Ajker Patrika

ওয়াহিদুল হক

সম্পাদকীয়
ওয়াহিদুল হক

রবীন্দ্রসংগীত প্রসারে অসামান্য অবদানের জন্য ওয়াহিদুল হককে মনে রাখে মানুষ। মূলত বাঙালি জাতির উৎকর্ষের প্রশ্নে নান্দনিক লড়াই চালিয়েছেন তিনি। পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। অবজারভার পত্রিকায় কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। মর্নিং নিউজ ও দ্য ডেইলি স্টারে কাজ করেছেন। দ্য পিপলস পত্রিকায়ও ছিলেন। মূলত ইংরেজি সংবাদপত্রই ছিল তাঁর পেশার বসতবাড়ি। জীবনের শেষ কয়েক বছর দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক ভোরের কাগজে নিয়মিত কলাম লিখেছেন। এ সময় বাংলা ভাষাই ছিল তাঁর সঙ্গী।

পেশার পাশাপাশি তাঁর অন্য পরিচয়টি সামনে না আনলে ওয়াহিদুল হকের পরিচয় সম্পূর্ণ হয় না। মূলত তিনি ছিলেন একজন বলিষ্ঠ সংগঠক। রবীন্দ্রবিরোধী সরকারি তৎপরতার বিরুদ্ধে যাঁরা প্রথম রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন ছিলেন ওয়াহিদুল হক। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী সফলভাবে উদ্‌যাপন করার কিছুদিন পর যখন সংস্কৃতমনা মানুষেরা মিলে ‘ছায়ানট’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন, তখন সেই দলে ছিলেন ওয়াহিদুল হক।

পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর দেশ যখন পাকিস্তানমুখী হয়ে ফরমায়েশি সংস্কৃতির খপ্পরে পড়েছিল, তখন তিনি ছিলেন এই আহাম্মকির বিরুদ্ধে সোচ্চার।

১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থা’র মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্রতচারী সমিতি, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আবৃত্তি সংগঠন ‘কণ্ঠশীলন’-এর মাধ্যমে এই শিল্পের প্রসারে অবদান রেখেছেন।

রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গে নিবিড় যুক্ততা ছিল তাঁর। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে গান শিখিয়েছেন প্রতিভাবান শিল্পীদের। তাঁদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন। সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি লিখেছেন বই। ‘চেতনাধারায় এসো’, ‘গানের ভিতর দিয়ে’সহ বেশ কিছু তাঁর লেখা বই আছে। রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তাঁর ছিল স্বচ্ছ ধারণা। সেই ধারণায় এগিয়ে নিতেই ছিল তাঁর সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা।

২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার বারডেম হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত