Ajker Patrika

বরইয়ে বাঁকবদল ইমরানের

ফারুক হোসাইন রাজ, কলারোয়া (সাতক্ষীরা)
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৩৩
বরইয়ে বাঁকবদল ইমরানের

শিক্ষাজীবনে এমন লম্বা বিরতি কখনো আসেনি। করোনার প্রভাবে চারদিকে দুঃখ-কষ্ট আর হতাশা। কবে কলেজে আবার ক্লাস শুরু হবে, কবে শেষ হবে অনার্স। এরপর ছুটতে হবে সরকারি চাকরির পেছনে। সামনে এক মহাযুদ্ধ! এসব দুশ্চিন্তা জেঁকে ধরেছিল ইমরানকে। তবে সমস্যা বেশি দূর এগোতে দেননি তিনি। ছোটবেলা থেকে কৃষক বাবাকে সঙ্গ দিতে দিতে কৃষিটা ভালোই শিখে নিয়েছিলেন। বরই চাষ করে অবশেষে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন ইমরান।

সাতক্ষীরা সদর থেকে ২০ কিলোমিটারের পথ কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়ন। হেলাতলার ব্রজাবাক্স গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে ইমরান হুসাইন (২৩)। সাতক্ষীরা সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। তাঁর একটি সিদ্ধান্ত পরিবারে স্বচ্ছন্দ এনে দিয়েছে। গল্পটা আজকের পত্রিকাকে জানান ইমরান।

উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ২০১৭ সালে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত হন তিনি। সবজি চাষ করেও সংসারের অভাব যাচ্ছিল না। ২০১৮ সালে এসে ইমরান সিদ্ধান্ত নেন সবজির পরিবর্তে পেয়ারা বাগান করবেন। তিন বিঘা জমিতে বাপ-ছেলে মিলে ৩০০টি থাই-৩ জাতের পেয়ারার চারা রোপণ করেন। নিবিড় পরিচর্যায় গাছগুলো বেশ বেড়ে উঠছিল। পেয়ারা বিক্রি করে টুকটাক লাভও হচ্ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের সাইক্লোন আম্ফানে লন্ডভন্ড হয়ে যায় পুরো পেয়ারা বাগান।

ইমরান বলেন, ‘একদিকে করোনায় তখন ক্লাস বন্ধ, অন্যদিকে বাগানটাও শেষ। মাঝে একবার ভেবেছিলাম ফ্রান্সে চলে যাব। কিন্তু এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। তাই আবার কৃষিতেই মন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আর এতেই সফলতা আসে।’

পেয়ারাবাগান নষ্ট হওয়ার পর ইমরান মন দেন বরইতে। এবার সাত বিঘা জমিতে বল কুল, টক কুল ও থাই আপেল জাতের চারা রোপণ করেন তিনি। এক বছর পরই গাছে ফল আসতে থাকে। চলতি মৌসুমে তাঁর বাগানে বরইয়ের বাম্পার ফলন হয়। বিঘাপ্রতি ৭০-৭৫ মণ বড়ই হয়েছে। ইমরান জানান, প্রতি মণ সর্বনিম্ন ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ টাকা দাম পড়ছে বাজারে। বিঘাপ্রতি খরচ ৬০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা বরইয়ে দেড় লক্ষাধিক টাকা করে আসছে।

ইমরান বলেন, ‘একসময় আমিও ভেবেছি সরকারি চাকরি করব। এখন আর চাকরির কথা ভাবি না। আমি বাগান নিয়েই খুশি। আমার পরিবারের অভাবও নেই এখন।’

ইমরানের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমি ধান ও বিভিন্ন মৌসুমি সবজি চাষ করতাম। ছেলের পরামর্শে প্রথমে পেয়ারা বাগান করি। পেয়ারা বাগান থেকে বেশ লাভ হচ্ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সব নষ্ট হয়। যে কারণে আমরা কুল বাগান করি। এখন ভালোই লাভ আসছে।’

কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পৌরসভা এবং সবকটি ইউনিয়নের সব জায়গায় কমবেশি কুল চাষ হয়। এর মধ্যে কেরালকাতা এবং সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে হয় সবচেয়ে বেশি। এ বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ৩২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। গত বছর যা ছিল ৩০০ হেক্টর জমিতে। ইমরানের মতো প্রায় সব চাষিকে আমরা উৎসাহ দিই, সহযোগিতা করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত