আনিসুল ইসলাম নাঈম
নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং হলো প্রকৌশলবিদ্যার একটি ফলিত শাখা, যেখানে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভাঙন (ফিশন), সংযোজন (ফিউশন), তেজস্ক্রিয়তা ও নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যা-সংক্রান্ত ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এই প্রকৌশলবিদ্যার একটি শাখা হলো নিউক্লিয়ার ফিশন প্রযুক্তি। একজন নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা প্রস্তুত, নির্মাণ, অপারেশন এবং পরিষেবা থেকে প্রত্যাহার করার কাজ করে থাকেন। তিনি নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন শাখার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান বের করেন। এ ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দক্ষতা, স্থায়িত্ব বাড়ানো এবং তা টেকসই করার উপায় বের করেন। এ বিভাগে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হোসাইন শাহাদাত।
পড়ার যোগ্যতা কী
স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও মেধাতালিকায় স্থান থাকা সাপেক্ষে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান। উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভর্তির মানদণ্ড ভিন্ন হয়। যেমন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার জন্য উচ্চমাধ্যমিক পাসের পরে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে হবে। যাদের উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে ন্যূনতম ‘এ’ গ্রেড ও ভর্তি পরীক্ষায় উক্ত বিষয়গুলোয় ন্যূনতম ১৫ নম্বর করে পাবেন শুধু তারাই নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ তাদের পছন্দের তালিকায় পাবেন। ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা এ বিভাগে পড়ার সুযোগ পাবেন। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি একটি স্পেশালাইজড বিষয় ও বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনেক বেশি। তাই ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথম সারিতে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে ভালো করতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে পারদর্শী থাকতে হয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের দক্ষতা থাকতে হয়।
কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ২০১২-১৩ সেশনে এমএস প্রোগ্রামের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এবং তার পরবর্তী সেশনে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। তাই এই বিভাগটি বাংলাদেশে পারমাণবিক প্রকৌশল শিক্ষায় পথপ্রদর্শক। উক্ত বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি যথাক্রমে চার ও দেড় বছরের প্রোগ্রাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) ‘নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি প্রদান করে।
কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়
পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষেত্র থাকায় নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার বিষয়ের অনেক শাখা ও প্রশাখা রয়েছে। প্রধান শাখা হলো নিউক্লিয়ার ফিশন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং। যেখানে শিক্ষার্থীরা নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক চুল্লি ডিজাইন, অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে। এ ছাড়া জ্বালানি প্রস্তুতকরণ ও ব্যবহারের পর এর সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং পারমাণবিক চুল্লির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করে থাকেন। প্লাজমা পদার্থবিজ্ঞান ও ফিউশন প্রযুক্তি আরেকটি অন্যতম শাখা। এ শাখায় নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করা হয়। ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত জ্বালানি ও কাঠামোগত উপাদানের ওপর বিকিরণের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। এ ছাড়া চুল্লির উচ্চ তাপমাত্রা ও বিকিরণের সহনশীল পদার্থ উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করা হয়। স্বাস্থ্য পদার্থবিজ্ঞান আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিকিরণের বায়োলজিক্যাল ইফেক্ট, বিকিরণ পরিমাপ এবং প্রতিরোধ বিষয়ের জ্ঞানার্জন করেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে রেডিয়েশন ও রেডিও আইসোটোপ ব্যবহার অনস্বীকার্য। নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও রেডিয়েশন ইমেজিং বিষয় পড়ে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীরা এর যেকোনো একটি শাখায় দক্ষতা অর্জন করেন। তবে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কিছু মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম Reactor Theory, Nuclear Fuel Cycle, Radioactive Waste Management, Security and Safeguards, Reactor Design, Safety and Risk Analysis etc.
চাকরি সুযোগ কেমন
বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কর্মক্ষেত্র ব্যাপক না হলেও, শিক্ষার্থীদের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষার পরে বিদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থায় কাজের সুযোগ আছে। রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগও।
নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা কেমন
প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে দক্ষ নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রোগ্রাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই চাহিদা বাড়বে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন নিউক্লিয়ার মেডিসিন চিকিৎসাকেন্দ্র এবং রেডিও আইসোটোপ ব্যবহারকারী ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ তৈরি করা হলে দেশে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়বে।
পড়াশোনার খরচ কেমন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার খরচ ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি অনুষদের অন্য যেকোনো বিভাগের মতোই। এমআইএসটিতে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। উল্লেখ্য, কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম এখনো চালু হয়নি।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন
পেশাগত যোগ্যতা এবং গবেষণা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন হলেও বহির্বিশ্বে বহু আগে থেকেই নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রম চলছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বৃত্তিসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবছর বাংলাদেশের দক্ষ এবং যোগ্য শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন—Erasmus Mundus Scholarship-এ প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স করার সুযোগ পাচ্ছেন। এসব প্রোগ্রামে সুযোগ পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন করতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার দক্ষতার মানদণ্ড হিসেবে আইইএলটিএস অথবা টোফেল স্কোর থাকা বাধ্যতামূলক। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে জিআরই স্কোর প্রয়োজন হয়।
মো. হোসাইন শাহাদাত, সহকারী অধ্যাপক, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম
নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং হলো প্রকৌশলবিদ্যার একটি ফলিত শাখা, যেখানে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভাঙন (ফিশন), সংযোজন (ফিউশন), তেজস্ক্রিয়তা ও নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যা-সংক্রান্ত ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এই প্রকৌশলবিদ্যার একটি শাখা হলো নিউক্লিয়ার ফিশন প্রযুক্তি। একজন নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা প্রস্তুত, নির্মাণ, অপারেশন এবং পরিষেবা থেকে প্রত্যাহার করার কাজ করে থাকেন। তিনি নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন শাখার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান বের করেন। এ ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দক্ষতা, স্থায়িত্ব বাড়ানো এবং তা টেকসই করার উপায় বের করেন। এ বিভাগে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হোসাইন শাহাদাত।
পড়ার যোগ্যতা কী
স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও মেধাতালিকায় স্থান থাকা সাপেক্ষে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান। উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভর্তির মানদণ্ড ভিন্ন হয়। যেমন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার জন্য উচ্চমাধ্যমিক পাসের পরে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে হবে। যাদের উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে ন্যূনতম ‘এ’ গ্রেড ও ভর্তি পরীক্ষায় উক্ত বিষয়গুলোয় ন্যূনতম ১৫ নম্বর করে পাবেন শুধু তারাই নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ তাদের পছন্দের তালিকায় পাবেন। ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা এ বিভাগে পড়ার সুযোগ পাবেন। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি একটি স্পেশালাইজড বিষয় ও বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনেক বেশি। তাই ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথম সারিতে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে ভালো করতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে পারদর্শী থাকতে হয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের দক্ষতা থাকতে হয়।
কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ২০১২-১৩ সেশনে এমএস প্রোগ্রামের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এবং তার পরবর্তী সেশনে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। তাই এই বিভাগটি বাংলাদেশে পারমাণবিক প্রকৌশল শিক্ষায় পথপ্রদর্শক। উক্ত বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি যথাক্রমে চার ও দেড় বছরের প্রোগ্রাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) ‘নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি প্রদান করে।
কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়
পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষেত্র থাকায় নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার বিষয়ের অনেক শাখা ও প্রশাখা রয়েছে। প্রধান শাখা হলো নিউক্লিয়ার ফিশন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং। যেখানে শিক্ষার্থীরা নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক চুল্লি ডিজাইন, অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে। এ ছাড়া জ্বালানি প্রস্তুতকরণ ও ব্যবহারের পর এর সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং পারমাণবিক চুল্লির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করে থাকেন। প্লাজমা পদার্থবিজ্ঞান ও ফিউশন প্রযুক্তি আরেকটি অন্যতম শাখা। এ শাখায় নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করা হয়। ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত জ্বালানি ও কাঠামোগত উপাদানের ওপর বিকিরণের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। এ ছাড়া চুল্লির উচ্চ তাপমাত্রা ও বিকিরণের সহনশীল পদার্থ উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করা হয়। স্বাস্থ্য পদার্থবিজ্ঞান আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিকিরণের বায়োলজিক্যাল ইফেক্ট, বিকিরণ পরিমাপ এবং প্রতিরোধ বিষয়ের জ্ঞানার্জন করেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে রেডিয়েশন ও রেডিও আইসোটোপ ব্যবহার অনস্বীকার্য। নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও রেডিয়েশন ইমেজিং বিষয় পড়ে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীরা এর যেকোনো একটি শাখায় দক্ষতা অর্জন করেন। তবে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কিছু মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম Reactor Theory, Nuclear Fuel Cycle, Radioactive Waste Management, Security and Safeguards, Reactor Design, Safety and Risk Analysis etc.
চাকরি সুযোগ কেমন
বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কর্মক্ষেত্র ব্যাপক না হলেও, শিক্ষার্থীদের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষার পরে বিদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থায় কাজের সুযোগ আছে। রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগও।
নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা কেমন
প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে দক্ষ নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রোগ্রাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই চাহিদা বাড়বে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন নিউক্লিয়ার মেডিসিন চিকিৎসাকেন্দ্র এবং রেডিও আইসোটোপ ব্যবহারকারী ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ তৈরি করা হলে দেশে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়বে।
পড়াশোনার খরচ কেমন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার খরচ ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি অনুষদের অন্য যেকোনো বিভাগের মতোই। এমআইএসটিতে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। উল্লেখ্য, কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম এখনো চালু হয়নি।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন
পেশাগত যোগ্যতা এবং গবেষণা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন হলেও বহির্বিশ্বে বহু আগে থেকেই নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রম চলছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বৃত্তিসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবছর বাংলাদেশের দক্ষ এবং যোগ্য শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন—Erasmus Mundus Scholarship-এ প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স করার সুযোগ পাচ্ছেন। এসব প্রোগ্রামে সুযোগ পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন করতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার দক্ষতার মানদণ্ড হিসেবে আইইএলটিএস অথবা টোফেল স্কোর থাকা বাধ্যতামূলক। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে জিআরই স্কোর প্রয়োজন হয়।
মো. হোসাইন শাহাদাত, সহকারী অধ্যাপক, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৬ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে