই ক্লাবে যান পরীমণি। ক্লাবটি আশুলিয়ার বিরুলিয়ায়। সেদিন চারজন মদ্যপ ব্যক্তি পরীমণিকে শারীরিক নির্যাতন করেন। চড়থাপ্পড় মারেন। গায়ে আঘাত করেন। একপর্যায়ে একজন তাঁকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে।’ একই সঙ্গে জানান, গত চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের বন্ধুদের কাউকে পাশে পাননি তিনি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে অভিযোগ নিয়ে গেলেও কোনো প্রতিকার পাননি। তাই বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।
বিষয়টি পরদিনই জাতীয় সংসদ পর্যন্ত গড়ায়। বিনোদনজগতের হইচই তো আছেই। অনেকেই পরীমণির পাশে এসে দাঁড়ান, বিচার চান।
পরে ১৪ জুন নাসির ইউ মাহমুদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন পরীমণি। মামলায় নাসির ছাড়াও পরীমণির বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করা হয়। ওই দিনই নাসির, অমিসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন পরী। জানান, তিনি সহজে দমবেন না। পরদিন প্রথমবারের মতো এ ঘটনায় ‘তীব্র নিন্দা’ জানায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। ওই দিনই আদালত পরীমণির মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১৬ জুন পরীর বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা করেন সাভার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন।
পরীমণি নিয়ে এই হুলুস্থুলের মধ্যেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশির এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উঠে আসে নিহত মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির কথা। ভাইরাল হয় এই স্ট্যাটাসও।
নতুন বাঁক
পরীমণি নিয়ে জোর আলোচনার মধ্যেই বদলাতে শুরু করে দৃশ্যপট। অল কমিউনিটি ক্লাব লিমিটেডের পক্ষ থেকে ১৭ জুন জানানো হয়, ৭ জুন গভীর রাতে গুলশানের ওই ক্লাবে ভাঙচুর ও বার-কর্মীদের মারধর করেছেন পরীমণি। এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন পরীমণি। এদিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাল্টা অভিযোগ তুলে পরীমণি বলেন, মূল ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করতেই এত দিন পর এসব অভিযোগ আসছে। এর মধ্যেই ২১ জুন বনানী ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে পরীমণির বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজসংবলিত ভিডিও। পরদিনই খবর আসে—পরীর করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়নি আসামি নাসির-অমিসহ বাকিদের। ডিবির এসআই মানিক কুমার শিকদারের করা মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদের। উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ২৩ জুন পরীমণির মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন পুলিশ পরিদর্শক কামরুল ইসলাম। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে আসামিরা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন।
নানা জল্পনা ঘুরে বেড়াতে থাকে। পরীমণির করা অভিযোগ ও আসামিদের বয়ান মিলিয়ে একটা ধোঁয়াশা শুরু হয়। বরাবরের মতোই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলতে থাকে। এর মধ্যেই ২৯ জুন নাসিরউদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় পরীমণির মামলায় জামিন পান। ৩০ জুন মাদক মামলায়ও জামিন পেলে নাসির উদ্দিন মাহমুদ মুক্ত হন। ৩ জুলাই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজেকেই ‘ভুক্তভোগী’ দাবি করেন নাসির।
পরীমণির সঙ্গে আরও চরিত্র
পরীমণি-কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই মঞ্চে হাজির হন একা। ৩১ জুলাই গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে আটক করা হয় ঢাকাই ছবির নায়িকা একাকে। ১ আগস্ট গৃহকর্মী নির্যাতন ও মাদক রাখার অভিযোগে তাঁর নামে দুটি মামলা করে পুলিশ। ঘটনাটি বেশি দূর গড়ায়নি। ২৪ আগস্টই জামিনে মুক্তি পান একা।
পরীমণি থেকে মানুষ যখন একার দিকে তাকাবেন, তখনই মঞ্চে এসে জায়গা করে নেন পিয়াসা।
রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে ২ আগস্ট আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। অনেকটা নিয়ম মেনেই তাঁর বাসা থেকেও উদ্ধার করা হয় বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসা। পিয়াসার দেওয়া তথ্যে একই দিন মোহাম্মদপুরে একটি বাসা থেকে ইয়াবাসহ মডেল মৌ আক্তারকে আটক করে ডিবি। বিনোদনজগতে শুরু হয় গ্রেপ্তার আতঙ্ক। নানা রকম কথা উঠে আসে। কেউ একে ষড়যন্ত্র, কেউ আটক মডেলদের ‘মডেল’ বা ‘শিল্পী’ বলতেই নারাজ, অনেকে আবার পুরো বিষয়টিকেই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব হিসেবে বর্ণনা করে নানামুখী বক্তব্য দেন।
১ অক্টোবর জামিন পান মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। রাজধানীর ভাটারা ও খিলক্ষেত থানায় মাদকদ্রব্য আইনে করা পৃথক দুই মামলায় তাঁকে জামিন দেন আদালত। তবে গুলশান থানার মামলায় জামিন নামঞ্জুর হওয়ার কারামুক্তি মেলেনি।
আবার পরীমণি
দুই মডেল গ্রেপ্তারের এক দিন পর ৪ আগস্ট হঠাৎ ফেসবুক লাইভে আসেন পরীমণি। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেন, তাঁর বাসায় হামলা চালিয়েছে কেউ। হন্তদন্ত হয়ে সাংবাদিকেরা যখন পরীমণির বাসার নিচে তখন জানা গেল, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগে’ পরীমণির বাসায় অভিযান চালাচ্ছে র্যাব। দীর্ঘ সময়ের অভিযান শেষে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি), আইস ও বিপুল পরিমাণ মদের বোতলসহ পরীমণিকে আটক করে র্যাব। নিয়ে যাওয়া হয় র্যাব সদর দপ্তরে। আটক করা হয় আশরাফুল ইসলাম দীপুকেও।
এই অভিযান চলার সময়ই র্যাবের আরেকটি দল অভিযান চালায় রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বনানীর বাসায়। বিপুল পরিমাণ মদ, মাদক, বিকৃত যৌনাচারের সরঞ্জামসহ আটক করা হয় রাজকে। তাঁকেও নেওয়া হয় র্যাব সদর দপ্তরে। রাজের সহযোগী সবুজ আলীকে আটক করে র্যাব। ৫ আগস্ট পরী ও রাজকে বনানী থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। পাঠানো হয় আদালতে। আদালত পরীমণি ও রাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চয়নিকা চৌধুরীর প্রবেশ
পরীমণির প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সর্বক্ষণ তাঁর পাশে ছিলেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। ৬ আগস্ট আবারও দৃশ্যে প্রবেশ করেন তিনি। ওই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর পান্থপথ থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। একই রাতে পরীমণির সহকর্মী কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমিকেও আটক করে ডিবি। অবশ্য ওই দিন মধ্যরাতেই পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয় চয়নিকা চৌধুরীকে।
পরীকে নিয়ে আবার বিতর্ক
৭ আগস্ট পরীমণি-কাণ্ডে নাম জড়ায় খোদ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার। দুজনের একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ পায়। বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরীর গাড়িচালক নাজির হোসেন জানান, বোট ক্লাব মামলার তদন্ত করতে গিয়েই পরীমণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। একই দিন পরীমণি ও একার সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি।
এদিকে ডিবি কর্মকর্তার সঙ্গে পরীর সখ্যের বিষয়টি প্রকাশের পর অধিকতর তদন্তের জন্য ৭ আগস্ট পরীমণি, প্রযোজক রাজ, দুই মডেল পিয়াসা ও মৌকে সিআইডি হেফাজতে নেওয়া হয়। এত দিন পর্দায় দেখে অভ্যস্ত মডেল, নায়িকা বিনোদনজগতের কলাকুশলীদের আদালত প্রাঙ্গণে দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে মানুষ। এর মধ্যেই ১১ আগস্ট আদালত পিয়াসা ও পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকে কারাগারে পাঠান।
জামিন নিয়ে জল ঘোলা
১৩ আগস্ট মাদক মামলায় পরীমণি ও তাঁর সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান আদালত। এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। এর মধ্যেই ১৮ আগস্ট ফের পরীমণিকে রিমান্ডে চায় সিআইডি। ১৯ আগস্ট পরীকে তৃতীয় দফায় এক দিনের রিমান্ডে পাঠান। ২২ আগস্ট আবার জামিন আবেদন করেন পরীমণির আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান। ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে এর শুনানি হবে বলে জানানো হয়। আলোচনা ওঠে—জামিন নিয়ে অহেতুক জল ঘোলা করা হচ্ছে।
এই আলোচনার মধ্যেই ২৬ আগস্ট পরীমণির জামিন আবেদন ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ২৯ আগস্ট মাদক মামলায় পরীমণিকে তিন দফা রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন। ৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পরীমণির জামিন মঞ্জুর করেন। ১ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান পরীমণি।
মুক্ত বেশে পরীমণি
টানা ২৬ দিন বন্দিজীবন শেষে কারাগার থেকে বের হন পরীমণি। সাদা টি-শার্ট, মাথায় সাদা ওড়না, চোখে কালো রোদচশমা পরিহিত পরীই ছিলেন এদিনের সংবাদমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রে। আর তাঁর হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ নিয়ে তো রীতিমতো শুরু হয়ে যায় গবেষণা।
একই দিন পরীমণির মামলায় রিমান্ডের অপব্যবহার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ‘পরীমণির মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ডের প্রয়োজন ছিল না। এটা তো সভ্য সমাজে হতে পারে না।’
২ সেপ্টেম্বর পরীমণি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বলেন, ‘অপরাধ করিনি বলেই এখনো মানসিকভাবে শক্ত আছি।’ এর ঠিক ২২ দিন পর ২৪ সেপ্টেম্বর নিজের কাজ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন পরীমণি। বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে ‘প্রীতিলতা’ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয়ের ঘোষণা দেন পরীমণি। সিনেমাটি নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা বলেন তিনি।
রিমান্ড প্রশ্নে বিচারককে তলব
২ সেপ্টেম্বর পরীমণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডের যৌক্তিকতা নিয়ে নিম্ন আদালতের দুই বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে (কেসডকেট সিডিসহ) সশরীরে উপস্থিত হতে বলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। এদিকে নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে ৬ সেপ্টেম্বর একটি স্ট্যাটাস দেন পরী। একই দিন পরীমণির ধর্ষণচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
৮ সেপ্টেম্বর এ-সম্পর্কিত পাঁচ পৃষ্ঠার লিখিত আদেশে হাইকোর্ট বলেন, পুলিশ বিভাগের বোঝা উচিত, মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আইনি ভিত্তি ছাড়া পুলিশ রিমান্ড চাইতে পারে না। অথচ এ মামলায় পুলিশ তাঁকে তিনবার রিমান্ডে নিয়েছে, যা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডে পাঠানো নিম্ন আদালতের দুই বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম ১৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। তাঁরা বলেন, ‘এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল।’ ১৬ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত জানিয়ে দেন, তাঁরা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। ২৯ সেপ্টেম্বর এ-সম্পর্কিত আদেশে হাইকোর্ট ২৪ অক্টোবরের মধ্যে তাঁদের ফের ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্ধারিত দিনে ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন দুই বিচারক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের এক সপ্তাহের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ৩১ অক্টোবর আবারও নিঃশর্ত ক্ষমা চান ঢাকা মহানগর আদালতের দুই বিচারক ও মাদক মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তা। এ-সম্পর্কিত আদেশ হাইকোর্ট ২৫ নভেম্বর দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। হাইকোর্ট জানান, শীতকালীন অবকাশ শেষে নতুন বছরের জানুয়ারিতেই এ-সম্পর্কিত আদেশ দেওয়া হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা।
শেষ কিন্তু শেষ নয়
২৮ সেপ্টেম্বর মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার সময় পরীমণির ব্যবহৃত গাড়ি, মোবাইল, ল্যাপটপসহ জব্দ করা ১৬ আলামত ফেরতের নির্দেশ দেন আদালত। ৪ অক্টোবর মাদক মামলায় পরীমণিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় সিআইডি, যা আমলে নেওয়ার শুনানির জন্য ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আদালত। ১০ অক্টোবর স্থায়ী জামিন নিতে আদালতে গেলেও পরী পান অস্থায়ী জামিন। ২৬ অক্টোবর মাদক মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পান পরীমণি।
জন্মদিন উদ্যাপন এবং এর আয়োজনসহ নানা কারণে ১৩ অক্টোবর আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রে আসেন পরীমণি। তারপর ১৫ নভেম্বর মাদক মামলায় পরীমণিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। একই সঙ্গে চার্জ গঠনের জন্য ১৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। একই দিন মডেল তিন্নি হত্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা ঘোষণা করা হয়নি। তিন্নির বাবা ও চাচা তাঁদের সাক্ষ্য পুনরায় গ্রহণের আবেদন করায় রায় পিছিয়ে যায়।
এদিকে ১ ডিসেম্বর মারধর ও যৌন নিপীড়নের মামলায় তিনজনকে আসামি করে পুলিশ যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতে এজাহারের ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ আসামিদের নাম না আসায় আদালতে আপত্তি জানান পরীমণি। এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন নাসির ও অমি। তবে মামলার অপর আসামি শহিদুল আলম পলাতক। ১৩ ডিসেম্বর আদালত পরীমণির আপত্তি নাকচ করে দেন।
১৪ ডিসেম্বর পরীমণির বিরুদ্ধে করা মাদক মামলার চার্জ গঠনের শুনানি কথা থাকলেও তা পেছানো হয়েছে। নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি। পরীমণি ‘অসুস্থতার কারণে রাস্তা থেকেই ফিরে যাওয়ায়’ অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানো হয়।
টিভি তারকাদের মঞ্চপ্রবেশ
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে ‘নেতিবাচক, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর’ ধারণা এবং শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে এবার টিভির জনপ্রিয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। বশির আল হোসাইন নামের এক প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মীর করা এ-সম্পর্কিত দুই মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এর একটি ‘ঘটনা সত্য’ নামের একটি নাটক নিয়ে, যা চ্যানেল আইয়ের ঈদুল আজহার আয়োজনে ২৩ জুলাই প্রচার হয়েছিল। আসামি করা হয় চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, নাটকের চিত্রনাট্যকার মঈনুল সানু, পরিচালক রুবেল হাসান, অভিনেতা আফরান নিশো ও অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরীকে।
অন্য মামলা করা হয় চ্যানেল আইয়ের টক শো ‘টু দ্য পয়েন্ট’-এর ১১ জুলাইয়ের পর্ব নিয়ে, যেখানে এক আলোচকের কথায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে ‘নেতিবাচক ধারণা’র প্রকাশ ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ মামলায় আসামি করা হয় ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী জাহিদ নেওয়াজ খান, প্রযোজক রাজু আলিম, উপস্থাপক সোমা ইসলাম ও আলোচক ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে।
আলোচনায় সংগীত তারকারা
প্রায় পুরো বছর চলচ্চিত্র ও টিভি তারকারাই সংবাদমাধ্যম মাতিয়ে রেখেছিলেন। এবার সে মঞ্চে প্রবেশ করেন দেশের শীর্ষ ব্যান্ডতারকা নগরবাউল জেমস। ১৯ সেপ্টেম্বর গান কপিরাইটের অভিযোগ নিয়ে ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলা করতে যান জেমস। সবাই তখন সচকিত। যদিও সেদিন আদালতের পরামর্শে মামলা না করেই ফিরে যান জেমস। কিন্তু ১০ নভেম্বর বাংলালিংকের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের মামলা করেন তিনি। এবার মামলাটি গ্রহণ করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত।
এই রেশ কাটতে না কাটতেই ১৪ নভেম্বর আদালত সংগীতশিল্পী মিলার বিরুদ্ধে সাবেক স্বামীকে অ্যাসিড ছুড়ে মারা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া জিন্না এ আদেশ দেন।
শেষ পাতে মুরাদ হাসান
বছরের শেষ মাস ৬ ডিসেম্বর সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। এদিনই চিত্রনায়ক ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নেয় ডিবি। একই দিন পবিত্র ওমরাহ পালন করতে স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরবে অবস্থান করা মাহিয়া মাহি এক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মাহি বলেন, ‘আমি সেদিনও খুব বিব্রত ছিলাম। নিজের আত্মসম্মানবোধে কতটুকু আঘাত লেগেছে, তা শুধু আমি আর আমার আল্লাহ জানেন। আজকেও আমি ভীষণভাবে বিব্রত।’
৭ ডিসেম্বর ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় ঢালিউডের নায়ক মামনুন হাসান ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। একই দিন নায়িকা মাহি ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘ওমরাহ থেকে ফিরেই আমার প্রথম এবং একমাত্র চাওয়া আমি আমাদের সবার অভিভাবক, আমাদের মমতাময়ী মার (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে ৩০ সেকেন্ডের জন্য হলেও দেখা করতে চাই। অনেক কিছু বলার আছে। এই মনোবাসনা নিয়েই আমি মক্কা ত্যাগ করব। আমার বিশ্বাস এই চাওয়া ব্যর্থ হবে না।’
প্রসঙ্গত, মাহিয়া মাহিকে জড়ানো এই ফোনালাপ ফাঁসের কারণে শুরু হওয়া সমালোচনার ধাক্কায় টলে গেছে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের গদি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি পদত্যাগ করেন। অবশ্য দেশত্যাগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে দেশেই ফিরে আসেন।
তাহসান-মিথিলা-শবনম ফারিয়ায় বছর শেষ
১০ ডিসেম্বর অভিনেতা ও গায়ক তাহসান খান, অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, শবনম ফারিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়। সাদ স্যাম রহমান নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক ৪ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা করেন। এরপর থেকেই গুঞ্জন ওঠে তাঁদের গ্রেপ্তারের। বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে, যেকোনো সময় তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমনটা হয়নি। ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মিথিলা ও শবনম ফারিয়া। ১৩ ডিসেম্বর আদালত দুজনের ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলার খবরে মিথিলা বলেছিলেন, ‘আমি এখনো লিগ্যাল নোটিশ পাইনি। সুতরাং, এই বিষয়ে কিছুই জানি না।’ আর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা তাহসান বলেছিলেন, ‘যাদের নাম দেখে ইভ্যালিতে যুক্ত হয়েছিলাম, তাদের নাম বলতে পারব না। তাদের নাম বললে তো বাংলাদেশেই থাকতে পারব না।’
সব মিলিয়ে বিনোদনজগতের তারকাদের থানা দর্শনের মধ্য দিয়েই বছরটি গেল। বছরের মাঝামাঝি পরীমণির যে নির্যাতিত হওয়া বার্তায় নড়েচড়ে বসেছিল দেশ, বছর শেষে ১৬ ডিসেম্বর আরেক তারকা শবনম ফারিয়ার নিজের ‘নির্যাতিত’ হওয়ার বার্তাতেই তা শেষ হলো। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি সাবেক স্বামীর নির্যাতনে তাঁর হাত ভেঙে গিয়েছিল বলে জানান। এখনো এ নিয়ে তেমন কিছু আর না হলেও, ইঙ্গিতটি শুভ নয়।
গাজীপুরের শ্রীপুরে মামা শ্বশুরের বাড়ি থেকে স্মৃতি রানী সরকার নামে এক গৃহবধূর গলা কাটা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো দা ও এক জোড়া জুতাও উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী কাব্য সরকারকে আটক করেছে পুলিশ। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়ন
২ দিন আগেসাত দিন আগে বিয়ে হয় সৌদি আরব প্রবাসী যুবক সোহান আহমদের (২৩)। হাত থেকে মেহেদির রং মোছার আগেই ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন এ যুবক। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ উপজেলা ও সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত ইনাতগঞ্জ বাজারে প্রতিপক্ষের হামলায় মৃত্যু হয় সোহান আহমদের। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুজন।
২ দিন আগেঅপরাধের বিরুদ্ধে চলমান বিশেষ অভিযান জোরদারে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। আজ সোমবার এক বার্তায় পুলিশের সকল ইউনিট প্রধানকে এ নির্দেশ দেন তিনি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
২ দিন আগেরাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার একটি বাসা থেকে বিমানবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্ত্রীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করেছে পল্লবী থানা-পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুরে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ওই নারীর নাম ফারাহ দীবা। সোমবার সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য জানান পল্লবী থানার পরির্দশক (তদন্ত) আদ
৩ দিন আগে