ইশতিয়াক হাসান
এক যুগেরও আগের একটি গল্প দিয়ে শুরু করছি। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার একটি গ্রামীণ তিন রাস্তার মোড়। চারপাশে বেশ কয়েকটা টংঘর। যখনকার কথা বলছি, তখনই মোটামুটি ছোটখাটো একটা বাজারে রূপ নিয়েছে জায়গাটি। রাস্তা তিনটার একটা এসেছে ধর্মঘর বাজার থেকে। দক্ষিণেরটা চলে গেছে একেবারে ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম মোহনপুরের দিকে। আর উত্তরেরটার গন্তব্য দেবনগর নামের এক গ্রাম ।
সীমান্তের দিকে চলে যাওয়া পথটা ধরে একটু গেলেই বাঁয়ে বেশ কয়েকটা ঘর। এর একটার সামনে ছোট একটা চৌবাচ্চা। বর্ষার সময় বেশ পানি জমে। কুকুর-বিড়াল, গরু-বাছুর তৃষ্ণা মিটিয়ে নেয় এখানে। রাতে হয়তোবা শিয়াল-বনবিড়ালেরাও পান করে। অবশ্য এখন ওই চৌবাচ্চাটা সেখানে আর আছে কি না, বলতে পারব না।
প্রচণ্ড উত্তপ্ত একটা রাত পার হয়ে কেবল ভোর হয়েছে সেদিন। গরম কমেনি একটুও। দিনের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়নি। চুপি চুপি আশ্রয় থেকে বের হয়ে এসেছে একটা বনবিড়াল। বেচারা জানে, একবার কেউ দেখে ফেললে আর রেহাই নেই। পিটিয়ে হাড়গোড় এক করবে। কিন্তু গরমে গলাটা শুকিয়ে কাঠ। অন্তত দু-এক ঢোক জল পান না করলেই নয়। ওই তো কাছেই চৌবাচ্চাটা দেখা যাচ্ছে। এক দৌড়ে গিয়ে কয়েক ঢোক পানি পান করে আসবে।
দ্রুত চৌবাচ্চার কাছে চলে এসে চারদিকে একবার দেখে নিয়ে উবু হয়ে মুখ ডুবিয়ে দিল পানিতে। এ সময়ই অঘটনটা ঘটল। হঠাৎ করেই কীভাবে যেন পিছলে পড়ে গেল ভেতরে। কিন্তু চৌবাচ্চার ধারগুলো পানি থেকে কিছুটা উঁচুতে। শত চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না।
হয়তো বনবিড়ালটার তখন নিজের জন্য না, পেটের বাচ্চাগুলোর জন্যই মনটা কেঁদে উঠেছিল। আহহা! এরা যে পৃথিবীর আলো-বাতাসই দেখল না এখনো। এরই মধ্যে কোনো কারণে রাস্তায় বের হয় এক লোক। চৌবাচ্চায় পানির মধ্যে হাঁসফাঁস করতে দেখলেন প্রাণীটিকে। তার ‘টলা টলা’ চিৎকারে কাছেধারের বাড়িগুলো থেকে দৌড়ে এল মানুষ। অনেক দিন পর মনের সুখে পিটিয়ে ভূত বানানো যাবে একটা টলাকে।
এখানকার লোকদের কাছে বনবিড়ালের পরিচয় টলা। প্রথমে পানি থেকে তোলা হলো ওটাকে। তারপর শুরু হলো লাঠির বাড়ি। একপর্যায়ে রক্ত ঝরতে শুরু করল শরীর থেকে। আরও কিছুক্ষণ এভাবে পেটালে হয়তো পৃথিবীর মায়াই কাটাতে হতো ওটাকে। তার পরই কীভাবে যেন তার ফুলে ওঠা পেটটা চোখে পড়ল একজনের। হায় হায়, এটার পেটে তো বাচ্চা! লোকটা চেঁচিয়ে উঠতেই অন্যদেরও নজরে পড়ল বিষয়টা। যা হোক, থামল লাঠির বাড়ি। একজনের পরামর্শে টংঘরগুলোর ধারে এনে বেঁধে রাখা হলো । কিছুটা চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো। কোনোভাবে রক্তাক্ত শরীরটা টেনে টেনে হারিয়ে গেল ঝোপঝাড়ের রাজ্যে।
পরে বনবিড়ালটির ভাগ্যে কিংবা ওটার পেটের বাচ্চাগুলোর ভাগ্যে কী ঘটেছিল, তা জানা সম্ভব হয়নি। একটা সময় নানার বাড়ি দেবনগরে যেতাম প্রচুর। আর যখনই যেতাম, শুনতাম টলার নানা কাহিনি। হয়তো পরিচিত এক বড় ভাই এসে বলল, ‘তুষার, ওইদিন আমাদের পুকুরের ধারে একটা টলা পিটায়ে মাইরা ফেলছি সবাই মিলা। হাঁস-মুরগি খেয়ে বহুত জ্বালাতন করছিল ওটা।’ আবার মামাতো ভাই অর্ণব হয়তো এসে বলল, ‘তুষার ভাইয়া, ওই দিন বড় সাইজের একটা টলা দেখছি। প্রায় কুকুরের কাছাকাছি হইব।’ কিংবা পাশের বাড়ির মামি বললেন, ‘দেখছ, তুমি টলা টলা করো আর আমার সাধের চারটা হাঁসরে মাইরা রাইখা গেছে শয়তানটা।’
ব্যস্ততায় কিংবা ব্যস্ততার অজুহাতে এখন নানার বাড়িতে আগের মতো যাওয়া হয় না। তবে হঠাৎ হঠাৎ মানে পড়ে দেবনগরের বনবিড়ালদের কথা, আর মনে পড়ে টলা নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে তর্কের কথা। তাঁদের কথা, ইতানে হাঁস-মুরগি খাইয়া সাফ কইরা লায়। দাম দিতে পারবা? তাইলে আর মারতাম না। অভাবের সংসারে একটা-দুটো মুরগি-হাঁস হারানোও তো তাদের জন্য অনেক ক্ষতি। তাই মরতে হবে টলা বা বন বিড়ালদের। আর তাই দেবনগর আর আশপাশের এলাকায় বন বিড়ালদের এখন দেখা যায় কম। কেবল রাতে মাঝে মাঝে দূর থেকে ভেসে আসা ডাক ক্রমেই হারাতে বসা অস্তিত্বের জানান দিয়ে যায়।
খুব স্বাস্থ্যবান একটা বনবিড়াল আবার দেখেছিলাম নরসিংদীর চরসিন্দুরে সরওয়ার পাঠান ভাইদের ওখানে বেড়াতে গিয়ে। ওখানে বন বিড়ালকে বলে বাওরাল। তবে সরওয়ার ভাইদের বাড়ির পাশের একটু নিচে বেশ ঝোপঝাড়ে এখনো বনবিড়ালদের আস্তানা। কখনো-সখনো মুরগি লোপাট হলেও তাঁদের বাড়িতে বনবিড়াল মারা নিষিদ্ধ। সরওয়ার ভাই একবার মেছো বিড়ালের বাচ্চা মনে করে বন বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে এসেছিলেন। ওটাকে পুষেছিলেন। তার খুব বাধ্য ওই বনবিড়ালটার নাম ছিল এলসা। তবে ওটা অন্তত দুই যুগের বেশি আগের কাহিনি। আবার তাঁর নার্সারির ধারের একটা বড় গাছের গুঁড়িতে নিয়মিত নখের ধার পরীক্ষা করে প্রমাণ সাইজের একটার বনবিড়াল।
বনবিড়াল সম্পর্কে দু-চারটি তথ্য জানিয়ে রাখছি। আকারে, ওজনে পোষা বিড়ালের দ্বিগুণ বলতে পারেন একে। গায়ে ডোরা নেই, তবে লেজে কালো বলয়ের মতো থাকে। গায়ের রং ধূসর, বাদামি। মুরগি চুরির অপবাদ থাকলেও ওটা কালেভদ্রেই করে, প্রধান খাবার ইঁদুর, পাখি, ব্যাঙ। গাছে চড়ায় দারুণ পারদর্শী হওয়ায় পাখি শিকারেও ওস্তাদ। যদ্দুর জানা যায়, বছরে দুবার বাচ্চা দেয় এরা। জংলি বিড়াল, খাগড়া বিড়াল, জলাভূমির বিড়াল নামেও পরিচিত।
গোটা বাংলাদেশের বেশির ভাগ গ্রামে এখন এমনই বিপদে বনবিড়ালরা। কিন্তু আগেও তো মুরগি চুরির অপরাধে বন বিড়াল মারা যেত মানুষের হাতে। তখন তো এরা এতটা কমেনি সংখ্যায়। কারণ তখন এদের থাকার পরিবেশ ছিল, এরা সংখ্যায়ও ছিল বেশি। আর এখন আমরা ইচ্ছামতো গ্রামীণ বন ধ্বংস করে বনবিড়ালদের থাকার এমনকি প্রজননের পরিবেশও ধ্বংস করে দিয়েছি। তখন গ্রামের লোকজন নিজেরাই ইট পোড়াত। আর এই ইটের পাঁজায় বাসা বানাত বনবিড়ালেরা, বাচ্চা দিত। এখন তো আর মানুষ এভাবে ইট তৈরি করে না। ফলে নেই টলাদের থাকার জায়গাও। নেই আগের সেই গ্রামীণ বনও। গাছের কোটর, জলার তীরের ঝোপঝাড়েও বাসা বানায় এরা।
এদিকে একবার বড় হয়ে গেলে বনবিড়ালদের নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য হলেও বাচ্চাগুলো ধরতে তেমন বেগ পেতে হয় না। লুকানোর জায়গা কমে যাওয়ায় মা বনবিড়ালদের শত সতর্কতা সত্ত্বেও সহজেই খোঁজ পেয়ে যাচ্ছে দুষ্ট ছেলের দল। পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু।
এভাবেই যদি চলে, তাহলে একসময় মেছো বিড়ালদের মতো গ্রামীণ বন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে এরাও, তখন বনবিড়াল দেখতে কিংবা এর মউপ মউপ ডাক শুনতেও আমাদের পাড়ি জমাতে হবে দূরের কোনো অরণ্যে। প্রায়ই বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে বনবিড়াল পিটিয়ে মারার আর এদের বাচ্চা ধরা পড়ার ঘটনা চোখে পড়ে পত্রিকায়।
অবশ্য সুন্দরবন, সাঙ্গু-মাতামুহুরি, লাউয়াছড়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব অরণ্যেই বনবিড়াল এখনো আছে মোটামুটি। মনে পড়ে, বহু বছর আগে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রেমার জঙ্গলে গিয়ে ওখানকার বিট অফিসের পাশেই ছোট্ট এক গোরস্থান দেখেছিলাম। বিট কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ওখানে বন বিড়ালের আড্ডাখানা।
আশ্চর্য ঘটনা, ঢাকা শহরের সীমানার মধ্যেও খুব অল্প-বিস্তর হলেও এখনো টিকে আছে এরা। তবে ওই সব ঝোপঝাড়ময় জায়গাগুলোও খুব বেশি দিন খালি পড়ে থাকবে না। তখন ঢাকা শহর কিংবা এর আশপাশের জায়গার বনবিড়ালদেরও মানুষের পিটুনি খেয়ে মরতে হবে সন্দেহ নেই। শহর থেকে একটু দূরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো মোটামুটি ভালোভাবেই টিকে আছে এরা।
আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এই দিনে আমার চাওয়া—ভালো থাকুক গ্রামীণ বন, পাহাড়ি বন ও ঢাকা শহরের বনবিড়ালেরা। তেমনি ভালো থাকুক গোটা পৃথিবীর বনবিড়ালেরা। আমরা মানুষ যদি একটু সদয় হই, একটু ভালোবাসা দেখাই সুন্দর এই প্রাণীর প্রতি, তাহলেই কেবল এটা সম্ভব হবে।
এক যুগেরও আগের একটি গল্প দিয়ে শুরু করছি। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার একটি গ্রামীণ তিন রাস্তার মোড়। চারপাশে বেশ কয়েকটা টংঘর। যখনকার কথা বলছি, তখনই মোটামুটি ছোটখাটো একটা বাজারে রূপ নিয়েছে জায়গাটি। রাস্তা তিনটার একটা এসেছে ধর্মঘর বাজার থেকে। দক্ষিণেরটা চলে গেছে একেবারে ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম মোহনপুরের দিকে। আর উত্তরেরটার গন্তব্য দেবনগর নামের এক গ্রাম ।
সীমান্তের দিকে চলে যাওয়া পথটা ধরে একটু গেলেই বাঁয়ে বেশ কয়েকটা ঘর। এর একটার সামনে ছোট একটা চৌবাচ্চা। বর্ষার সময় বেশ পানি জমে। কুকুর-বিড়াল, গরু-বাছুর তৃষ্ণা মিটিয়ে নেয় এখানে। রাতে হয়তোবা শিয়াল-বনবিড়ালেরাও পান করে। অবশ্য এখন ওই চৌবাচ্চাটা সেখানে আর আছে কি না, বলতে পারব না।
প্রচণ্ড উত্তপ্ত একটা রাত পার হয়ে কেবল ভোর হয়েছে সেদিন। গরম কমেনি একটুও। দিনের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়নি। চুপি চুপি আশ্রয় থেকে বের হয়ে এসেছে একটা বনবিড়াল। বেচারা জানে, একবার কেউ দেখে ফেললে আর রেহাই নেই। পিটিয়ে হাড়গোড় এক করবে। কিন্তু গরমে গলাটা শুকিয়ে কাঠ। অন্তত দু-এক ঢোক জল পান না করলেই নয়। ওই তো কাছেই চৌবাচ্চাটা দেখা যাচ্ছে। এক দৌড়ে গিয়ে কয়েক ঢোক পানি পান করে আসবে।
দ্রুত চৌবাচ্চার কাছে চলে এসে চারদিকে একবার দেখে নিয়ে উবু হয়ে মুখ ডুবিয়ে দিল পানিতে। এ সময়ই অঘটনটা ঘটল। হঠাৎ করেই কীভাবে যেন পিছলে পড়ে গেল ভেতরে। কিন্তু চৌবাচ্চার ধারগুলো পানি থেকে কিছুটা উঁচুতে। শত চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না।
হয়তো বনবিড়ালটার তখন নিজের জন্য না, পেটের বাচ্চাগুলোর জন্যই মনটা কেঁদে উঠেছিল। আহহা! এরা যে পৃথিবীর আলো-বাতাসই দেখল না এখনো। এরই মধ্যে কোনো কারণে রাস্তায় বের হয় এক লোক। চৌবাচ্চায় পানির মধ্যে হাঁসফাঁস করতে দেখলেন প্রাণীটিকে। তার ‘টলা টলা’ চিৎকারে কাছেধারের বাড়িগুলো থেকে দৌড়ে এল মানুষ। অনেক দিন পর মনের সুখে পিটিয়ে ভূত বানানো যাবে একটা টলাকে।
এখানকার লোকদের কাছে বনবিড়ালের পরিচয় টলা। প্রথমে পানি থেকে তোলা হলো ওটাকে। তারপর শুরু হলো লাঠির বাড়ি। একপর্যায়ে রক্ত ঝরতে শুরু করল শরীর থেকে। আরও কিছুক্ষণ এভাবে পেটালে হয়তো পৃথিবীর মায়াই কাটাতে হতো ওটাকে। তার পরই কীভাবে যেন তার ফুলে ওঠা পেটটা চোখে পড়ল একজনের। হায় হায়, এটার পেটে তো বাচ্চা! লোকটা চেঁচিয়ে উঠতেই অন্যদেরও নজরে পড়ল বিষয়টা। যা হোক, থামল লাঠির বাড়ি। একজনের পরামর্শে টংঘরগুলোর ধারে এনে বেঁধে রাখা হলো । কিছুটা চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো। কোনোভাবে রক্তাক্ত শরীরটা টেনে টেনে হারিয়ে গেল ঝোপঝাড়ের রাজ্যে।
পরে বনবিড়ালটির ভাগ্যে কিংবা ওটার পেটের বাচ্চাগুলোর ভাগ্যে কী ঘটেছিল, তা জানা সম্ভব হয়নি। একটা সময় নানার বাড়ি দেবনগরে যেতাম প্রচুর। আর যখনই যেতাম, শুনতাম টলার নানা কাহিনি। হয়তো পরিচিত এক বড় ভাই এসে বলল, ‘তুষার, ওইদিন আমাদের পুকুরের ধারে একটা টলা পিটায়ে মাইরা ফেলছি সবাই মিলা। হাঁস-মুরগি খেয়ে বহুত জ্বালাতন করছিল ওটা।’ আবার মামাতো ভাই অর্ণব হয়তো এসে বলল, ‘তুষার ভাইয়া, ওই দিন বড় সাইজের একটা টলা দেখছি। প্রায় কুকুরের কাছাকাছি হইব।’ কিংবা পাশের বাড়ির মামি বললেন, ‘দেখছ, তুমি টলা টলা করো আর আমার সাধের চারটা হাঁসরে মাইরা রাইখা গেছে শয়তানটা।’
ব্যস্ততায় কিংবা ব্যস্ততার অজুহাতে এখন নানার বাড়িতে আগের মতো যাওয়া হয় না। তবে হঠাৎ হঠাৎ মানে পড়ে দেবনগরের বনবিড়ালদের কথা, আর মনে পড়ে টলা নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে তর্কের কথা। তাঁদের কথা, ইতানে হাঁস-মুরগি খাইয়া সাফ কইরা লায়। দাম দিতে পারবা? তাইলে আর মারতাম না। অভাবের সংসারে একটা-দুটো মুরগি-হাঁস হারানোও তো তাদের জন্য অনেক ক্ষতি। তাই মরতে হবে টলা বা বন বিড়ালদের। আর তাই দেবনগর আর আশপাশের এলাকায় বন বিড়ালদের এখন দেখা যায় কম। কেবল রাতে মাঝে মাঝে দূর থেকে ভেসে আসা ডাক ক্রমেই হারাতে বসা অস্তিত্বের জানান দিয়ে যায়।
খুব স্বাস্থ্যবান একটা বনবিড়াল আবার দেখেছিলাম নরসিংদীর চরসিন্দুরে সরওয়ার পাঠান ভাইদের ওখানে বেড়াতে গিয়ে। ওখানে বন বিড়ালকে বলে বাওরাল। তবে সরওয়ার ভাইদের বাড়ির পাশের একটু নিচে বেশ ঝোপঝাড়ে এখনো বনবিড়ালদের আস্তানা। কখনো-সখনো মুরগি লোপাট হলেও তাঁদের বাড়িতে বনবিড়াল মারা নিষিদ্ধ। সরওয়ার ভাই একবার মেছো বিড়ালের বাচ্চা মনে করে বন বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে এসেছিলেন। ওটাকে পুষেছিলেন। তার খুব বাধ্য ওই বনবিড়ালটার নাম ছিল এলসা। তবে ওটা অন্তত দুই যুগের বেশি আগের কাহিনি। আবার তাঁর নার্সারির ধারের একটা বড় গাছের গুঁড়িতে নিয়মিত নখের ধার পরীক্ষা করে প্রমাণ সাইজের একটার বনবিড়াল।
বনবিড়াল সম্পর্কে দু-চারটি তথ্য জানিয়ে রাখছি। আকারে, ওজনে পোষা বিড়ালের দ্বিগুণ বলতে পারেন একে। গায়ে ডোরা নেই, তবে লেজে কালো বলয়ের মতো থাকে। গায়ের রং ধূসর, বাদামি। মুরগি চুরির অপবাদ থাকলেও ওটা কালেভদ্রেই করে, প্রধান খাবার ইঁদুর, পাখি, ব্যাঙ। গাছে চড়ায় দারুণ পারদর্শী হওয়ায় পাখি শিকারেও ওস্তাদ। যদ্দুর জানা যায়, বছরে দুবার বাচ্চা দেয় এরা। জংলি বিড়াল, খাগড়া বিড়াল, জলাভূমির বিড়াল নামেও পরিচিত।
গোটা বাংলাদেশের বেশির ভাগ গ্রামে এখন এমনই বিপদে বনবিড়ালরা। কিন্তু আগেও তো মুরগি চুরির অপরাধে বন বিড়াল মারা যেত মানুষের হাতে। তখন তো এরা এতটা কমেনি সংখ্যায়। কারণ তখন এদের থাকার পরিবেশ ছিল, এরা সংখ্যায়ও ছিল বেশি। আর এখন আমরা ইচ্ছামতো গ্রামীণ বন ধ্বংস করে বনবিড়ালদের থাকার এমনকি প্রজননের পরিবেশও ধ্বংস করে দিয়েছি। তখন গ্রামের লোকজন নিজেরাই ইট পোড়াত। আর এই ইটের পাঁজায় বাসা বানাত বনবিড়ালেরা, বাচ্চা দিত। এখন তো আর মানুষ এভাবে ইট তৈরি করে না। ফলে নেই টলাদের থাকার জায়গাও। নেই আগের সেই গ্রামীণ বনও। গাছের কোটর, জলার তীরের ঝোপঝাড়েও বাসা বানায় এরা।
এদিকে একবার বড় হয়ে গেলে বনবিড়ালদের নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য হলেও বাচ্চাগুলো ধরতে তেমন বেগ পেতে হয় না। লুকানোর জায়গা কমে যাওয়ায় মা বনবিড়ালদের শত সতর্কতা সত্ত্বেও সহজেই খোঁজ পেয়ে যাচ্ছে দুষ্ট ছেলের দল। পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু।
এভাবেই যদি চলে, তাহলে একসময় মেছো বিড়ালদের মতো গ্রামীণ বন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে এরাও, তখন বনবিড়াল দেখতে কিংবা এর মউপ মউপ ডাক শুনতেও আমাদের পাড়ি জমাতে হবে দূরের কোনো অরণ্যে। প্রায়ই বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে বনবিড়াল পিটিয়ে মারার আর এদের বাচ্চা ধরা পড়ার ঘটনা চোখে পড়ে পত্রিকায়।
অবশ্য সুন্দরবন, সাঙ্গু-মাতামুহুরি, লাউয়াছড়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব অরণ্যেই বনবিড়াল এখনো আছে মোটামুটি। মনে পড়ে, বহু বছর আগে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রেমার জঙ্গলে গিয়ে ওখানকার বিট অফিসের পাশেই ছোট্ট এক গোরস্থান দেখেছিলাম। বিট কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ওখানে বন বিড়ালের আড্ডাখানা।
আশ্চর্য ঘটনা, ঢাকা শহরের সীমানার মধ্যেও খুব অল্প-বিস্তর হলেও এখনো টিকে আছে এরা। তবে ওই সব ঝোপঝাড়ময় জায়গাগুলোও খুব বেশি দিন খালি পড়ে থাকবে না। তখন ঢাকা শহর কিংবা এর আশপাশের জায়গার বনবিড়ালদেরও মানুষের পিটুনি খেয়ে মরতে হবে সন্দেহ নেই। শহর থেকে একটু দূরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো মোটামুটি ভালোভাবেই টিকে আছে এরা।
আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এই দিনে আমার চাওয়া—ভালো থাকুক গ্রামীণ বন, পাহাড়ি বন ও ঢাকা শহরের বনবিড়ালেরা। তেমনি ভালো থাকুক গোটা পৃথিবীর বনবিড়ালেরা। আমরা মানুষ যদি একটু সদয় হই, একটু ভালোবাসা দেখাই সুন্দর এই প্রাণীর প্রতি, তাহলেই কেবল এটা সম্ভব হবে।
পাঁচ বছর আগে প্লাস্টিক দূষণ রোধের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের এক জোট গড়ে তুলেছিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তেল ও রাসায়নিক কোম্পানিগুলো। কিন্তু নতুন তথ্য বলছে, এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে, তা তাদের অপসারিত বর্জ্যের তুলনায় ১ হাজার গুণ বেশি।
১০ ঘণ্টা আগেঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা তুলনামূলক কমলেও অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। বাতাসের মান সূচকে আজ ঢাকা দূষণের মাত্রা ১৮১, অবস্থান ষষ্ঠ। অন্যদিকে দুদিনের ব্যবধানে আবারও পাকিস্তানের লাহোর বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। এরপরে আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। এ ছাড়াও শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে মঙ্গোলিয়া ও ই
১৯ ঘণ্টা আগেভারতের রাজধানী দিল্লি এবং এর সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণ আজও ভয়াবহ মাত্রায় রয়েছে। আজ বুধবার সকালে শহরের বেশির ভাগ এলাকায় বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা দিল্লি শহর, দৃশ্যময়তা কমে যাওয়ার ফলে পরিবহন ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়েছে। এর পরে আছে পাকিস্তানের শহর লাহোর...
২ দিন আগেভারতের রাজধানী দিল্লি এবং এর সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে শহরের বেশির ভাগ এলাকায় বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। এটি চলতি মরসুমে সর্বোচ্চ এবং ‘অতি ভয়ানক’ পর্যায়ে রয়েছে।
৩ দিন আগে