আন্তনগর ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ৪০টি থ্রি ফেজ কনডেনসার মোটর কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে রেলওয়ের বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিভাগ। শর্ত পূরণ না করেও কাজ পায় মেসার্স অর্নব অ্যাসোসিয়েটস নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই সব যন্ত্রাংশ রেলওয়েকে সরবরাহ করেনি তারা। কাগজে-কলমে এসব যন্ত্রাংশ বুঝিয়ে দিয়ে রেলওয়ের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদার মিলে ৪৪ লাখ টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত রেলওয়ের ৫ কর্মকর্তা হলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনিং অ্যাকাডেমির সাবেক রেক্টর আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী তাকি আল যাওয়াদ, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা কামরুন নাহার, এসএসই শাহ আলম ও এসএসএই আবুল কালাম আজাদ। অপর অভিযুক্ত হলেন মেসার্স অর্নব অ্যাসোসিয়েটসের মালিক চৌধুরী শারাফাত করিম।

অর্থ লোপাটের ঘটনায় গত বুধবার তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুনীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আন্তনগর ট্রেনের এসি কোচের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সচল রাখতে ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ২০টি থ্রি ফেজ ব্লোয়ার মোটর ও ৪০টি থ্রি ফেজ কনডেনসার মোটর সরবরাহে এসএসই শাহ আলম বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশল দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠান। বাজারমূল্য নির্ধারণের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। এতে ছিলেন এইই আবুল কালাম আজাদ, এএসই মো. নূর হোসেন ও এডিএও মো. আবদুর রহিম।

তাঁরা স্থানীয় বাজারে গিয়ে ভ্যাটসহ প্রতিটি কনডেনসার মোটরের দাম নির্ধারণ করে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৪০টির দাম পড়ে ৪৪ লাখ টাকা। তখনকার বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীর অফিসে পাঠান। বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী (সদর) তাকি আল যাওয়াদ ওই বছরের ২৭ অক্টোবর দরপত্র (নম্বর-১২৭৭৮৬) আহ্বান করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় ১০ বছর।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মেসার্স অর্নব অ্যাসোসিয়েটস ও মেসার্স হক ট্রেডার্স দরপত্র দেয়। এর মধ্যে অর্নব অ্যাসোসিয়েটস দর দেয় ৪৬ লাখ ৪০ হাজার ও হক ট্রেডার্স দেয় ২৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা হক ট্রেডার্সকে না দিয়ে কাজ দেওয়া হয় অর্নব অ্যাসোসিয়েটসকে। এমনকি ১০ বছর অভিজ্ঞতার শর্ত থাকলেও অর্নব অ্যাসোসিয়েটসের অভিজ্ঞতা ছিল ৮ বছরের।

চুক্তি অনুযায়ী অর্নব অ্যাসোসিয়েটস কথিত কাগজপত্রসহ ৪০টি থ্রি ফেজ কনডেনসার মোটর ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি শাহ আলমের নিকট পাঠানো হয় বলে দেখান। সহকারী বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ মালামাল বুঝে পেয়েছেন মর্মে ৪৪ লাখ ৮ হাজার টাকার বিল পাঠান অর্থ ও হিসাব বিভাগে।

দুদকের তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানান, মালামাল আমদানি ও সরবরাহ সংক্রান্ত কাগজপত্র রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ আমদানি সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই মালামাল গ্রহণ দেখানো হয়। মূলত এই ছয়জন সরকারি ৪৪ লাখ টাকা লোপাট করেছেন।

এ দিকে এত বড় ঘটনায় রেলওয়ের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী তাকি আল যাওয়াদ বিদেশে আছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক এসএম মুরাদ হোসেন বলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি জানেন না।