ভাড়া বেশি, বন্ধ ওয়াটার বাস

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৬: ৪০
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩৫

ব্যাপক প্রচার আর সাড়া জাগিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে চালু হয়েছিল ওয়াটার বাস। দুই বছর আগে চালুর পর সদরঘাট থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্রুত যাওয়ার এই সার্ভিসে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন যাত্রীরা।

সাধারণত শহরের চাক্তাই, জিইসি, আগ্রাবাদ, খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এই পথে চলাচলকারীদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছিল ওয়াটার বাস সার্ভিস। কিন্তু তবে বেশি ভাড়া নেওয়ায় তাঁদের আগ্রহ কমতে থাকে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় চালুর কিছুদিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় এই সার্ভিস। গত বছরের জানুয়ারিতে পুনরায় এই সার্ভিস শুরু হলেও সেটির স্থায়ী হয় মাত্র তিন মাস।

এরপর গত ১০ মাসে ওয়াটার বাস চালুর বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। এই ওয়াটার বাস বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের জন্য আর চালু হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাত্রী সংকটের কারণে এই সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। তবে যাত্রীদের দাবি, ভাড়া বেশি হওয়ায় ওয়াটার বাসে আগ্রহ কমছে তাঁদের। ভাড়া কমানো হলে আগের মতো যাত্রী পাবে সার্ভিসটি।

চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট এলাকা থেকে বিমানবন্দর সংলগ্ন পতেঙ্গা জেটি পর্যন্ত ওয়াটার বাস সার্ভিসটি চালু হয় ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। এর কিছুদিনের মাথায় করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি আবারও ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করা হয়। তিন মাস চলার পর মার্চে আবার বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যানজটের কারণে শাহ আমানত বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর ও কিছু বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোর মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যানের কারণে ওই পথে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। যে কারণে শহরের চাক্তাই, জিইসি, আগ্রাবাদ, খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এ ছাড়া পতেঙ্গা টু লালখানবাজার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলছে। ফলে আগ্রাবাদ-বন্দর-কাস্টমস-ইপিজেড হয়ে বিমানবন্দর যেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

যাত্রীদের এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিয়েছিল ওয়াটার বাস সার্ভিস। এই ওয়াটার বাসে মাত্র ৩০ মিনিটেই সদরঘাট থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছা যেত। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ বাসে জনপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৩৫০ টাকা। প্রতিটি ওয়াটার বাসে ২৫ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। প্রতিদিন দুটি ওয়াটার বাস সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ১১ বার করে যাওয়া-আসা করত। কিন্তু সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী বলেন, ‘এটি খুবই ভালো সেবা ছিল। তবে শুরু থেকেই ভাড়া বেশি হওয়ায় সাধারণের আগ্রহ কমে যায়। আমি মনে করি, ভাড়া কমানো হলে যাত্রীও বাড়বে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াটার বাস সার্ভিস প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসএস ট্রেডিং পরিচালনা করছে। আর পর্যবেক্ষণে আছে চট্টগ্রাম ড্রাইডক। এ জন্য বছরে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৭০ লাখ টাকা করে দিতে হয় এসএস ট্রেডিংকে।

সার্বিক বিষয়ে এসএস ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবাব হোসেন বলেন, ‘২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে পুনরায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করেছিলাম। কিন্তু প্রায় তিন মাস চলার পর মার্চে বন্ধ করতে বাধ্য হই। বর্তমানে যাত্রী কম হওয়ায় ওয়াটার বাসগুলো আর চালানো যাচ্ছে না। এখন সেগুলো চুক্তিতে বিভিন্ন রুটে চালানো হচ্ছে।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, কর্ণফুলীতে ওয়াটার বাস চালু করতে চট্টগ্রাম বন্দর ও এসএস ট্রেডিংয়ের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বন্দর কর্তৃপক্ষ সদরঘাট এলাকায় স্টেশন ও পতেঙ্গা এলাকায় জেটি নির্মাণ করে দেয়। সে জন্য বন্দরকে প্রতি বছর ভাড়া দিতে হবে এসএস ট্রেডিংকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত