মৃৎশিল্পে প্রযুক্তি, বদলে গেছে কুমারদের জীবন

মোহাম্মদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০১
আপডেট : ০৮ মে ২০২২, ১১: ০২

প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের পালপাড়ার মৃৎশিল্পে। বদলে গেছে পালপাড়ার কুমারদের জীবন-জীবিকা। এখানকার মৃৎশিল্পীদের আর প্রচলিত পদ্ধতিতে চাক ঘোরাতে হয় না। তাঁরা প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করছেন মৃৎশিল্পের বিভিন্ন উপকরণ। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ব্যবহার করে মৃৎশিল্পের কারিগরদের শারীরিক শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে। তাঁরা স্বল্প সময় ও কম খরচে অধিক পরিমাণে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করতে পারছেন। এতে বদলে যেতে শুরু করেছে মৃৎশিল্পীদের অর্থনৈতিক অবস্থা।

জানা যায়, এস এম মজিবর রহমান উপজেলার নশরতপুর গ্রামের দিঘলনালীপাড়ার মৃত নছিরউদ্দিন শাহ্‌র ছেলে। পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তিনি ভাবেন কীভাবে পাল সম্প্রদায়ের মানুষদের কষ্ট লাঘব করা যায়। এ স্বপ্ন ও ভাবনা থেকেই তিনি উদ্ভাবন করেন কুমারদের জন্য বৈদ্যুতিক চাক মেশিন। মেশিনটি এসি বৈদ্যুতিক মোটরের পরিবর্তে ডিসিতে রূপান্তরিত হয়ে স্বল্প বিদ্যুৎ খরচে ঘুরছে। এ মেশিন ২ দশমিক ৫ অশ্ব শক্তিতে এক হাজার ৪৭০ আরপিএম (গতি) রেগুলেটরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি তৈরিতে খরচ পড়ছে মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা।

এস এম মজিবর রহমান জানান, এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে মৃৎশিল্পে জড়িত কারিগরদের সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে এবং তিন গুণ উৎপাদন বেশি হবে। ফলে মৃৎশিল্প অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী হবে।

এস এম মজিবর রহমান আরও বলেন, ‘আমি অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারছি না। এ মেশিনটি কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, তার চিন্তাভাবনা করছি। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য-সহযোগিতা পেলে এ মেশিন বৃহৎ পরিসরে বাজারজাত করতে সক্ষম হব ইনশা আল্লাহ।’

মৃৎশিল্পী নিরঞ্জন পাল (৩৮) বলেন, ‘আগে আমরা প্রচলিত পদ্ধতিতে মাটি দিয়ে সারা দিন মাত্র ১০০ থেকে ১৫০টি ফুলের টব বা হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করতে পারতাম। এখন এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন দিয়ে ৭০০ থেকে ১ হাজার মাটির ফুলের টব বা হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করতে পারছি।’

শ্যামল চন্দ্র পাল (৫০) বলেন, ‘এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনে বিদ্যুৎ খরচ কম। একটি মেশিনে মাসে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। এ মেশিন ব্যবহারে সময় ও শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবন্ধী রূপ কুমার পাল (৩০) এ চাক মেশিন ব্যবহার করে মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র অনায়াসে তৈরি করতে পারছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত