সুরে সুরে যন্ত্রগুলোস্মৃতির দেশে টানে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১: ১২

যন্ত্রগুলোর একেকটার বয়স ৮০, ৯০ কিংবা ১০০ বছর। সেই সময়টাতে এগুলোই ছিল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। কলের গান নামে পরিচিত এই গ্রামোফোন যন্ত্রগুলো ঘুরে ঘুরে অতিথিদের দেখাচ্ছিলেন স্থপতি ও লেখক শামীম আমিনুর রহমান।

যাঁরা দেখছিলেন, তাঁদের মধ্যে তরুণ-তরুণী যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন বয়স্করাও। শেষোক্তদের কাছে এ এক দারুণ সুযোগ। যন্ত্রগুলো তাঁদের টেনে নিয়ে যায় শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যে। ভরদুপুরে কিংবা ঝিঁঝি ডাকা নিস্তব্ধ রাতে সুরের মূর্ছনায় ভাসাত যন্ত্রগুলো।

গত শতকের বিশ-ত্রিশ থেকে চল্লিশ-ষাটের দশকের কলের গানের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে। ‘কলের গান সেকাল-একাল’ শীর্ষক গতকাল শনিবার উদ্বোধন করা হয়েছে। জাতীয় জাদুঘর ও শামীম আমিনুর রহমানের আয়োজনে ১৬ দিনের এই প্রদর্শনী চলবে ১২ মে পর্যন্ত।

শামীম আমিনুর রহমান দেখাচ্ছিলেন তাঁর সংগ্রহে থাকা জুনিয়র মোনার্ক হর্ন গ্রামোফোন, স্প্রিং মোটরচালিত গ্রামোফোন, গত শতকের ত্রিশের দশকের পোর্টেবল গ্রামোফোন এইচএমভি মডেল ১০২, বিশের দশকের এইচএমভি হর্ন মডেলের গ্রামোফোন। দর্শকদের কেউ একজন একটি রেকর্ড নিয়ে এলে তিনি সেটি বাজিয়ে দিলেন একটি গ্রামোফোনে।

এসব কলের গানের পাশাপাশি শামীম আমিনুরের সংগ্রহে আছে দুষ্প্রাপ্য গ্রামোফোন রেকর্ডও। সে সংখ্যাটাও তিন হাজারের বেশি বলে জানালেন। সেগুলোও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

রেকর্ডের মধ্যে আছে ঝিজিত কাম্বাগের ‘মন বাঁধা যার কাছে’, পণ্ডিত অবিনাশ চন্দ্র চ্যাটার্জির ‘নাচিয়ে নাচিয়ে একবার আয় রে নীলমণি’, বেদানা দাসীর ‘আজ তোমারে দেখতে এলাম’। এ ছাড়া আছে কানন দেবী, আঙ্গুরবালা দেবী, কমলা ঝারিয়া, ইন্দুবালা, বিখ্যাত জানকী বাই ও গওহর জানের রেকর্ড।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। তিনি বলেন, ‘আজকে যখন হেঁটে যন্ত্রগুলো দেখছিলাম, তখন খুবই নস্টালজিক লাগছিল। আমরা এগুলো দেখেছি, কিন্তু নতুন প্রজন্ম কি এগুলো দেখেছে?’

প্রধান অতিথি পারিবারিক স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, তাঁর বাবার জন্য বিদেশ থেকে কেউ কিছু আনতে চাইলে বই ও গ্রামোফোন রেকর্ড আনার কথা বলতেন। বাড়িতে তাঁর বাবা-মা রেকর্ড শুনতে বসতেন। এগুলো সন্তান হিসেবে তাঁদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। 
বিশেষ অতিথি শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘আমি যখন ঢুকলাম তখন মনে হলো অনেকগুলো যুগের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলেছি। এই যন্ত্রগুলো আমাদের সেই সময়কে মনে করিয়ে দেয়।’

বিশেষ অতিথি আরও বলেন, ‘আমাকেও এই পাগলামিতে ধরেছিল। আমিও রেকর্ড কালেকশন করতাম। আমরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিলাম। আমারও প্রায় হাজার চারেক রেকর্ড ছিল।’

স্বাগত বক্তব্যে স্থপতি ও লেখক শামীম আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব একটা স্বর্ণালি ঐতিহ্য আছে। সেগুলো খুঁজে দেখতে চাই। গ্রামোফোন রেকর্ডও আমাদের এখানে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এটা আমরা জানি না। সেটা জানিয়ে দেওয়া এবং জাদুঘরে আসা সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের ঐতিহ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আমার এই আয়োজন।’

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, লেখক ও ভ্রমণপিয়াসী এলিজা বিনতে এলাহী। দ্য হিস্টোরিক্যাল ওয়ার্ল্ড অব শামীম আমিনুর রহমান নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও দেখানো হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত