২০০ বছর আগে আটলান্টিক থেকে হারিয়ে যাওয়া তিমি প্রজাতির দেখা মিলল আবার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৬: ২৬

২০০ বছরেরও বেশি আগে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে হারিয়ে গিয়েছিল গ্রে হোয়েল বা ধূসর তিমি। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের আটলান্টিক মহাসাগরে এর দেখা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা । 

বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড অ্যাকোরিয়ামের (এনইএ) বিজ্ঞানীর গত শুক্রবার ননতুকেত উপকূলের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বিশালাকায় প্রাণীটিকে দেখতে পান। অথচ ধূসর তিমি আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ২০০ বছরের বেশি সময় আগেই হারিয়ে গিয়েছিল বলে জানতেন তাঁরা।

বিজ্ঞানীরা যখন এই প্রাণীটির দেখা পান তখন তাঁদের উড়োজাহাজটি ননতুকেতের ত্রিশ মাইল দক্ষিণে উড়ছিল।

এসব তথ্য জানা যায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে।

যেহেতু তিমিটি খাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে, এটি ডাইভ দিচ্ছিল এবং পুনরায় ভেসে উঠছিল। সমীক্ষার কাজে নিয়োজিত উড়োজাহাজটি ৪৫ মিনিটের জন্য এলাকাটি প্রদক্ষিণ করতে থাকে। যেন বিজ্ঞানীরা ফটো তোলার এবং তারা যা দেখছেন তা বোঝার জন্য সময় পান। দলের সদস্যরা ছবিগুলি পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হন তাঁরা যা দেখেছেন সেটি একটি ধূসর তিমি।

‘এটি কী ছিল তা আমি জোরে বলতে পারছিলাম না, কারণ বিষয়টি অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছিল’ বলেন এনইএর একজন সহযোগী গবেষণা বিজ্ঞানী অরলা ও’ব্রায়েন।

বিজ্ঞানীরা যখন এই প্রাণীটির দেখা পান তখন তাঁদের উড়োজাহাজটি ননতুকেতের ত্রিশ মাইল দক্ষিণে উড়ছিল। ছবি: সংগৃহীতও’ব্রায়েন অ্যান্ডারসন ক্যাবট সেন্টার ফর ওশান লাইফে কাজ করেন। ১৩ বছর ধরে আকাশ থেকে এ ধরনের সমীক্ষা কাজে নিয়োজিত তিনি। রিসার্চ টেকনিশিয়ান ক্যাট লেমলি উড়োজাহাজে ও’ব্রায়েনের সঙ্গে ছিলেন।  

‘আমার মস্তিষ্ক যে জিনিসটা আমি দেখলাম সেটা হজম করার চেষ্টা করছিল। কারণ এটা এমন এক ধরনর প্রাণী যেটা এখানকার জলে থাকার কথা ছিল না।’ বলেন লেমলি, ‘আমরা হাসছিলাম। কী আশ্চর্যজনক ও উত্তেজনাকর এক বিষয় এটি। এমন একটি প্রাণীকে দেখা যেটা কয়েক শ বছর আগে হারিয়ে গেছে আটলান্টিক থেকে।’

এনইএ জানিয়েছে, ধূসর তিমির দেখা আটলান্টিকে না মিললেও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে এদের নিয়মিতই পাওয়া যায়।

১৮ শতকেই আটলান্টিক মহাসাগর থেকে হারিয়ে গেলেও প্রজাতিটি যে ফিরে এসেছে সন্দেহ নেই। গত পনেরো বছরে আটলান্টিক ও ভূমধ্যসাগরে ধূসর তিমি দেখার আরও খবর মিলেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে বলা যায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ফ্লোরিডা উপকূলে দেখা পাওয়া যাওয়া তিমিটার কথা।

শুক্রবার ননতুকেতের উপকূলে দেখা যাওয়া তিমিটি আর ফ্লোরিডার সেই তিমি একই বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন যে তিমির এই অস্বাভাবিক উপস্থিতিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে দেখা যেতে পারে। অর্থাৎ কানাডার আর্কটিক মহাসাগরের মাধ্যমে নর্থ-ওয়েস্ট প্যাসেজ আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে গ্রীষ্মকাল অনেকটা বরফমুক্ত ছিল।

সাধারণত ধূসর তিমিরা কোন এলাকায় ভ্রমণ করতে পারে তা নির্ধারিত করে দেয় বরফ। শীতে ঘন বরফ ভেদ করতে ব্যর্থ হয় এরা। কিন্তু বর্তমান সময়ে গ্রীষ্মের মাসগুলিতে বরফ কম থাকায়, ধূসর তিমিরা সেসব অঞ্চলে গত কয়েক শতাব্দী ভ্রমণ করতে পারেনি সেখানে পুনরায় চলে আসার সুযোগ পেয়েছে।

‘আটলান্টিকের ধূসর তিমি দেখা মেলার এই খবর আমাদের জানিয়ে দেয় সুযোগ দেওয়া হলে সামুদ্রিক প্রজাতিগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কত দ্রুত সাড়া দেয়।’ বলেন ও’ব্রায়েন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত