নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন, শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থীরাই। কিন্তু সরকার পতনের পর এখন সবচেয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে একেবারে গ্রামের স্কুল পর্যন্ত– সবখানেই অস্থিরতা।
হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের অন্যতম লক্ষ্য রাষ্ট্র সংস্কার। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপও দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। কিন্তু শিক্ষা খাতে এখনো এর প্রভাব পড়েনি। বরং শিক্ষা খাতের বেশির ভাগ দপ্তরে এখনো কোনো কাজ হচ্ছে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্লাস হচ্ছে ঢিলেতালে।
এরই মধ্যে দেশের ৩০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আগের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছিল শিক্ষার্থীদের। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া যায়নি। আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন উপাচার্যসহ অন্যদের পদত্যাগের দাবিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় কলেজের অধ্যক্ষও পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। অনেক জায়গায় বিক্ষোভ চলছে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ-স্কুল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে এমন অস্থিরতা। এতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানেরা উদ্বেগে। শিক্ষার্থীরাও মনোযোগ দিতে পারছে না শ্রেণিকক্ষের পাঠে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে শিক্ষকেরাও শ্রেণি কার্যক্রম বাদ দিয়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের আন্দোলনে নেমেছেন। অনেককে বাধ্য করা হচ্ছে পদত্যাগে। ১১ আগস্ট ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় ও সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানমকে জোর করে পদত্যাগ করার অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় মানিকনগর গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. ফেরদৌসী ইয়াসমিনকে।
এ ছাড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে। এর মধ্যে ১৮ আগস্ট আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গীতাঞ্জলি বড়ুয়ার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীদের একাংশ। এর আগে তিনি আন্দোলনের মুখে তাঁর দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে পরিচিত অফিস সহকারী মো. সবুজ মিয়াকে বদলি করতে বাধ্য হন।
এই অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে অপসারণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নির্দেশনা জারি করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যখন এই অবস্থা, তখন শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে বিবেচিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিসহ (নায়েম) বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত কয়েক দিনে ধরে
এসব দপ্তরে কোনো কাজ হচ্ছে না। অনেকেই ‘সুযোগ বুঝে’ বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন।
দপ্তরগুলোর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী বিশেষ একটি গোষ্ঠী। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ভোল পাল্টে ফেলেছেন। আর বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারাও ‘সুযোগ বুঝে’ এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে তৃতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় তাঁরা শিক্ষা ভবনের প্রধান দুই গেটে তালা দেন। এ ছাড়া ‘পদোন্নতি বঞ্চিত’ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও এ সময় মাউশি কার্যালয়ের ভেতরে হট্টগোল করেন।
মাউশি সূত্র বলছে, মাউশিতে সাম্প্রতিক সময়ে যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে, বর্তমান পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম ও পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক এ কিউ এম শফিউল আজম তাতে ইন্ধন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দুই কর্মকর্তাই মহাপরিচালক হতে আগ্রহী। এর মধ্যে রেজাউল করীম গত জুনে শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে পদায়ন পান। আর এ কিউ এম শফিউল আজম সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে শিক্ষা প্রশাসনে পরিচিত। এ কর্মকর্তা ১৫ দিনের ব্যবধানে তিনবার বিদেশ সফর করেও আলোচিত হন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শফিউল আজম বলেন, এগুলো সত্য নয়।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরেও কয়েক দিন ধরেই কোনো কাজ হচ্ছে না। এ দপ্তরের কর্মকর্তাদের একাংশ মানববন্ধন ও দফায় দফায় মিটিং করা নিয়ে ব্যস্ত।
এ ছাড়া কোনো সরকারি আদেশ জারি না হলেও নিজেকে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দাবি করে প্রধান কার্যালয়ে এসে মিটিং করছেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সদস্য ও ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশা। এর আগে ১৩ আগস্ট প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।
ইইডি সূত্র জানায়, ইইডিতে গত কয়েক দিনে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বঙ্গবন্ধু ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশা ও প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদারের। এই দুই কর্মকর্তা সাবেক চিফ হুইফ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগ আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আফরোজা বেগম, সমীর কুমার রজক দাস, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকতও এসব ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইইডি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রায়হান বাদশা প্রায় ১০ বছর গোপালগঞ্জে চাকরি করেছেন। সেখানে তাঁর শ্বশুরবাড়িও। এরপর সাবেক চিফ হুইপের সুপারিশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে বিবেচিত ঢাকা সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন পান। এর পর থেকে তিনি ছয় বছর ধরে ঢাকাসহ ১৭ জেলার সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে ময়মনসিংহে চাকরি করা অবস্থায় সাময়িকভাবে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি।
সূত্র আরও বলছে, দীপু মনির সময় মূলত ইইডি নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রধান কার্যালয়ের ডেস্ক-১-এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদার। বদলি-পদোন্নতিসহ সব সিদ্ধান্ত তিনিই নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চাঁদপুরে বাড়ি হওয়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁর ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজস্ব খাতের প্রায় ৫০ লাখ টাকা দীপু মনির বাসভবন মেরামতে খরচেরও অভিযোগও রয়েছে। এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে দুজনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
ইইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, এখন যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় কর্মরত। অথচ তাঁরাই ভোল পাল্টে ফেলেছেন। যদিও গত সরকারের সময় ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল রংপুর, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
একইভাবে ভোল পাল্টে ইউজিসি সচিব হয়েছেন মো. ফখরুল ইসলাম। কয়েক দিন আগেও তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বন্দনা গেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কলাম লিখেছেন। ১১ আগস্ট বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাসহ ইউজিসির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সদ্য সাবেক ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলমগীর অবরুদ্ধ করেন। এরপর তাঁদের দাবির মুখে ফেরদৌস জামানকে সরিয়ে তিনি আদায় করেন সচিবের পদ। এ ছাড়া নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক খোকন খানের শাস্তি মওকুফ করতেও বাধ্য করা হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন, শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থীরাই। কিন্তু সরকার পতনের পর এখন সবচেয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে একেবারে গ্রামের স্কুল পর্যন্ত– সবখানেই অস্থিরতা।
হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের অন্যতম লক্ষ্য রাষ্ট্র সংস্কার। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপও দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। কিন্তু শিক্ষা খাতে এখনো এর প্রভাব পড়েনি। বরং শিক্ষা খাতের বেশির ভাগ দপ্তরে এখনো কোনো কাজ হচ্ছে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্লাস হচ্ছে ঢিলেতালে।
এরই মধ্যে দেশের ৩০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আগের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছিল শিক্ষার্থীদের। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া যায়নি। আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন উপাচার্যসহ অন্যদের পদত্যাগের দাবিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় কলেজের অধ্যক্ষও পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। অনেক জায়গায় বিক্ষোভ চলছে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ-স্কুল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে এমন অস্থিরতা। এতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানেরা উদ্বেগে। শিক্ষার্থীরাও মনোযোগ দিতে পারছে না শ্রেণিকক্ষের পাঠে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে শিক্ষকেরাও শ্রেণি কার্যক্রম বাদ দিয়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের আন্দোলনে নেমেছেন। অনেককে বাধ্য করা হচ্ছে পদত্যাগে। ১১ আগস্ট ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় ও সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানমকে জোর করে পদত্যাগ করার অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় মানিকনগর গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. ফেরদৌসী ইয়াসমিনকে।
এ ছাড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে। এর মধ্যে ১৮ আগস্ট আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গীতাঞ্জলি বড়ুয়ার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীদের একাংশ। এর আগে তিনি আন্দোলনের মুখে তাঁর দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে পরিচিত অফিস সহকারী মো. সবুজ মিয়াকে বদলি করতে বাধ্য হন।
এই অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে অপসারণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নির্দেশনা জারি করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যখন এই অবস্থা, তখন শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে বিবেচিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিসহ (নায়েম) বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত কয়েক দিনে ধরে
এসব দপ্তরে কোনো কাজ হচ্ছে না। অনেকেই ‘সুযোগ বুঝে’ বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন।
দপ্তরগুলোর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী বিশেষ একটি গোষ্ঠী। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ভোল পাল্টে ফেলেছেন। আর বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারাও ‘সুযোগ বুঝে’ এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে তৃতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় তাঁরা শিক্ষা ভবনের প্রধান দুই গেটে তালা দেন। এ ছাড়া ‘পদোন্নতি বঞ্চিত’ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও এ সময় মাউশি কার্যালয়ের ভেতরে হট্টগোল করেন।
মাউশি সূত্র বলছে, মাউশিতে সাম্প্রতিক সময়ে যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে, বর্তমান পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম ও পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক এ কিউ এম শফিউল আজম তাতে ইন্ধন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দুই কর্মকর্তাই মহাপরিচালক হতে আগ্রহী। এর মধ্যে রেজাউল করীম গত জুনে শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে পদায়ন পান। আর এ কিউ এম শফিউল আজম সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে শিক্ষা প্রশাসনে পরিচিত। এ কর্মকর্তা ১৫ দিনের ব্যবধানে তিনবার বিদেশ সফর করেও আলোচিত হন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শফিউল আজম বলেন, এগুলো সত্য নয়।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরেও কয়েক দিন ধরেই কোনো কাজ হচ্ছে না। এ দপ্তরের কর্মকর্তাদের একাংশ মানববন্ধন ও দফায় দফায় মিটিং করা নিয়ে ব্যস্ত।
এ ছাড়া কোনো সরকারি আদেশ জারি না হলেও নিজেকে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দাবি করে প্রধান কার্যালয়ে এসে মিটিং করছেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সদস্য ও ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশা। এর আগে ১৩ আগস্ট প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।
ইইডি সূত্র জানায়, ইইডিতে গত কয়েক দিনে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বঙ্গবন্ধু ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশা ও প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদারের। এই দুই কর্মকর্তা সাবেক চিফ হুইফ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগ আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আফরোজা বেগম, সমীর কুমার রজক দাস, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকতও এসব ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইইডি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রায়হান বাদশা প্রায় ১০ বছর গোপালগঞ্জে চাকরি করেছেন। সেখানে তাঁর শ্বশুরবাড়িও। এরপর সাবেক চিফ হুইপের সুপারিশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে বিবেচিত ঢাকা সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন পান। এর পর থেকে তিনি ছয় বছর ধরে ঢাকাসহ ১৭ জেলার সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে ময়মনসিংহে চাকরি করা অবস্থায় সাময়িকভাবে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি।
সূত্র আরও বলছে, দীপু মনির সময় মূলত ইইডি নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রধান কার্যালয়ের ডেস্ক-১-এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদার। বদলি-পদোন্নতিসহ সব সিদ্ধান্ত তিনিই নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চাঁদপুরে বাড়ি হওয়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁর ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজস্ব খাতের প্রায় ৫০ লাখ টাকা দীপু মনির বাসভবন মেরামতে খরচেরও অভিযোগও রয়েছে। এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে দুজনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
ইইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, এখন যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় কর্মরত। অথচ তাঁরাই ভোল পাল্টে ফেলেছেন। যদিও গত সরকারের সময় ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল রংপুর, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
একইভাবে ভোল পাল্টে ইউজিসি সচিব হয়েছেন মো. ফখরুল ইসলাম। কয়েক দিন আগেও তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বন্দনা গেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কলাম লিখেছেন। ১১ আগস্ট বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাসহ ইউজিসির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সদ্য সাবেক ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলমগীর অবরুদ্ধ করেন। এরপর তাঁদের দাবির মুখে ফেরদৌস জামানকে সরিয়ে তিনি আদায় করেন সচিবের পদ। এ ছাড়া নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক খোকন খানের শাস্তি মওকুফ করতেও বাধ্য করা হয়।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৫ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে