ড্যাম ফেটে বিপাকে কৃষক

মাঈনুদ্দিন খালেদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (চট্টগ্রাম )
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ০৫: ৩১
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ২৮

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাসংলগ্ন রাবার ড্যাম ফেটে বড়জামছড়ি খালের পানি নিচে নেমে গেছে। এতে রাবার ড্যামের অধীনে চাষাবাদ করতে না পারার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে ড্যাম সেলাই বা নতুন ড্যাম বসিয়ে আবার পানি তোলা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় চাষিরা। এই ড্যামের ওপর নির্ভরশীল অন্তত দুই হাজার কৃষক।

কৃষকদের অভিযোগ, কোনোভাবে পানি কমে গেলে রাবার ড্যামের ওপরের অংশ থেকে বালু তোলা সহজ হয়। এ কারণে বালু ব্যবসায়ীদের কেউ ড্যাম ফুটো করে পানি কমিয়ে ফেলে থাকতে পারেন। এ ছাড়া রাবার ড্যামের ওপর দিয়ে চোরাই কাঠ পাচার এবং উপজেলা কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বড়জামছড়ি খালের মৌলভীকাটা এলাকায় দেড় দশক আগে ড্যামটি নির্মাণ করে এলজিইডি। ড্যামটির উজানের রামু উপজেলা সদর থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হলেও ভাটিতে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর থেকে এর দূরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। এই রাবার ড্যামের অধীনে ছয়টি বিল এলাকায় ধানের আবাদ করা হয়। এ জন্য বড়জামছড়ি রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি আছে রামু সমবায় কার্যালয়ের অধীনে। এতে সদস্য রয়েছেন ৯৯১ জন। কৃষক রয়েছেন দুই হাজারের বেশি। এঁদের অধিকাংশই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাসিন্দা।

গত মঙ্গলবার রাতে রাবার ড্যামটি ফুটো হয়ে যায়। পরদিন বুধবার সকালে বিষয়টি সবার গোচরে আসে। এরপরই রাবার ড্যামটি চুপসে যায়, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ঠিক হয়নি।

কচ্ছপিয়া ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকের আহমদ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, রাবার ড্যাম কচ্ছপিয়ার কৃষকের প্রধান ভরসা। ড্যামের রাবার ফেটে গিয়ে দুই দিন ধরে পানি নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ দেওয়ার পানির স্তর নেই।

কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন, এখন সেলাই করলেও তেমন কাজ হবে না। হয়তো মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কৃষক তাঁদের ধানের আবাদ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, ‘ড্যাম ফেটে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। এগুলোর মধ্যে বালুদস্যুদের অপতৎপরতা একটি বড় কারণ। হয়তো কৃষিকাজের চেয়ে কোটি টাকার বালু লুটই তাঁদের কাছে বেশি প্রয়োজন। এ ছাড়া রাবার বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো লোক দেখা যায়নি। তদারকির অভাব, এককভাবে পরিচালনার কারণে রাবার ড্যামের এই অবস্থা হলো।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক কৃষক আজকের পত্রিকার কাছে অভিযোগ করেন, বড়জামছড়ি রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি জহির উদ্দিন নিজেই বালু ব্যবসায় যুক্ত। তাঁর হাতে ড্যাম ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যাওয়ায় পর থেকে রক্ষণাবেক্ষণ বলতে কিছুই হচ্ছে না। রাতের আঁধারে উজান থেকে বড় বড় কাঠ এনে ড্যামের ওপর দিয়ে খালের নিচের অংশে পারাপার করা হয়। এ ছাড়া অদক্ষ পরিচালনা ও উপজেলাকেন্দ্রিক দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা তদারকি কমিয়ে দিয়েছেন।

কৃষকেরা আরও বলেন, সরকারিভাবে সমিতি হলেও এর মিটিং নেই, হিসাবে নেই, রাবার ড্যামের তদারকিও নেই। ব্যবস্থাপনা কমিটি কৃষকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা তুললে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের কোনো হিসাব-নিকাশ দেয় না। তাঁরা বলেন, রাবার ড্যামে ওভার ফ্লো হলে পানির খরচ এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা, আর পানি কমে গিয়ে পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন করলে খরচ হয় তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। এ কারণে রাবার ড্যামের এ করুণ অবস্থা।

জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা জহির উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘রাবার ড্যামে জোড়ায় জোড়ায় রাবার ফেটে গেছে। করার কিছুই নেই। তবে জিও ব্যাগ দিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে পানি বন্ধ হয়ে যাবে। আমার বিরুদ্ধে সবই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত