২০০ সেলিব্রিটির ব্যক্তিগত বিমান ২১ মাসেই উড়েছে ১১ বছরের সমান

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

বিশ্বজুড়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সিইও, সেলিব্রিটি ও বিলিয়নিয়ারেরা যেকোনো জায়গায় যাতায়াতের জন্য সাধারণত ব্যক্তিগত বিমানই ব্যবহার করে থাকেন। ২০২২ সাল থেকে ২১ মাসে ২০০ সেলিব্রেটির ব্যক্তিগত বিমান ১১ বছরের সমান সময় আকাশে উড়েছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে। এ সময়ের মধ্যে তাঁরা বিভিন্ন গন্তব্যে ৪৪ হাজার ৭৩৯ বার যাতায়াত করেছেন। 

এসব ফ্লাইটের মোট কার্বন ফুটপ্রিন্টের (গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপাদন) পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০ হাজার ব্রিটিশের কার্বন ফুটপ্রিন্টের সমান।   

জরিপের জন্য সেলিব্রেটি ও ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত বিমানের ফ্লাইট ট্র্যাক করতে দ্য গার্ডিয়ান পাবলিক ডেটা ব্যবহার করে। এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন—   বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, দ্য রোলিং স্টোন ব্যান্ডের, রুপার্ট মারডক পরিবার ও সেলিব্রিটি কাইলি জেনার।  

তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের প্রায় ৩০০টি ব্যক্তিগত বিমান আনুমানিক ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫১৮ টন কার্বন–ডাই–অক্সাইড নির্গত করেছে।  

তালিকার সবচেয়ে দূষণকারী বিমানটি ছিল দ্য রোলিং স্টোনের বোয়িং ৭৬৭। এটি প্রায় ৫ হাজার ৪৬ টন কার্বন–ডাই–অক্সাইড নির্গত করে। এই কার্বন ফুটপ্রিন্ট একজন ব্যক্তির ১ হাজার ৭৬৩ বার লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক যাতায়াতের সমান। 

২০২২ সাল থেকে অ্যাস্টন মার্টিন ফর্মুলা ওয়ান টিমের মালিক লরেন্স স্ট্রলের বিমানের মোট ১ হাজার ৫১২ টি ফ্লাইট রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে মোট ১৫ মিনিটের সমান ভ্রমণ করা হয়েছে।    

এ ছাড়া ৩০ জন রুশ অলিগার্কের মোট ৩৯টি ব্যক্তিগত বিমান ৩০ হাজার ৭০১ টন কার্বন–ডাই–অক্সাইড নির্গমনের জন্য দায়ী। রুশদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন—রোমান আব্রামোভিচ, লিওনিদ মিখাইলসন এবং সম্প্রতি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ভাগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন। তাঁদের বিমানের নির্গত কার্বন–ডাই–অক্সাইড মোট ১ হাজার রুশের কার্বন ফুটপ্রিন্টের সমান।  

দ্য গার্ডিয়ানের জরিপে দেখা যায়, কোভিড–১৯ মহামারির সময় থেকে ব্যক্তিগত বিমানের ব্যবহার হুট করেই বেড়ে গেছে। ২০০৭ সালের পর গত বছর ইউরোপে ব্যক্তিগত বিমানের সর্বোচ্চ চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। এ বছর ব্যক্তিগত বিমান বিক্রির পরিমাণও সর্বোচ্চ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।    

তবে জরিপের প্রত্যেক ফ্লাইটেই সেটির মালিক ছিলেন না। প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যক্তিগত ফ্লাইটেই কোনো যাত্রী থাকে না। অনেক ব্যক্তিগত বিমান বন্ধু–বান্ধব, পরিবার বা ব্যবসায়িক সহযোগীরা ব্যবহার করে থাকেন।

এ জরিপে জনপ্রিয় গায়িকা টেইলর সুইফটের ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার নিয়েও বিশ্লেষণ করা হয়। ব্যক্তিগত বিমানের অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য সমালোচিত হওয়ার পর তাঁর মতো অনেক সেলিব্রেটিরই ব্যক্তিগত বিমানের ব্যবহার নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে টেইলর সুইফট গড়ে ১৯ বার ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার করেছেন। এ নিয়ে নেতিবাচকভাবে আলোচিত হওয়ার পর তাঁর প্রতি মাসে ব্যক্তিগত বিমানের ব্যবহার গড়ে দুইবারে নেমে এসেছে।

সুইফটের এক মুখপাত্র বলেন, ‘২০২৩ সালের মার্চে আমাদের গানের ট্যুর শুরু হওয়ার আগে টেইলর সমস্ত ট্যুরের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন ক্রেডিটের দ্বিগুণেরও বেশি কিনেছিলেন।’

এ প্রতিবেদনে উল্লেখিত অন্য কোনো সেলিব্রেটি ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দ্য গার্ডিয়ান স্বেচ্ছাসেবক–পরিচালিত ডেটাবেইস ওপেনস্কাই থেকে প্রাপ্ত ফ্লাইট ডেটার ওপর ভিত্তি করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। জ্বালানি খরচ এবং কার্বন নির্গমন অনুমান করতে কনক্লিন অ্যান্ড ডি ডেকার এবং ইউরোকন্ট্রোল থেকে সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য কার্বন নির্গমন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা হয়। গার্ডিয়ান বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে তথ্য সংগ্রহে সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে এ সংখ্যা সম্পূর্ণ সঠিক নাও হতে পারে। 

২০২২ সালের ডেটাসেটে উল্লেখিত প্রায় ২৭ হাজার ৭৯৩টি ফ্লাইটে প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৩ টন কার্বন–ডাই–অক্সাইড নির্গত হয়েছে, যা ওই বছরের ৫৩ লাখ ব্যক্তিগত ফ্লাইটের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের সমান।  

গার্ডিয়ানের জরিপে কেবল ধনী ও দরিদ্র দেশেরই নয় বরং ধনী ও দরিদ্র ব্যক্তির কার্বন নিঃসরণে অসমতাও উঠে এসেছে। 

কার্বন অসমতা নিয়ে অক্সফামের নতুন এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিলিয়নিয়ারদের ব্যক্তিগত বিমান ও ইয়টের মতো শুধু পরিবহনেই প্রতি বছর হাজার হাজার টন কার্বন নির্গত হয়।   

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির ২০২১ সালের উপাত্ত অনুসারে, প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী ডজনখানেক দেশে দেখা গেছে, সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ সবচেয়ে দরিদ্রদের ১০ শতাংশের চেয়ে ৪০ গুণ বেশি কার্বন নির্গমনের সঙ্গে যুক্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত