অফিস বন্ধ রেখে বনভোজন

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৪১
Thumbnail image

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ এবং নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সব দপ্তর বন্ধ রেখে কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে গিয়ে বনভোজন সারলেন ইউএনও মো. ইয়াছিন। হঠাৎ সরকারি দপ্তরগুলো বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন সেবাগ্রহীতারা। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সেবাবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে লক্ষ্মীছড়ি ইউএনও মো. ইয়াছিন ও উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও সদ্য বিজয়ী ইউপি চেয়ারম্যান প্রবীল কুমার চাকমা, ত্রিলন চাকমা, সুইচালা চৌধুরীসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে একটি বাস, দুটি প্রাইভেট কারসহ সরকারি গাড়ি নিয়ে বনভোজন যান। তাঁরা পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার কৈয়াছড়া (ব্র্যাক) চা-বাগান ও ভুজপুর রাবার ড্যামে আমোদে দিন অতিবাহিত করেন।

এদিকে পূর্বঘোষণা ও সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়, ইউএনও কার্যালয়, ভূমি অফিস, এলজিইডি দপ্তর, কৃষি দপ্তর, হিসাবরক্ষণ দপ্তর, সমাজসেবা দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে বনভোজনে যাওয়ায় সেবা নিতে আসা অসংখ্য সেবাগ্রহীতাকে ফিরে যেতে হয়েছে।

উপজেলা সদর থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার দূরের দুল্যাতলী ও বার্মাছড়ি থেকে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন অনেকে। দুল্যাতলী থেকে আসা ভুক্তভোগীদের একজন উসাইপ্রু মারমা বলেন, ‘আমি অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে এসেছি। ভাবছিলাম, সৃজিত বাগানের বিষয়ে কৃষি অফিসে কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করব। কিন্তু অফিসে গিয়ে দেখি তালাবদ্ধ। জানতে পারলাম, স্যাররা পিকনিক করতে গেছেন।’

বার্মাছড়ির মংথোয়াই মারমা বলেন, ‘আমি বয়স্ক ভাতা পাওয়ার বিষয়ে সমাজসেবা দপ্তরে গিয়ে কাউকে পাইনি। আবার দীর্ঘ ১৫-২০ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে আমাকে আরেক দিন আসতে হবে!’

গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের কোনো দপ্তরে সরকারি সেবা পাননি অনেক সেবাগ্রহীতা।

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় বন্ধ বিষয়ে জানতে চাইলে জুনিয়র অডিটর মো. রবিউল হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘আজ সোমবার উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ইউএনও স্যার ও উপজেলা চেয়ারম্যান স্যার সবাইকে নিয়ে বনভোজনে যাওয়ায় অফিস বন্ধ!’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফটিকছড়ির কৈয়াছড়া ব্র্যাক চা-বাগানের এক কর্মচারী জানান, ‘লক্ষ্মীছড়ির ইউএনও স্যার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে চা-বাগান ও রাবার ড্যামে পিকনিকে এসেছেন।’

জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেম্রাচাই চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লক্ষ্মীছড়ির ইউএনও মো. ইয়াছিন এখানে যোগদানের পর থেকে সরকারের নানামুখী ও জনবান্ধব উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তিনি নিজে আত্মীয়স্বজন ও বিরোধীদলীয় কিছু নেতার সঙ্গে সখ্য করে ঠিকাদারি কাজ করছেন। তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের (আনসার) আবাসিক ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হলেও সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেননি। গত ২৩ ডিসেম্বর তাঁর বদলির আদেশ হলেও না যাওয়ার জন্য ভাড়াটে লোকজন দিয়ে সম্প্রতি মানববন্ধন করিয়েছে ইউএনও, যা একজন সরকারি আমলার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত।’

এ প্রসঙ্গে জানতে ইউএনও মো. ইয়াছিনের সরকারি মোবাইলে ফোন একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি বারবার কল কেটে দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত