বকেয়া আদায়ে ঘাম ছুটছে

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ১০
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ০৬

গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের মূল কার্যালয়ের কাছে চট্টগ্রাম ওয়াসার বকেয়া ৬৮ লাখ ৫১ হাজার ১৫৪ টাকা। ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে এই বকেয়া জমেছে। শুধু মূল কার্যালয়েই নয়, অধিদপ্তরের বিভিন্ন দপ্তরের ৫৩টি সংযোগের বিপরীতে ওয়াসা বকেয়া বাবদ পাবে ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭৪ টাকা। বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়েও তা আদায় করা যাচ্ছে না। ২০২২ সালের শুরুতে অন্তত ১ লাখ টাকা বকেয়া আছে—এমন অন্তত ২১০টি সংযোগের তালিকা করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এর মধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়সহ ৪৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানেরই সংযোগ ১৬৫টি। বাকি ৪৫টি সংযোগ বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির।

ওয়াসা কর্মকর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ সরকারি কার্যালয়ই অন্তত ১০ বছর ধরে বকেয়া শোধ করছে না। বকেয়া আদায়ে ওয়াসা বারবার চিঠি দিলেও কোনো কাজ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বকেয়া আদায়ে আবারও প্রচেষ্টা শুরু করেছে ওয়াসা। ২ জানুয়ারি থেকে লাখ টাকার ওপর বকেয়া থাকা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে চিঠি পাঠানো শুরু করেছে ওয়াসার রাজস্ব বিভাগ। চিঠি পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করতে বলা হয়েছে এতে।

ওয়াসা সূত্র বলছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক গ্রাহকদের কাছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পাওনা প্রায় ১১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪ কোটি ৬২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে ৪৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। অন্যদিকে ৪৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বকেয়া রয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ৫০২ টাকা। বাকি প্রায় ৯৮ কোটি টাকা বকেয়া অন্যান্য আবাসিক-অনাবাসিক গ্রাহকের কাছে। এই বকেয়া আদায় করা গেলে গ্রাহকসেবা আরও বাড়ানো যেত বলে মনে করেন ওয়াসা কর্মকর্তারা।

বকেয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম গণপূর্ত জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তাঁরাও চান বকেয়া পরিশোধ করতে। তবে বরাদ্দ না পাওয়ায় বকেয়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

ওয়াসার দৌড় সাধারণ গ্রাহক পর্যন্ত
গত বছরের নভেম্বরের হিসাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার মোট সংযোগ সংখ্যা ৭৭ হাজার ২৬৫টি। এর মধ্যে আবাসিক সংযোগ ৭১ হাজার ৯৯২ ও অনাবাসিকে ৫ হাজার ২৭৩। বর্তমানে আবাসিকে ৯৩ শতাংশ ও অনাবাসিকে ৭ শতাংশ ওয়াসার পানি ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু বড় বকেয়ার বেশির ভাগই সরকারি বিভিন্ন আবাসিক ও অনাবাসিক গ্রাহকের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের পরে ওয়াসা সবচেয়ে বেশি টাকা পাবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে। এই প্রতিষ্ঠানের ২৫টি সংযোগের বিপরীতে বকেয়া আছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ১২ হাজার ৬৩০ টাকা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছেও প্রায় ১০ বছর ধরে ১ কোটির ওপর বকেয়া। ওয়াসার নিয়মে যথাসময়ে বকেয়া পরিশোধ করা না হলে জরিমানা ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওয়াসা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে বকেয়া আদায়ে জরিমানা কিংবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও ব্যক্তিপর্যায়ে কয়েক মাসের বিল আটকে গেলেই অভিযান চলে, জরিমানার পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন করা হয় সংযোগ।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘পাওনা আদায়ে জোর চেষ্টা চলছে। ১ লাখ টাকার ওপর বকেয়া আছে—এমন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিচ্ছি আমরা।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত