ঈদযাত্রায় ট্রেন-লঞ্চে চাপ, সড়কে জট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০৮: ৪০
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ০৯: ১৫

ঈদুল আজহার বাকি আর এক দিন। গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। তবে গতকাল শুক্রবার যানবাহনের চাপ বেড়েছে সড়কে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সড়কে আজ শনিবার এবং আগামীকাল রোববার চাপ আরও বাড়বে। এদিকে ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিন ১২ জুন ছাড়তে দেরি হলেও গতকাল থেকে স্বস্তি মিলছে।

গতকাল কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেনে উঠতে পারছিলেন। কয়েকজন যাত্রী জানান, উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোতে সকালের দিকে সামান্য ভিড় থাকলেও দুপুরনাগাদ তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে ট্রেনের টিকিট পাওয়াই কঠিন।

ঢাকার স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। এখন আর প্রথম দিনের মতো ট্রেনে কোনো বিলম্ব নেই।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গতকাল সকাল থেকে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল না থাকায় মহাসড়কের ওপর যাত্রী তোলা ও নামানোয় চান্দনা এলাকায় যানবাহন চলছিল ধীরগতিতে। এ ছাড়া মহাসড়কের টঙ্গী থেকে মিলগেট এলাকা ও ভোগড়া বাইপাস থেকে চান্দনা চৌরাস্তা অংশে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

অন্যদিকে, কালিয়াকৈরে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় জট লেগে যায়। যানবাহনের অপেক্ষায় অবস্থান করতে দেখা গেছে উত্তরবঙ্গগামী হাজার হাজার যাত্রীকে। অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত বাস না পেয়ে ট্রাক, পিকআপসহ খোলা গাড়িতে চড়ে গন্তব্যে পাড়ি দেন।

ট্রাকে বাড়ি যাওয়া খোরশেদ আলম বলেন, ঢাকা থেকে যেসব বাস আসছে সেগুলোতে কোনো সিট খালি নেই। ভেতরে দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে ট্রাকে যেতে হচ্ছে।

একাধিক বাসচালক জানান, অতিরিক্ত গাড়ির কারণে ঢাকা থেকে চান্দনা চৌরাস্তায় পৌঁছাতে জসীমউদ্দীন রোড, টঙ্গী বাজার থেকে মিলগেটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কিছুটা যানজটে পড়তে হয়েছে। তবে সড়কের অন্য অংশ দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলাচল করছে। 

আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসের চালক বলেন, রাস্তায় ইজিবাইক, অটোরিকশা বেশি থাকায় স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। অনেক স্থানে সড়কে পানি জমেও সমস্যা সৃষ্টি করছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, চান্দনা চৌরাস্তায় উড়ালসড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও সেতুতে ওঠানামার সময় গতি কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহগামী গাড়ি চলাচল দ্রুত করতে পুলিশ টাঙ্গাইলমুখী লেন সিগন্যাল দিয়ে আটকে রাখায় চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ইটাহাটা পর্যন্ত গাড়ির লম্বা জট দেখা দিয়েছে। এই অংশে নজরদারি কম থাকায় এলোমেলোভাবে গাড়ি চলাচল করছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ বলেন, কিছু কারখানা বৃহস্পতিবার ছুটি হয়েছে। শনিবার সবচেয়ে বেশি দুই সহস্রাধিক কারখানা ছুটি হবে। পরদিনও দুই শতাধিক কারখানা ছুটি হবে। এসব শ্রমিক সড়কে নামলে চাপ কিছুটা বাড়তে পারে।

গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আরিচামুখী লেনে নবীনগর থেকে বিশমাইল পর্যন্ত এবং ঢাকামুখী সড়কে নয়ারহাট থেকে নবীনগর পর্যন্ত যানজট ছিল। 
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, এখন পর্যন্ত সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিকই বলা যায়। কারণ যাত্রীদের মূল চাপ এখনো শুরু হয়নি। এটি শনিবার শুরু হবে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে গতকাল সকাল থেকেই যানজট ছিল। সেই যানজট কমাতে ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব গোলচত্বর দিয়ে আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করে। এতে আঞ্চলিক সড়কেও থেমে থেমে চলছিল গাড়ি। তবে দুপুরের পর চাপ কমে, স্বাভাবিক হয় সেতুর দুই পাশ।

গতকাল সকাল ৬টার দিকে সড়কের পৌলী এলাকায় উত্তরাঞ্চলগামী লেনে একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাক উল্টে যায়। পরে আরেকটি বাস ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয়। ট্রাক ও বাসটি সরাতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ওই দুর্ঘটনার রেষ পড়ে পুরো সড়কে। টাঙ্গাইল বাইপাস থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত সুপার রাকিবুল ইসলাম রাসেল জানান, সড়কে ট্রাক উল্টে গেলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। ট্রাকটি সরিয়ে নিলে যান চলাচল শুরু হয়।

বাস-ট্রেনের পাশাপাশি লঞ্চে চেপে রাজধানী ছাড়ছেন রাজধানীবাসী। নৌপথে গতকাল যাত্রীর চাপ বাড়লেও বড় ধরণের কোনো বিসৃঙ্খলা দেখা যায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। 
সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি লঞ্চই যাত্রীবোঝাই। কোনো লঞ্চেই কেবিন খালি নেই। ডেকে গাদাগাদি করে বসা যাত্রী।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে ডেকে জায়গা পেতে লঞ্চ ছাড়ার ৬-৭ ঘণ্টা আগে এসে জায়গা রাখেন।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, যাত্রীর চাপ তুলনামূলক বেশি। যাত্রীর চাপ বিবেচনায় আরও ১২-১৩টি স্পেশাল লঞ্চের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 

[এই প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আজকের পত্রিকার গাজীপুর, কেরাণীগঞ্জ (ঢাকা) সাভার (ঢাকা) ও ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত