আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো আয় বিদেশেই গায়েব করে দেয় অর্থ পাচারকারী ও হুন্ডি কারবারি চক্র। প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে না আসার কারণ খুঁজতে গত বছরের শেষ দিকে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। ফিরে এসে দলটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রধানত ৯টি কারণে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠান না। এই সুযোগ নিচ্ছে হুন্ডি কারবারিরা। সিআইডির দাবি, অর্থ পাচারকারীদের তিনটি চক্র তিন ধাপে প্রবাসী আয় হাতিয়ে নেয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের স্থানীয় কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হলেও অর্থ পাচারকারী কেউ ধরা পড়েনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈধ পথে বছরজুড়ে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, তার প্রায় সমপরিমাণ বিদেশেই গায়েব করে দেওয়া হয়। সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন) কুসুম দেওয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের কথা শুনেছি, তাঁদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রচার চালানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেমিট্যান্স যাতে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য সিআইডি কাজ করছে। হুন্ডি প্রতিরোধে আমাদের নজরদারি রয়েছে।’ সিআইডির প্রতিবেদন মতে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার তিনটি ধাপে হয়ে থাকে। সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ পাচারকারীদের প্রথম দলটি দেশে মৌখিক চুক্তিতে এমএফএস এজেন্টদের অর্থ দেয়। বিদেশে দ্বিতীয় দলটি ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। এরপর তারা তা জানিয়ে দেয় দেশে এমএফএস এজেন্টদের। সে অনুযায়ী প্রণোদনাসহ টাকা দেশে প্রবাসীর স্বজনের হাতে অথবা মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। ফলে প্রবাসীর পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না, রিজার্ভও বাড়ছে না।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও দেখা গেছে নিম্নমুখী প্রবণতা। হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোকে এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডি।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ সুপার রেজাউল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে প্রবাসী শ্রমিক ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রমিকেরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, তা পরবর্তী সময়ে তুলে ধরেছি। শ্রমিকেরা প্রবাসে ব্যস্ত জীবন কাটান। তাঁরা ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাঠানোর সময়ও পান না। এই সুযোগ নেয় হুন্ডির এজেন্টরা।’
যেসব কারণে হুন্ডির খপ্পরে
সিআইডির অনুসন্ধান মতে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশের শ্রমিক আছে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সোয়া কোটির মতো। গত ১০ বছরে প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও প্রবাস আয় দ্বিগুণ হয়নি হুন্ডির কারণে। প্রবাসীরাও জানেন না, তাঁদের পাঠানো আয় হুন্ডির চক্রে গায়েব হয়ে যাচ্ছে বিদেশেই।
অনুসন্ধানে দলের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকেরা অনেক কষ্টের চাকরি করেন। তাঁরা প্রতিদিন ভোরে শহর ছেড়ে অনেক দূরে কাজে যান, রাতে ফেরেন। ছুটির দিনেও বাড়তি কাজ করেন। ব্যাংক খুঁজে টাকা পাঠানোর মতো পরিস্থিতিতে তাঁরা থাকেন না। এই সুযোগটি নেয় হুন্ডি কারবারি চক্র। তারা শ্রমিকদের বাসায় গিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে, দেশে এজেন্টরা প্রবাসীর স্বজনদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়ত, প্রবাসী শ্রমিকদের বড় অংশ অবৈধ। তাঁরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে না পেরে হুন্ডির আশ্রয় নেন। তৃতীয়ত, ব্যাংক আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিলেও হুন্ডি এজেন্টরা দেয় ৬-৭ শতাংশ। চতুর্থত, শ্রমিকেরা কাজ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে পারেন না। অনেক শ্রমিক নির্দিষ্ট কোম্পানি ও কাজের বাইরেও কাজ করেন। এই আয় নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তাই তাঁরা ব্যাংকে যান না। পঞ্চমত, দূরে থাকায় অনেক শ্রমিক ব্যাংক চেনেনই না। ষষ্ঠত, হুন্ডিতে অর্থ পাঠালে দেশে স্বজনদেরও ব্যাংকে যাওয়ার ঝক্কি পোহাতে হয় না। এ ছাড়া কোনো শ্রমিকের বেতন পাওয়ার আগেও বাড়িতে টাকার প্রয়োজন হলে হুন্ডির এজেন্টকে জানালেই তারা টাকা পাঠিয়ে দেয়।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ডলারের বিনিময় হার ঠিকভাবে নির্ধারণ না করা, অনুমোদিত মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা না থাকা এবং আমলাতান্ত্রিক-প্রশাসনিক জটিলতার কারণেও ব্যাংকমুখী হচ্ছেন না শ্রমিকেরা।
অর্থ পাচারে কারা জড়িত
সিআইডি এক বছর ধরে দেশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করছে। সিআইডির পর্যবেক্ষণ মতে, তিন শ্রেণির লোক দেশ থেকে অর্থ পাচার করছে। ইউরোপে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় প্রজন্ম, নব্য কোটিপতি এবং ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ।
সিআইডির দাবি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটি প্রজন্ম শিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে ইউরোপে গিয়ে স্থায়ী হয়েছে। দেশে তাদের মা-বাবা ছিল, তারা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকত। বিদেশে থাকা এই প্রথম প্রজন্ম এখন বৃদ্ধ বা মৃত। তাদের সন্তানেরা এখন বড় হয়েছে। এই দ্বিতীয় প্রজন্ম ইউরোপেই থাকে। এরা দেশে আসছে না, উল্টো দেশের সম্পদ বিক্রি করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নিচ্ছে। এ ছাড়া নব্য কোটিপতি, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও অর্থ পাচারে জড়িত। তাঁদের বেশ কিছু নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে।
সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগের (ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম) বিশেষ সুপার হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিজিটাল যুগে অর্থ পাচার প্রতিরোধ চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য সবার একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করছি।’
অর্ধশতাধিক গ্রেপ্তার
এমএফএসের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে সিআইডি। ঢাকায় চারটি, চট্টগ্রাম একটি এবং কুমিল্লায় একটি ঘটনায় মামলা হয়। এসব ঘটনায় বিকাশ কর্মকর্তাসহ অর্ধশত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। মামলাগুলোর তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে যাঁরা অর্থ পাচার করেছেন, তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার নেই।
সিআইডির এস এস মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আমরা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছি। মামলার তদন্ত চলছে, কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযানের পর হুন্ডি চক্রের তৎপরতা কমেছে, তবে বন্ধ হয়নি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি জানান, বিকাশ, নগদসহ বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির ৫ হাজার ৪৯ এজেন্ট নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পেনশন স্কিম চালুর পরামর্শ
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এক কোটি শ্রমিক বাইরে আছেন, যার ৭০ লাখ মধ্যপ্রাচ্যে। এই শ্রমিকেরা বৈধ পথে যত রেমিট্যান্স পাঠান, প্রায় সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসে না। বিদেশেই তা থেকে যায়। উল্টো একটি চক্র দেশ থেকে অর্থ পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে।’ প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করতে হবে, যাতে ৫ বা ১০ বছর কেউ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে তিনি শেষে সরকারি অবসর ভাতার মতো পেনশন পান। তাহলে প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়বে। এ ছাড়া তাঁদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চিকিৎসায় বিশেষ প্রণোদনা নির্ধারণ করতে হবে। ডলারের বিনিময় হার পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা ধরনের সুবিধা রাখতে হবে।
রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো আয় বিদেশেই গায়েব করে দেয় অর্থ পাচারকারী ও হুন্ডি কারবারি চক্র। প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে না আসার কারণ খুঁজতে গত বছরের শেষ দিকে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। ফিরে এসে দলটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রধানত ৯টি কারণে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠান না। এই সুযোগ নিচ্ছে হুন্ডি কারবারিরা। সিআইডির দাবি, অর্থ পাচারকারীদের তিনটি চক্র তিন ধাপে প্রবাসী আয় হাতিয়ে নেয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের স্থানীয় কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হলেও অর্থ পাচারকারী কেউ ধরা পড়েনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈধ পথে বছরজুড়ে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, তার প্রায় সমপরিমাণ বিদেশেই গায়েব করে দেওয়া হয়। সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন) কুসুম দেওয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের কথা শুনেছি, তাঁদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রচার চালানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেমিট্যান্স যাতে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য সিআইডি কাজ করছে। হুন্ডি প্রতিরোধে আমাদের নজরদারি রয়েছে।’ সিআইডির প্রতিবেদন মতে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার তিনটি ধাপে হয়ে থাকে। সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ পাচারকারীদের প্রথম দলটি দেশে মৌখিক চুক্তিতে এমএফএস এজেন্টদের অর্থ দেয়। বিদেশে দ্বিতীয় দলটি ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। এরপর তারা তা জানিয়ে দেয় দেশে এমএফএস এজেন্টদের। সে অনুযায়ী প্রণোদনাসহ টাকা দেশে প্রবাসীর স্বজনের হাতে অথবা মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। ফলে প্রবাসীর পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না, রিজার্ভও বাড়ছে না।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও দেখা গেছে নিম্নমুখী প্রবণতা। হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোকে এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডি।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ সুপার রেজাউল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে প্রবাসী শ্রমিক ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রমিকেরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, তা পরবর্তী সময়ে তুলে ধরেছি। শ্রমিকেরা প্রবাসে ব্যস্ত জীবন কাটান। তাঁরা ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাঠানোর সময়ও পান না। এই সুযোগ নেয় হুন্ডির এজেন্টরা।’
যেসব কারণে হুন্ডির খপ্পরে
সিআইডির অনুসন্ধান মতে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশের শ্রমিক আছে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সোয়া কোটির মতো। গত ১০ বছরে প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও প্রবাস আয় দ্বিগুণ হয়নি হুন্ডির কারণে। প্রবাসীরাও জানেন না, তাঁদের পাঠানো আয় হুন্ডির চক্রে গায়েব হয়ে যাচ্ছে বিদেশেই।
অনুসন্ধানে দলের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকেরা অনেক কষ্টের চাকরি করেন। তাঁরা প্রতিদিন ভোরে শহর ছেড়ে অনেক দূরে কাজে যান, রাতে ফেরেন। ছুটির দিনেও বাড়তি কাজ করেন। ব্যাংক খুঁজে টাকা পাঠানোর মতো পরিস্থিতিতে তাঁরা থাকেন না। এই সুযোগটি নেয় হুন্ডি কারবারি চক্র। তারা শ্রমিকদের বাসায় গিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে, দেশে এজেন্টরা প্রবাসীর স্বজনদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়ত, প্রবাসী শ্রমিকদের বড় অংশ অবৈধ। তাঁরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে না পেরে হুন্ডির আশ্রয় নেন। তৃতীয়ত, ব্যাংক আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিলেও হুন্ডি এজেন্টরা দেয় ৬-৭ শতাংশ। চতুর্থত, শ্রমিকেরা কাজ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে পারেন না। অনেক শ্রমিক নির্দিষ্ট কোম্পানি ও কাজের বাইরেও কাজ করেন। এই আয় নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তাই তাঁরা ব্যাংকে যান না। পঞ্চমত, দূরে থাকায় অনেক শ্রমিক ব্যাংক চেনেনই না। ষষ্ঠত, হুন্ডিতে অর্থ পাঠালে দেশে স্বজনদেরও ব্যাংকে যাওয়ার ঝক্কি পোহাতে হয় না। এ ছাড়া কোনো শ্রমিকের বেতন পাওয়ার আগেও বাড়িতে টাকার প্রয়োজন হলে হুন্ডির এজেন্টকে জানালেই তারা টাকা পাঠিয়ে দেয়।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ডলারের বিনিময় হার ঠিকভাবে নির্ধারণ না করা, অনুমোদিত মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা না থাকা এবং আমলাতান্ত্রিক-প্রশাসনিক জটিলতার কারণেও ব্যাংকমুখী হচ্ছেন না শ্রমিকেরা।
অর্থ পাচারে কারা জড়িত
সিআইডি এক বছর ধরে দেশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করছে। সিআইডির পর্যবেক্ষণ মতে, তিন শ্রেণির লোক দেশ থেকে অর্থ পাচার করছে। ইউরোপে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় প্রজন্ম, নব্য কোটিপতি এবং ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ।
সিআইডির দাবি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটি প্রজন্ম শিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে ইউরোপে গিয়ে স্থায়ী হয়েছে। দেশে তাদের মা-বাবা ছিল, তারা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকত। বিদেশে থাকা এই প্রথম প্রজন্ম এখন বৃদ্ধ বা মৃত। তাদের সন্তানেরা এখন বড় হয়েছে। এই দ্বিতীয় প্রজন্ম ইউরোপেই থাকে। এরা দেশে আসছে না, উল্টো দেশের সম্পদ বিক্রি করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নিচ্ছে। এ ছাড়া নব্য কোটিপতি, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও অর্থ পাচারে জড়িত। তাঁদের বেশ কিছু নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে।
সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগের (ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম) বিশেষ সুপার হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিজিটাল যুগে অর্থ পাচার প্রতিরোধ চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য সবার একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করছি।’
অর্ধশতাধিক গ্রেপ্তার
এমএফএসের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে সিআইডি। ঢাকায় চারটি, চট্টগ্রাম একটি এবং কুমিল্লায় একটি ঘটনায় মামলা হয়। এসব ঘটনায় বিকাশ কর্মকর্তাসহ অর্ধশত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। মামলাগুলোর তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে যাঁরা অর্থ পাচার করেছেন, তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার নেই।
সিআইডির এস এস মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আমরা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছি। মামলার তদন্ত চলছে, কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযানের পর হুন্ডি চক্রের তৎপরতা কমেছে, তবে বন্ধ হয়নি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি জানান, বিকাশ, নগদসহ বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির ৫ হাজার ৪৯ এজেন্ট নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পেনশন স্কিম চালুর পরামর্শ
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এক কোটি শ্রমিক বাইরে আছেন, যার ৭০ লাখ মধ্যপ্রাচ্যে। এই শ্রমিকেরা বৈধ পথে যত রেমিট্যান্স পাঠান, প্রায় সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসে না। বিদেশেই তা থেকে যায়। উল্টো একটি চক্র দেশ থেকে অর্থ পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে।’ প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করতে হবে, যাতে ৫ বা ১০ বছর কেউ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে তিনি শেষে সরকারি অবসর ভাতার মতো পেনশন পান। তাহলে প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়বে। এ ছাড়া তাঁদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চিকিৎসায় বিশেষ প্রণোদনা নির্ধারণ করতে হবে। ডলারের বিনিময় হার পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা ধরনের সুবিধা রাখতে হবে।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে