Ajker Patrika

মান্নাতের দাপটে খাদি চাপা

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫১
মান্নাতের দাপটে খাদি চাপা

কুমিল্লার খাদি কাপড় একসময় ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এখনো বছরজুড়ে জেলায় এই কাপড়ে তৈরি পোশাকের আলাদা কদর রয়েছে। কিন্তু ঈদে ভারতীয় ও পাকিস্তানি মান্নাত-কারিজমার ভিড়ে সেই খাদি কুমিল্লাতেই জায়গা পাচ্ছে না।

ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লার বিপণিবিতানগুলোতে বাহারি পোশাকের দেখা মিলছে। এর প্রায় সবই বিদেশি। নগরীর সব দোকানেই তরুণীদের চাহিদা মাথায় রেখে ভারতের মুম্বাই, কলকাতা ও পাকিস্তানি পোশাক তুলেছেন বিক্রেতারা। এবার বিদেশি সূতি, সিল্ক ও জর্জেট কাপড়ের তৈরি থ্রি-পিসের নতুনত্বে তরুণীদের চোখ দেশি পণ্যের দিকে যাচ্ছে না।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাকিস্তান, কলকাতা ও মুম্বাইয়ের বেশির ভাগ থ্রিপিসই সিল্ক ও জর্জেটের। এতে নকশা, রং, কারুকাজে রয়েছে বাড়তি চাকচিক্য। এসব উল্টে-পাল্টে দেখে নিজেদের রুচির সঙ্গে মিলিয়ে কিনে নিচ্ছেন তরুণীরা। বর্তমানে নগরীর দোকানপাটে প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিক্রিও বেড়েছে।

এবারের ঈদে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান, মুম্বাই ও কলকাতার তৈরি সিল্ক ও জর্জেটের থ্রিপিস। এসব গুলজার, মান্নাত, মিনহাল, নূর, কারিজমা, তায়াওক্কাল, রিলেশা, মিলান, আনজারা, আফরিন নামে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া গঙ্গা, বিবেকের কটনের থ্রিপিস রয়েছে।

নগরীর সুজানগর এলাকার বাসিন্দা মো. রাজিব বলেন, খাদি কাপড় একটু মোটা ও সাদামাঠা হয়ে থাকে। আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ কাপড় এগোতে না পারায় তরুণদের পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়ছে। মানুষ এখন চাকচিক্য পছন্দ করে।

নগরীর সাত্তার খান শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসা লামিয়া তাবাসসুম নামের এক ক্রেতা বলেন, কুমিল্লার খাদি বা বাটিক কাপড় বাসায় পড়ার জন্য কেনা হয়। এ কাপড় দামেও অনেক কম। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে এ কাপড় চলে না।

আরেক ক্রেতা ইসরাত জাহান সাফা বলেন, ঈদে ও বিভিন্ন পার্টিতে সাধারণ কাপড় পড়ে কি যাওয়া যায়! তাই বিদেশি জমকালো জামা কিনলাম।

কুমিল্লা খাদি বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও খাদি ঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কান্তি রাহা বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদি কাপড় আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। মোটা কাপড় পাতলা করা হচ্ছে। ঈদে অন্যান্য কাপড় থেকে পাঞ্জাবি বেশি চলে। তবে মেয়েদের পোশাক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি না করতে পারায় কম চলে। খাদি কাপড়ের দেশ বিদেশে চাহিদা রয়েছে।

এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর কান্দিরপাড় মনোহরপুরের সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক টাওয়ার, ময়নামতি গোল্ডেন টাওয়ার, নূর মার্কেট, সাইবার ট্রেড, নূর মার্কেট, আনন্দ সিটি সেন্টার, হিলটন টাওয়ার, নিউ মার্কেট, হোসনেআরা ম্যানসন, সাইবার ট্রেড, গণি ভূঞা ম্যানসন, চৌরঙ্গী শপিং সেন্টার, লাকসাম রোডে বিবি সমতট, রামঘাট এলাকায় কুমিল্লা টাওয়ার, রেসকোর্সে ইস্টার্ন এয়াকুব প্লাজায় বিদেশি পোশাকের ভিড়েও দেশীয় ফ্যাশনের প্রতি তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করছে আড়ংয়ের মতো কিছু নামকরা ব্র্যান্ডের পোশাক।

এদিকে এবার রোজার মাঝামাঝিতেই পোশাক কেনার জোর প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর মনোহরপুর নূর মার্কেটের রিলেশান থ্রিপিস সেন্টারে পোশাক কিনতে আসা বাগিচাগাও এলাকার শিক্ষার্থী তারিন আফরোজ জানান, ক্যাটালগের সবচেয়ে সুন্দর নকশার পোশাক আগেভাগে না কিনলে পরে পছন্দেরটা মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আগে-ভাগেই পছন্দের পোশাক কিনে নিলাম।

রিলেশানের পরিচালক আলী হায়দার কামাল জানান, ‘তরুণীদের পছন্দের তালিকায় পাকিস্তান ও ভারতীয় ড্রেসের চাহিদা সব সময়ই থাকে। এবারে সিল্ক ও জর্জটের পোশাকের প্রতি তরুণীদের আগ্রহ বেশি। এবারের পোশাকে ডিজাইনের দিক থেকে অন্যবারের চেয়ে অনেক ভিন্নতা ও নান্দনিকতা রয়েছে।

নগরীর কান্দিরপাড় খাদি জোন্সার স্বত্বাধিকারী তপন কুমার পাল বলেন, বিদেশি পোশাকের সঙ্গে দেশি পোশাকও পাল্লা দিয়ে চলছে। পড়তে আরাম ও দামে কম হওয়াই ক্রেতারা আসছে দেশি পণ্য কিনতে। কমদামে খাদির পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, থ্রিপিসসহ নানা পোশাক রয়েছে।

কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, গত কয়েক বছর মহামারি করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়েছেন। তাঁরা পুঁজি সংকটে ভুগছেন। বিভিন্নভাবে ধার-দেনা করে এবারের ঈদে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। আশা করি, ঈদের কেনাকাটা আরও জমে উঠলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তিবোধ করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত