ধানের বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ১০: ৩৮

কিশোরগঞ্জে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে হাওরে শতভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে আর উজানের ধান কাটা হয়েছে ৯০ শতাংশ। ধানের বাম্পার ফলনের পরও ভালো দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকেরা। অনেকে উৎপাদন খরচ মেটাতে জমির পাশেই কম দামে ভেজা ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।

জানা গেছে, জেলার করিমগঞ্জের চামড়াবন্দরে নরসুন্দা নদীতীরের বাজারে প্রতি মণ ভেজা ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হলেও শ্রমিক ও পরিবহন খরচ মেটাতে অনেকে কম দামে বাজারে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।

তবে অভিযোগ রয়েছে, সরকারিভাবে প্রতি মৌসুমে ধান কেনা হলেও কৃষকেরা সরাসরি গুদামে দিতে পারেন না। ফড়িয়ারা সস্তায় ধান কিনে গুদামে দেয়। এতে বঞ্চিত হন প্রকৃত কৃষকেরা। খাদ্য বিভাগে কোনো প্রকৃত কৃষক ধান সরবরাহ করতে গেলে ভেজা ও মান ভালো নয় বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই হয়রানির কারণে প্রকৃত কৃষক খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে চান না। অন্যদিকে পড়াশোনা না জানায় অ্যাপে বেশির ভাগ প্রকৃত কৃষক নিবন্ধন করতে পারেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের লোক বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের লোকজনই সরকারি গুদামে ধান সরবরাহের সুযোগ পান।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার ১৩ উপজেলায় ১ হাজার ২৮০ টাকা মণ (৩২ টাকা কেজি) দরে ২১ হাজার ৮৬৫ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার আটটি উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে এবং বাকি উপজেলায় তালিকার মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। ধান সংগ্রহ চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে গুদামে ধান সরবরাহ না করার কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন কৃষক বলেন, গুদামে ধান বিক্রি করা বেশ ঝামেলার। গুদামে ধান পৌঁছে দিতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে, শ্রমও হয় বেশি। এ জন্য কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভেজা ধান কেনার পর তাঁদের শুকাতে হচ্ছে। তাই বর্তমানে ধানের দাম কম। এ ছাড়া মিলমালিকেরা এখনো ধান কেনা শুরু না করায় কৃষকেরা বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন না। করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর এলাকার কৃষক মানিক মিয়া জানান, জমিতে ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত যে টাকা খরচ হয়, ধান বিক্রি করে তা দিয়ে পোষায় না। বর্তমানে ভেজা ধান ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া শিয়ারা গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘খরচ তোলার জন্য কিছু ধান লোকাল বাজারে বিক্রি করে দেই। আর কিছু ধান পরে বিক্রির জন্য মজুত রাখি। খাদ্যগুদামে কখনো ধান বিক্রি করিনি, আর আমি তাদের তালিকাভুক্তও না।’

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৮৭ টন চাল। চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হওয়ায় সর্বাগ্রে প্রকৃত কৃষকদের প্রাধান্য দিতে হবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ধান সংগ্রহে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সাপেক্ষে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত